ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

কামারপট্টিতে ঈদের আঁচ, টুংটাং শব্দে মুখর সারাবেলা
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪, ১১:৩৫ এএম আপডেট: ১৪.০৬.২০২৪ ১১:৩৯ এএম  (ভিজিট : ৪২৩)
কুষ্টিয়ায় কুরবানি ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে টুংটাং শব্দে ব্যস্ত সময় পার করছেন কুষ্টিয়ার কামাররা। চলছে হাঁপরটানা, পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে কয়লা। কামার শিল্পীদের ব্যস্ততায় জানান দিচ্ছে কুরবানি ঈদের বার্তা। পশু কুরবানিতে হাতুড়ি দিয়ে লোহা পিটিয়ে ধারালো দা, বটি, চাপাতি ও ছুরি তৈরি করছেন তারা। তাই যেন দম ফেলারও সময় নেই কামারদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন তারা। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন।

কুষ্টিয়ার কামারপট্টিতে ৮ শতাধিক কামার পরিবার রয়েছে। কামারপট্টি এখন গেলেই শোনা যায় হাতুড়ি পেটানোর শব্দ। কেউ ভারী হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন আগুনরঙা লোহার খণ্ড। কেউ ভোঁতা হয়ে পড়া দা ও ছুরিতে শান দিচ্ছেন। কেউবা হাপর টানছেন। কয়লার আগুনে বাতাস দিচ্ছেন। 

কুষ্টিয়ায় বড়বাজার, রাজারহাট ও হরিশংকরপুর বিভিন্ন কামারের দোকান ঘুরে দেখা যায়, দা, ছুরি, চাকু ও বঁটির বেচাকেনা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি পিস বটি পাইকারি ২৫০ টাকা, খুচরা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, চাপাতি পাইকারি ৭০০, খুচরা ৮০০ টাকা, ছুরি সর্বনিম্ন ২০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে জবাই করার ছুরি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বিক্রেতা রাজ্জাক বলেন, আমি সবসময় কুষ্টিয়ার রাজারহাট থেকে মালামাল নিয়ে যাই। কারণ এখান থেকে মাল নিলে অন্য জায়গা থেকে কমদামে নেওয়া যায় এবং এরা সরঞ্জামগুলো ভালো করে তৈরি করে। তবে কামারপট্টির কারিগররা অভিযোগ করেন, তাদের পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি অনেক কম। সারাদিন আগুনের পাশে বসে থাকতে হয়। ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা শরীরে তৈরি হয়। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কুষ্টিয়ায় কমে যাচ্ছে কামার সম্প্রদায়। বাধ্য হয়ে পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করছে অনেকে। 

কুমারখালী উপজেলার কামাররা বলেন, সারা বছর আমাদের মোটামুটি বিক্রি হয়। তবে এই সময় বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি। উৎপাদন ও প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় লাভ আগের চেয়ে কম।

তিনি আরও জানান, কুষ্টিয়ার বড়বাজার, মিরপুর, খোকসা, কুমারখালী, দৌলতপুর ও ভেড়ামারার বিভিন্ন জায়গায় কামারদের জমজমাট ব্যবসা থাকলেও সদরের রাজারহাটের মতো কোথায়ও নেই।

কুষ্টিয়ার কয়েকজন কামার দিলিপ, প্রদীপ কর্মকার, চন্দন কর্মকার, রমেশ শিকদার ও মনোরঞ্জন কর্মকার জানান, কুরবানি ঈদে তারা প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের উপকরণ তৈরি করেন। এবারও এসব উপকরণের চাহিদা বেড়েছে। সারা বছর তারা যে আয় করেন, তার অর্ধেক আয় করেন এ সময়ে। কামার শিল্পের অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি হচ্ছে কয়লা। কিন্তু এই কয়লা এখন প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে কয়লা সংগ্রহ করতে হয়। বর্তমানে সেই তুলনায় কয়লার দামও অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লোহার দামও। এদিকে লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সে তুলনায় কামার শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। এছাড়া আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসব পণ্য তৈরির বেশ কিছু আবার প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ায় কামার সম্প্রদায় আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে। তাদের প্রত্যাশা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  ঈদের আঁচ কামারপাড়ায়   টুংটাং শব্দে মুখর   কুষ্টিয়া  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close