ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

মেয়াদ বাড়ে তবু শেষ হয় না কাজ
প্রকাশ: রবিবার, ২ জুন, ২০২৪, ২:২৫ এএম  (ভিজিট : ৪১০)
সময় ও ব্যয় বাড়লেও শেষই হচ্ছে না চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ও শাহজাহানপুর এলাকার পদ্মার তীর রক্ষা প্রকল্পের নির্মাণকাজ। চার বছর সময় পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত শেষ হয়েছে ৬০ ভাগ কাজ। বাকি ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করতে বর্ধিত সময়ের আর মাত্র এক মাস বাকি রয়েছে। কিন্তু এত অল্প সময়ে কাজ তো শেষ হবেই না, বরং লেগে যাবে আরও প্রায় এক বছর। এমনটি জানিয়েছে খোদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

মেয়াদ বাড়লেও প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, আগের ১৪টি প্যাকেজের কাজ পুনরাকৃতিকরণ ও নতুন ২৯টি প্যাকেজের মধ্যে ১০টি প্যাকেজের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আরও ৩৪টি প্যাকেজের কাজ চলমান রয়েছে। পদ্মার ভাঙন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ও শাহজাহানপুর এলাকা রক্ষা প্রকল্পের কাজ এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বর্ধিত মেয়াদের সময় শেষ হবে চলতি জুন মাসে। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হবে।

নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান আরও বলেন, আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা সময় বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায় ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে। অর্থ ছাড়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৩৫৯ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে।

চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান উমর আলী বলেন, ২০২১ সালে কাজ শুরু হয়ে চার বছর হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাজের শেষ নেই। দুবার সময় বাড়িয়েও কাজের অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। কাজের যত দেরি হচ্ছে ততই আমরা পদ্মা বাঁধ এলাকার জনগণ আতঙ্কিত বোধ করছি। ক্ষতির শঙ্কা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সামনেই বর্ষা মৌসুম। এ বর্ষায় ফের নদী ভাঙলে দায়-দায়িত্ব কে নেবে? এতে সরকারের ব্যয় বাড়ছে, সময়ও লাগছে। কাজের শেষ দেখতে পাচ্ছি না। তিনি আরও বলেন, পদ্মা পারের মানুষ বহু জায়গা-জমি হারিয়ে ফেলেছে। আর আমরা হারাতে চাই না। আমরা চাই বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দ্রুত শেষ হোক। কাজ শেষ হলে দুই ইউনিয়নের লাখ লাখ মানুষের জায়গা-জমি ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাবে।

২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে এ মেগা প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ৩ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটির অনুমোদন দেন। প্রকল্পের টেন্ডার হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের জুনে। কিন্তু প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ বাড়ানো হয় এক বছর। কিন্তু তারপরও শেষ হয়নি কাজ। এখন চলছে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পদ্মার ভাঙন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ও শাহজাহানপুর এলাকা রক্ষায় মেগা প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের জুনে। পরে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। সংশোধিত প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়। শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৬৬ কোটি টাকা। সংশোধনের পর প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬০৩ কোটি টাকায়। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন হলে পদ্মা পারের বহু মানুষ এর সুফল পাবেন। বাঁচবে ঘরবাড়ি। রক্ষা পাবে ফল ও ফসলি জমি।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এসব প্রকল্পের নির্মাণকাজ বাস্তবায়নে অনেক সময় লাগে। বর্ষা মৌসুমে নদীর দুই কুল উপচে পড়ে পানিতে। সে জন্য বছরের ৩-৪ মাস কাজ বন্ধ রাখতে হয়। এ ছাড়া প্রকল্পের অর্থ ছাড়েও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি আর সময়মতো অর্থ ছাড় না পাওয়ায় ঠিকাদারদের সদিচ্ছা থাকার পরও তারা কাজ করতে পারছে না। তারপরও দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পের অধীনে ৬ দশমিক ১০ কিলোমিটার নতুন নদী তীর সংরক্ষণ কাজ ২৯টি প্যাকেজে, ৪ কিলোমিটার আগের বাস্তবায়ন হওয়া নদী তীর রক্ষা কাজের পুনর্বাসনের কাজ চারটি প্যাকেজে এবং ৮ কিলোমিটার আগের নির্মিত বাঁধের পুনরাকৃতিকরণ কাজ একটি প্যাকেজে বাস্তবায়নের কাজ চলছে। প্রকল্পটি প্রথমবার সংশোধন হয় ২০২৩ সালের মে মাসে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু বর্ধিত সময়ে কাজ শেষ হয়েছে ৬০ শতাংশ।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাঙনকবলিত চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন এলাকায় ১৭টি প্যাকেজ এবং শাহজাহানপুর ইউনিয়নে ১২টি প্যাকেজের আওতায় ৬ দশমিক ১০ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে। চরবাগডাঙ্গা এলাকার ১৭টি প্যাকেজের মধ্যে ৭টি এবং শাহজাহানপুর এলাকার ১২টি প্যাকেজের মধ্যে তিনটি সম্পন্ন হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল করিম বলেন, বাঁধ নির্মাণ করা হলে দুটি ইউনিয়ন ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে। অথচ কাজ চলছে ধীরগতিতে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close