ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ধান বিক্রিতে মিলছে না সরকার নির্ধারিত দাম
প্রকাশ: সোমবার, ৩ জুন, ২০২৪, ২:০১ এএম  (ভিজিট : ৪৪৮)
‘শস্য ভান্ডার’ খ্যাত উত্তরের বৃহৎ জেলা নওগাঁ। গত প্রায় এক মাস থেকে বোরো ধান কাটা ও মাড়াই চলছে জেলাজুড়ে। স্থানীয় হাট-বাজারে ধান বিক্রিও শুরু করে দিয়েছেন কৃষকরা। কিন্তু ধান ওঠার পর থেকেই দাম ওঠানামা করছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে ধান। বিশেষ করে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে হাট-বাজারে অনেক কম দামে মোটা ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে ভীষণ হতাশ স্থানীয় কৃষকরা। তারা বলছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে খোলাবাজারে অনেক কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে তাদের। অথচ ব্যবসায়ীরা ধান বিক্রি করে ঠিকই লাভবান হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।

এ বিষয়ে নওগাঁ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, কৃষকরা হাট-বাজারে যে ধান নিয়ে আসেন সেগুলো কিছুটা ভেজা, চিটা এবং ও ধুলা-বালু যুক্ত। অথচ সরকারি গুদামে শুকনো ও ধুলা-বালু মুক্ত ধান দিতে হয়। এ ছাড়া ভেজা ধান কেনার পর শুকানো হলে ওজনে কমে যায়। আবার সংরক্ষণ করাও সম্ভব হয় না। সরকার প্রতি মণ মোটা ধানের দাম ১ হাজার ২৮০ টাকা ঘোষণা করেছে। আমরা বাজার থেকে ধান কেনার পর দেখা যায়, সরকারি মূল্যের কাছাকাছি চলে যায়। তাই বাধ্য হয়ে কম দামে কিনতে হয়। সরকারি মূল্যে কেনা হলে লোকসান গুনতে হবে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ বছর জেলায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যেখানে প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৪৫ টন হিসেবে ফলন পাওয়া যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর রহমান বলেন, জেলায় ১৯ হাজার ২১৮ টন ধান, ৪৭ হাজার ৮১৫ টন সিদ্ধ চাল এবং ৪ হাজার ৬৫২ টন আতপ চালের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারলে কৃষকরা লাভবান হবেন। ধান বিক্রি করতে গিয়ে কৃষকরা যাতে কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হন তা খতিয়ে দেখা হবে।

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, অনেক শ্রমে-ঘামে ধানের আবাদ করেছেন তারা। কিন্তু হাট-বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে ন্যায্য দাম না পেয়ে তাদের মুখের হাসি মলিন হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে মোটা জাতের হাইব্রিড ধান ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মণ খাটো-১০ জাত ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়। এ ছাড়া সরু বা চিকন ব্রি-৯০ জাতের ধান ১২৩০-১৩০০ টাকা, কাটারিভোগ ১ হাজার ২০০ টাকা ও সুভলতা ১ হাজার ১০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকার প্রতি মণ মোটা জাতের ধানের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ১ হাজার ২৮০ টাকা। এই হিসেবে প্রতি মণ মোটা ধান ২০০-২৫০ টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। খোলাবাজারে সরু বা চিকন জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে মোটা জাতের ধানের মূল্যে। প্রতি বিঘা জমিতে ধান রোপণ থেকে শুরু করে কাটা ও মাড়াই পর্যন্ত খরচ হয়েছে অন্তত ১৪-১৫ হাজার টাকা।
বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ২২-২৪ মণ। মৌসুমের শুরুতেই ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা। এ বছর মৌসুমের শুরু থেকেই তীব্র তাপপ্রবাহ ও খরার কবলে দিশাহারা কৃষক। প্রচণ্ড গরমে রোদে পুড়ে ফসল ফলিয়েছেন তারা। জমিতে ঠিকমতো সেচ দেওয়াও সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া পোকার আক্রমণও হয়েছে। সবমিলিয়ে বিঘাপ্রতি ৩-৪ মণ ফলন কম হয়েছে। কিন্তু বাজারে বিক্রি করতে এসে কম দাম পেতে হচ্ছে।

সরেজমিন কথা হয় মহাদেবপুর উপজেলার তেরমাইল এলাকার কৃষক রাইজুল ইসলামের সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, এ বছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে ধান উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। অন্যদিকে ধানের ফলন হয়েছে কম। সরু জাতের ব্রি-৯০ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে। অথচ সরকার মোটা ধানের দামই বেঁধে দিয়েছে ১ হাজার ২৮০ টাকা। সরু জাতের ধান ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হলে কৃষকদের জন্য সুবিধা হবে। কিন্তু আমাদের পক্ষে এ দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। একই উপজেলার গাহলি গ্রামের কৃষক প্রেম আনন্দ বলেন, আমরা হাটে ধান বিক্রি করতে এসে ন্যায্য দাম পাচ্ছি না। সরকারি দামের চেয়ে মোটা ধান অনেক কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষকদের সুবিধার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করা প্রয়োজন।

ধান ব্যবসায়ী কুদ্দুস হোসেন বলেন, বিগত বছরে আমরা হাটে ধান কিছুটা বেশি কিনে মজুদ করতে পারতাম। এ জন্য দাম কিছুটা বেশি ছিল। তবে এ বছর বেশি করে ধান কেনা সম্ভব হচ্ছে না। যে পরিমাণ ধান কেনা হচ্ছে তার সবই চাল উৎপাদনের জন্য চালকলে পাঠানো হচ্ছে। মজুদবিরোধী অভিযানের ভয়ে বেশি করে ধান কিনে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। যদি মজুদ করা সম্ভব হয় তা হলে ধানের দাম প্রতি মণে ১০০-১৫০ টাকা বেড়ে যাবে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close