ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ, মহাসড়কে বসছে হাট
প্রকাশ: রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪, ৮:৩৩ পিএম  (ভিজিট : ৯৩৪)
দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলি উপজেলা সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার পূর্বে আলিহাট ইউনিয়নের সাদুড়িয়া বাজারে সরকারি হাটের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে পাকা দোকান ঘর নির্মাণ করছেন প্রভাবশালীরা। হাট ও বাজার কমিটির সভাপতি মো. রুহুল আমিন দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস পূর্বে অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এরপরও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এবং হাটের জায়গা সংকুলান হওয়ায় হিলি-বগুড়া মহাসড়কের দুই পাশে সপ্তাহে দুই দিন (শুক্রবার ও মঙ্গলবার) হাট বসছে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা করতেছে হাট কর্তৃপক্ষ, এলাকাবাসী ও দোকানিরা। অভিযুক্তরা বলছেন তাদের ক্রয়কৃত জমির উপরে তৈরি করেছেন দোকান ঘর। এদিকে প্রশাসন বলছেন, বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

গত শুক্রবার (৭ জুন) বিকেলে সাপ্তাহিক হাটের দিনে সরজমিনে গিয়ে হাট কমিটির সভাপতি, অভিযুক্তকারী, এলাকাবাসী ও দোকানিদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। 

সাদুড়িয়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা রোস্তম আলীসহ কয়েক জন বলেন, এই বাজারে সাপ্তাহিক হাট বসার জন্য আমাদের গ্রামের হায়তন আলী প্রথমে তিন শতক জায়গা হাটের নামে কবলা রেজিস্ট্রি করে দেন। এরপর প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে এই বাজারে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। সেই মোতাবেক গত ২০০৪ সালে হাটে দোকানিদের বসার জন্য সরকারি ভাবে সেট তৈরি হয়। সম্প্রতি সময়ে নতুন রেকর্ডে দেখা যায় হাটের জায়গা কম হওয়ায় সরকারি ভাবে ১৩ শতক জায়গা হাটের নামে রেকর্ড করা হয়েছে এবং সরকার অধিগ্রহণ করেছেন। কিন্তু এই গ্রামের মৃত শ্রী রুহীনি কান্ত সরকারের ছেলে (পল্লী চিকিৎসক) ডা. গৌড় চন্দ্র, ডা. পরিতোষ চন্দ্র, নিতাই চন্দ্র ও অশীম চন্দ্র চার ভাই ও জনৈক বিপুল চন্দ্র হাটের জায়গা দখল করে পাকা দোকান ঘর তৈরি করায় হাটের জায়গা সংকীর্ণ হয়েছে। বাধ্য হয়ে মহাসড়কের দুই পাশে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসছে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আমরা শঙ্কা করতেছি। যত দ্রুত সম্ভব হাটের জায়গায় তৈরি অবৈধ দোকান ঘর ভেঙে দিয়ে পূর্বের জায়গায় হাট বসাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি। 

হাট ও বাজার কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন জানান, হাটের সরকারি পেরিফেরি জায়গা কিছু অসাধু লোকজন অবৈধ ভাবে দখল করে পাকা দোকান ঘর তৈরি করায় হাটের জায়গা সংকুলান হয়। পরে হাটে আগত ও স্থায়ী দোকানদাররা হিলি-বগুড়া মহাসড়কের পাশে হাটের দিনে দোকান বসায়। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে এই সড়কের দুই পাশের সম্প্রসারণ কাজ শুরু হওয়ায় সংকীর্ণ জায়গায় হাট বসে আসছে। এতে যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা এর দায়ভার কে নিবে! তাই হাটের জায়গা পুন উদ্ধারের জন্য গত ২৩/০৪/২৪ তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমি এর নিকট অভিযোগ দাখিল করি। এতে কোন সুরাহা না হওয়ায় বর্তমানে ও মহাসড়কের দুই পার্শে সংকীর্ণ জায়গায় হাট বসছে। 

তিনি আরও অভিযোগ করেন, সম্প্রতি সময়ে সহকারী কমিশনার ভূমি নিজে লোকজন নিয়ে এসে হাটের জায়গা মেপে খুঁটি গাড়িয়ে দেয় এবং অবৈধ ভাবে তৈরি দোকান ঘরের সাটার অভিযুক্তদের হাতে খুলে নিয়ে যায়। আর বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে এসব ঘর ভেঙে দিয়ে হাটের জায়গা বাহির করা হবে। কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় ওই দোকান ঘরের চারটি সাটার লাগায়। খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার এসিল্যান্ড আবারও বাজারে আসেন এবং সাটার লাগানো দেখে চলে যায় কোন কিছুই বলেন নাই। এই রহস্যটা কি বুঝতে পারলাম না?

হাটে আগত মুদি দোকানদার আইনুল ইসলাম ও মাছ ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, হাটের জায়গা দখল করে দোকান ঘর তৈরি করায় আমরা রাস্তার পাশে বসেছি। আমরাসহ হাটে আগত ব্যক্তিরা সব সময় আতঙ্কে থাকি কখন কোন দুর্ঘটনা ঘটে। হাটের জায়গায় তৈরি ঘর ভেঙে দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব পূর্বের জায়গায় হাট বসানোর জোর দাবি জানাচ্ছি। 

হাট ইজারাদার নাঈমুর ইসলাম (লাল মিয়া) বলেন, আমি ২০২৩ সালে হাটটি ইজারা নেয়। হাট বুঝে নেওয়ার পরে দেখি হাটের জায়গা সংকীর্ণ। পরে জানতে পারি ইতিপূর্বে সাদুড়িয়া গ্রামের শ্রী রুহীনি কান্ত সরকারের ছেলে পরিতোষ, গৌর, নিতাই, অসীম চন্দ্র চার ভাই ও জনৈক বিপুল চন্দ্র সরকারি এই হাটের জায়গা দখল করে পাকা স্থায়ী দোকান ঘর নির্মাণ করছেন। এ কারণে হাটের জায়গা সংকীর্ণ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা রাস্তার পাশে বসছেন। তাই হাটের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য হাট কমিটির সভাপতির সাথে আলাপ করে তার মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমি এর নিকট লিখিত অভিযোগ করায়।

তিনি আরও বলেন, শনিবার ( ৮ জুন) আবারও ইউএনও ও এসিল্যান্ড বাজারে এসে ঘটনা স্থল সরেজমিনে তদন্ত করেছেন এবং অবৈধ ভাবে সরকারি জায়গায় তৈরি ঘরের ছবি ও ভিডিও করে নিয়ে গেছেন। আশাকরি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।  

অভিযোগ প্রসঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী গৌর চন্দ্র বলেন, তারা চার ভাই তাদের কবলা এবং রেকর্ড করা সম্পত্তিতে দোকান ঘর নির্মাণ করছেন। কে বা কাহারা হাট কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন ও হাটের ইজারাদার লাল মিয়াকে উসকানি দেওয়ায় তারা হাট উপরে নিয়ে গেছে। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে এরকম কোন কাগজ কোন অফিস থেকে পাইনি। তবে আমরা আমাদের জায়গা ফিরে পেতে আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। প্রতিপক্ষরা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন বলে দাবি তার। 

এবিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় জানান, হাটের জায়গায় দোকান ঘর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিপূর্বে আমি সহকারী কমিশনার ভূমিকে সরজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ কথা বলেছিলাম। গত ৮ জুন জেলা প্রশাসক শাকিল আহম্মদ স্যারের দিক নির্দেশনা মোতাবেক সরেজমিন তদন্ত করেছি। 

তিনি আরও বলেন, যত দ্রুত সম্ভব জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে কথা বলে এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আপনি বা আপনারা নিশ্চিত থাকুন সবাই ন্যায় বিচার পাবেন।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  হাটের জায়গা দখল   দোকান নির্মাণ   হিলি-দিনাজপুর  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close