ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বন্যায় সিলেটে বিধ্বস্ত ৩০০ কিলোমিটার সড়ক, ক্ষতি শতকোটি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০২৪, ৬:২১ পিএম  (ভিজিট : ৭১৬)
সিলেটে অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা কাটছে না। মঙ্গলবার (৪ জুন) সকালে আরেক দফা অতিবৃষ্টিতে পানিবন্দি মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। সোমবার রাত থেকে পানি কমতে শুরু করলেও মঙ্গলবারের অতিবৃষ্টিতে ফের ডুবল সিলেট নগরী। এদিকে জেলার বন্যা কবলিত ৭ উপজেলায় ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সুরমা, কুশিয়ারা নদীসহ সকল নদীর পানি গত রাতের তুলনায় ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার করে কমলেও হাওরে এর প্রভাব পড়েনি। বন্যার পানিতে নেমে যাওয়ায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাভাবিক হয়েছে চিকিৎসা সেবা।

অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় সিলেট নগরীর অন্তত ২৮টি ওয়ার্ডের ১০ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়েছেন। সিলেট নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানি ছড়িয়ে পড়লেও কমছে জেলার বন্যা কবলিত ৭ উপজেলার নদীর পানি। উজানে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীসহ সকল নদীর পানি কমছে। কানাইঘাট, জকিগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জের তিন পয়েন্টে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইয়ে। পানি কমার হার অত্যন্ত ধীরগতির হওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না উপজেলাগুলোতে। হাওরে পানির উচ্চতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করায় ভেসে ওঠছে গ্রামীণ সড়কগুলো। তবে এখনো বেশিরভাগ সড়কে পানি থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণই রয়ে গেছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে অতি বর্ষণে নগরীর ২৮টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত হয়েছেন ১০ হাজারের বেশি পরিবার। সিলেট নগরীর উপশহর, তেররতন, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মেন্দিবাগ, কুশিঘাট, মিরাবাজার, বাগবাড়ি, শামীমাবাদসহ নদীতীরবর্তী এলাকার পানি পুরোপুরিভাবে নামছে না। এসকল ওয়ার্ডের বাসাবাড়িতে পানি কিছুটা নামলেও মঙ্গলবার সকালের বৃষ্টিতে ফের হাটু পানিতে ডুবে গোটা এলাকা। দুদিন ধরে পানিবন্দি মানুষেরা ঘর থেকে একদিকে পানি নিষ্কাসন করছেন, অন্যদিকে ফের পানি ঢুকছে। কষ্টে দিন কাটছে বন্যার্তদের। এছাড়া নগরীর প্রধান সড়কগুলো থেকে পানি পুরোপুরি না নামায় এখনো ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরান জানান, সিলেট নগরীর প্লাবিত এলাকাগুলোতে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করে পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে জরুরি সেবায় ২৪ ঘণ্টা চালু কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এ সকল আশ্রয়কেন্দ্রে অন্তত ৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পাশাপাশি এছাড়াও বিভিন্ন কাউন্সিলর তাদের নিজ বাসভবনে পানিবন্দি মানুষকে আশ্রয় দিচ্ছেন।

সিলেট নগরীর প্লাবিত ২৮ ওয়ার্ডের বন্যা কবলিতদের শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার, স্যালাইন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে নগরভবন কর্তৃপক্ষ।

গোয়াইনঘাটে ৩১২ কিলোমিটার সড়ক বিধ্বস্ত 

আকস্মিক বন্যায় গত ২৯ মে থেকে প্লাবিত সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা। কয়েকদিন ধরে উপজেলার ৭০ ভাগের বেশি এলাকা ছিল জলমগ্ন। তলিয়ে গিয়েছে উপজেলার ২১৪টি গ্রামের কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট। পাহাড়ি ঢলের তোড়ে প্লাবিত অঞ্চলের প্রায় ৩১২ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়েছে। বন্যায় ফসলহানি, ঘরবাড়ি নষ্ট হওয়া, জানমালের পর যোগাযোগ ব্যবস্থার এই দুর্ভোগ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন গোয়াইনঘাটের মানুষ।

কোথাও পাকা রাস্তা দেবে গেছে, কোথাও বা রাস্তা থেকে পিচ উঠে গেছে। আবার অনেক জায়গায় সড়কের অর্ধেকই ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া খানাখন্দ তৈরি হয়ে বিভিন্ন সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে অস্থায়ীভাবে বাঁশ, কাঠ ও বালুর বস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন।

উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গোয়াইনঘাটের ১৩টি ইউনিয়নের কাঁচা-পাকা মিলিয়ে প্রায় ৩১২ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে কাঁচা ২২৪ কিলোমিটার ও পাকা রাস্তা প্রায় ৮৮ কিলোমিটার। সবচেয়ে
বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্ব জাফলং, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলং ও গোয়াইনঘাট সদর ইউনিয়নের রাস্তাঘাট। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী এবং পিআইওকে অনতিবিলম্বে নদী ও খালের পার্শ্ববর্তী গুরুত্বপূর্ণ স্থানের বাঁধ, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট ও ব্রিজ মেরামত ও সংস্কার করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটের তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পেলে ভেঙে যাওয়া সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো সংস্কার করা হবে।

এদিকে নদনদীর পানি অত্যন্ত ধীরগতিতে কমছে, ফলে হাওরেও পানির উচ্চতা কমছে না। ফলে জেলার ৭ উপজেলায় পানিবন্দি ও বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের ফেরার প্রতীক্ষা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। গত ২৯ মে থেকে সিলেট জেলায় ৭ উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা 

সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা মোকাবেলায় সিলেটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে সিলেটের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় সিলেট জেলার সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও বন্যা বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, সিলেট অঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢলে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বন্যার আশংকা রয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় তিনি সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্তরিকতার সাথে
কাজ করার আহবান জানান।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সিলেট সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানরা সভায় জুম অ্যাপের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিলেন।

সফর সংক্ষিপ্ত করে ফিরছেন মেয়র 

সিলেটের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জনগণের পাশে থাকতে যুক্তরাজ্য সফর সংক্ষিপ্ত করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। আগামী বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সকালে সিলেট পৌঁছাবেন তিনি। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জনগণের পাশে থাকতে তিনি তার পারিবারিক সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বন্যা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর থেকেই মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী লন্ডন থেকেই সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সিলেট সিটি করপোরেশনের সব কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। গত ২৫ মে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাজ্যে যাত্রা করেন।

সময়ের আলো/আরআই




আরও সংবাদ   বিষয়:  সিলেট বন্যা পরিস্থিতি   বিধ্বস্ত সড়ক   ক্ষতি শতকোটি   পানিবন্দি মানুষ  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close