ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

পণ্যবাহী গাড়িতে অবৈধ পণ্য পাচার
অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে সংকটে বুড়িমারী স্থলবন্দর
প্রকাশ: শনিবার, ৮ জুন, ২০২৪, ৭:০৪ পিএম  (ভিজিট : ৫৪০)
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী  স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর এটি। এ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পণ্যের গাড়িতে সম্প্রতি একের পর এক অবৈধভাবে আনা হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত কোটি কোটি টাকার পণ্য।

ভারত ও বাংলাদেশের অনন্ত ১০টি নিরাপত্তা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে ভারতীয় এসব পণ্য এনে রাতারাতি কোটিপতি হয়েছেন অনেকে। এতে জড়িত উভয় দেশের (ভারত-বাংলাদেশ) অসাধু কয়েকজন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও আমদানিকারক এবং রপ্তানিকারকের দৌরাত্ম্যে নানামুখী সংকটে পড়েছে বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশন ও বন্দর। বিপাকে পড়েছেন বৈধ পন্থায় আমদানি ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা। 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও ভুটান থেকে পাথর আমদানি করা হয় সর্বাধিক। খাদ্যশস্য ও বিভিন্ন প্রকার বীজও আমদানি করা হয়ে থাকে। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ গাড়িতে নানা পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করা হয়। ঋণপত্র (এলসি) অনুযায়ী এসব গাড়িতে আনা পণ্যের সঠিকতা যাচাই করা হয় অনুমানের উপর ভিত্তি করে। গুরুত্বপূর্ণ এ শুল্ক স্টেশনে ‘পণ্য স্ক্যানার’ নাই। এতে অসাধু ব্যবসায়ীরা পাথর ও অন্যান্য পণ্যের ভেতরে ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস, কসমেটিকস, গয়না, চিকিৎসা সামগ্রী পাচার করছে। 

ভারতের কলকাতার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অভিক অ্যান্ড সন্সের নিকট ১৮ মেট্রিক টন চায়না ক্লে পাউডার আনতে গত ১২ মার্চ ১৮৮১২৪০১০০০১ নম্বর অনুযায়ী এলসি দেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ। পণ্যগুলো ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর মাধ্যমে গত ৬ মে ভারতীয় ট্রাকে বুড়িমারীতে আমদানি করা হয়। অভিযোগ উঠেছে চ্যাংড়াবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সহায়তায় ক্লে পাউডারের ভেতর ভারতীয় গয়না, চিকিৎসা সামগ্রী এবং অন্যান্য পণ্য পাচার করা হয়। 

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিনেও পণ্য না পেয়ে পাটগ্রাম থানা ও গাজিপুরের টঙ্গী থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলার সূত্র ধরে, গাজিপুর ডিবি পুলিশের একটি দল আসামি বুড়িমারী ইউনিয়নের তুহিনুজ্জামান বাবু ও মনোয়ার হোসেনকে আটক করে এবং হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের দোয়ানী মোড় এলাকার একটি বাড়ি থেকে ২০ দিন পর ক্লে পাউডার উদ্ধার করে। 

এ সময় উদ্ধারকৃত পাউডারের ভেতর অবৈধভাবে থেকে আনা ১০ কার্টন সিটি গোল্ডের বিভিন্ন গহনা, ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, কেনুলার কার্টন ৩০টি ও অন্যান্য পণ্য বের হয়। এসব পণ্যের মূল্য প্রায় কোটি টাকা। একইভাবে গত ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ ও এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি পাথর বোঝাই ট্রাকে অবৈধভাবে আনা হয় কয়েক কোটি টাকার ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস ও কসমেটিকস সামগ্রী। অভিযোগ উঠেছে পণ্য পাচারে চ্যাংড়াবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ছাড়াও স্থল শুল্ক স্টেশনের কতিপয় অর্থলোভী কাস্টমস কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে। 

একাধিক কাস্টমস কর্মকর্তা জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিদিন বেশকিছু গাড়িতে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করা হয়। সকল গাড়ি খালি করে দেখা সম্ভব হয়না। ৬ মে আমদানি করা চায়না ক্লে পাউডারের ভারতীয় গাড়ি আমদানিকারকের প্রতিনিধি, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের উপস্থিতিতে যাচাই করা হয়। পণ্য সঠিক পেয়ে আমদানিকারকের প্রতিনিধি তুহিনুজ্জামান বাবুকে পণ্য গুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ওইদিনই বাবু পণ্য গুলো আমদানিকারকের ঢাকার ঠিকানায় বাংলাদেশি গাড়িযোগে পাঠায়। ২০ দিন পর উদ্ধারকৃত পণ্য গুলোতে অবৈধ পণ্য পাওয়ায় এটি ষড়যন্ত্র হতে পারে। 

একাধিক আমদানি-রপ্তানিকারক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দাবি করেন, ভারত-বাংলাদেশের একটি কুচক্রিমহল/কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ব্যবসায়ী প্রতিহিংসায় নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। এতে শত শত আমদানি-রপ্তানিকারকেরা শঙ্কিত।      

বুড়িমারী স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুজ্জামান সায়েদ বলেন, একটি চক্র পাথর আমদানির নামে ভারত থেকে শাড়ি ও থ্রিপিস কাপড়, সুগন্ধি ক্যামিক্যাল, কসমেটিকস, চিকিৎসা সামগ্রীসহ নানা পণ্য অবৈধভাবে নিয়ে আসছে। এতে এ স্থলবন্দরের প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।  

এ ব্যাপারে বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের (কাস্টমস) সহকারী কমিশনার (এসি) নাজমুল হাসান বলেন, আমাদের কাস্টমসে দায়িত্বরত সবাই কয়েকধাপে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির গাড়ি সমূহ চেক করে থাকি। কোনো গাড়ি সন্দেহ হলে খালি করে যাচাই করা হয়। এভাবে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি গাড়ি পুরো খালি করে দেখা হয়। কোনো আমদানিকারক বা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অবৈধভাবে কোনো মালামাল আনলে ও ধরা পড়লে কাস্টমস আইনে তাদের লাইসেন্স বাতিল করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গাড়িসহ পণ্য স্ক্যান করতে ‘স্ক্যানার’ বসাতে রংপুর কমিশনারের মাধ্যমে এনবিআরে চিঠি ও প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ প্রযুক্তি এখানে বসানো হলে অনেকে অবৈধভাবে পণ্য আনার সাহস পাবে না। কাজের গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা বাড়বে।

সময়ের আলো/আরআই 


আরও সংবাদ   বিষয়:  অসাধু ব্যবসায়ী   বুড়িমারী স্থলবন্দর   পাটগ্রাম-লালমনিরহাট  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close