ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বাজেট তৈরিতে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা কম
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ মে, ২০২৪, ৭:১৪ এএম  (ভিজিট : ৫২৬)
গণতান্ত্রিক দেশে সংসদের প্রধান কাজ আইন প্রণয়ন এবং বাজেট আলোচনা ও অনুমোদন। অথচ বাংলাদেশে জাতীয় বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জাতীয় সংসদ সদস্যদের সম্পৃক্ততা খুবই কম। এমনকি বাজেট পাসের আগে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনাও হয় না। প্রণয়নে তেমন একটা ভূমিকা না থাকলেও সংসদে কেবলমাত্র ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটে সম্পৃক্ত থেকে বাজেট পাসে ভূমিকা রাখেন এমপিরা। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে এমপিদের মধ্যে। তারা বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে এমপিদের আরও কার্যকর সম্পৃক্ততা চান।

সরকারি ও বিরোধী দলের একাধিক এমপি জানান, বাজেট প্রণয়নে দীর্ঘদিন ধরেই এমপিরা তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না। অথচ তাদের প্রধান দুটি কাজই হলো আইন ও বাজেট প্রণয়ন করা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নেও সম্পৃক্ত করা হয় না এমপিদের। উন্নয়ন পরিকল্পনা হয় মন্ত্রণালয়ভিত্তিক। আমলারা প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়নের পর এটি সংসদে উত্থাপিত হলে এ নিয়ে মাসব্যাপী নিয়ম রক্ষার আলোচনা হলেও এমপিদের কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় না। তাছাড়া সংসদে আলোচনার সুযোগ সব এমপি পান না। এর ফলে তৃণমূলের চিন্তা-ভাবনা ও চাহিদা তেমন একটা প্রতিফলিত হয় না বাজেটে। বাজেট প্রণয়নের আগে কয়েক বছর সংসদীয় কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী বৈঠক করলেও বিগত দুই বছর তা হয়নি। অবশ্য এ বছর সংসদীয় কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মতামত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। 

সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাজেটে রাজস্ব বিষয়ে পরিবর্তন ও বরাদ্দসহ অর্থবিল সংসদে পাস করতে হয়। রাজস্ব খাতে পরিবর্তনের বিষয়ে এমপিদের সঙ্গে তেমন কোনো আলোচনা করে না রাজস্ব বোর্ড। অর্থবিল পাসের সময় কেবল ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলা ছাড়া আর কোনো ভূমিকা থাকে না এমপিদের। প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপনের দিন সমালোচনা বা বাধা দেওয়ার অধিকার এমপিদের থাকলেও সাধারণত এটা কেউই করেন না। 

এটি এখন রেওয়াজ হয়ে গেছে। অষ্টম জাতীয় সংসদে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি সংসদে বাজেট উত্থাপনের পর তা কমিটিতে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করার সুপারিশ করলেও সে সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। 

অন্যদিকে প্রতি বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নের আগে এমপি কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও প্রাক-বাজেট আলোচনা হয় না। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের চাহিদাপত্র চাওয়া হয়। পরে তা সমন্বয় কমিটি এডিপির সম্ভাব্য সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ ব্যয় হিসাব করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বাধীন সম্পদ কমিটিতে উত্থাপন করে। সম্পদ কমিটির অনুমোদনের পর তা জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমপিদের দায়িত্ব আইন প্রণয়ন হলেও দেশের জনগণ তাদের কাছে এলাকার উন্নয়নও আশা করেন। এসব কারণে বাজেট আমলানির্ভর হয়ে গেছে বলে দাবি এমপিদের।

জাতীয় বাজেট প্রণয়নে তাদের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই জানিয়ে একাধিক এমপি বলেন, বাজেটের বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিপরিষদ। আমাদের কোনো কনট্রিবিউশন থাকে না। বাজেট নিয়ে আমরা যতই চিৎকার করি না কেন, এর কোনো গুরুত্ব নেই। যা করার অর্থমন্ত্রী ও আমলারাই করেন। তারা জনপ্রতিনিধি হলেও বাজেট প্রণয়নে তাদের ভূমিকা বা সম্পৃক্ততা না থাকাটা দুঃখজনক।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেছেন, বাজেট প্রণয়নে সংসদ সদস্যদের কোনো ভূমিকা থাকে না। সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম আবুল মাল আবদুল মুহিত তার মেয়াদের শুরুর দিকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে প্রাক-বাজেট নিয়ে কথা বলতেন। এখন সেটাও ঠিকমতো করা হয় না। এখন বাজেট উপস্থাপনের আগের দিন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ জানেন না। এ জন্য সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী আর পছন্দের নেতার গুণগান গেয়ে নিজের এলাকার পুল, সড়কের কথা বলে সময় পার করেন। তারা বাজেটে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না।

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু বলেছেন, প্রত্যেক অর্থবছর জাতীয় বাজেট প্রণয়ন থেকে শুরু করে বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপ কতটা দক্ষ ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হলো তার ওপর জনগণের জীবনমান ও তাদের অর্থনৈতিক বিকাশ নির্ভর করে। তাই জাতীয় বাজেট প্রক্রিয়ায় জনপ্রতিনিধিসহ সব পর্যায়ের নাগরিকদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। আর বাজেটকে অংশগ্রহণমূলক করার কাজে নাগরিক সমাজকেই জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি সংসদীয় কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে সভাপতিরা তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। 

তিনি বলেন, বাজেট প্রণয়নে এমপিদের সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলেও বাজেট আলোচনায় তারা তাদের মতামত সংসদে তুলে ধরার সুযোগ পান। 

বাজেট প্রণয়নে এমপিদের ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, এবারও সংসদীয় কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে বাজেট নিয়ে বৈঠক করে তাদের মতামত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে বাজেট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 

প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর এমপিদের আলোচনারও সুযোগ আছে। বাজেট সংসদে উত্থাপিত হওয়ার পর সাধারণ আলোচনায় এমপিরা তাদের মতামত দিতে পারেন।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close