প্রকাশ: বুধবার, ২৯ মে, ২০২৪, ৬:৩২ পিএম (ভিজিট : ৪২৬)
সারা দেশেই জ্যৈষ্ঠ মাস মধু মাস নামে পরিচিত। এই মধু মাসে মেহেরপুরের বিভিন্ন বাজারে আম, লিচু, জাম ও কাঁঠালের মতো বেশ সহজলভ্য তালের শাঁস। এই ফলটির শাঁসের দেখা মেলে শুধুই গরমে। প্রতিবছরই বাজারগুলোতে মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে তাল কিনে বাজারে বিক্রি করে থাকে। প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে বেচা-কেনা। এমন কদর বাড়ায় লাভবান হচ্ছে ক্ষুদ্র তাল বিক্রেতারা। খেতে যেমন সুস্বাদু, স্বাস্থ্যের জন্য তেমনই উপকারী। ফলটি গরমে শরীর ও পেট ঠাণ্ডা রাখে, এছাড়াও শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় তালের কোন নির্দিষ্ট বাগান নেই। রাস্তার পাশে, ফসলি জমির আইলে অনেক তাল গাছ রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গাছের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তবে এগুলোর মধ্যে সব গাছে ফল হয় না। তবে ৭ হাজার মত গাছে তাল হয়।
শ্যামপুর গ্রামের তাল ব্যবসায়ী মহিবুল ইসলাম জানান, তিনি সারা বছর ইট ভাটায় কাজ করেন। এ মৌসুমে মেহেরপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তাল কেটে শাঁস বিক্রি করেন। এবছর বিভিন্ন গ্রামের ১২০ টি গাছ কেনা আছে। উপজেলায় ঘুরে ঘুরে তাল গাছ মালিকদের কাছ থেকে এসব তাল সংগ্রহ করা হয়। গাছ দেখে একটি গাছে কতটি তাল রয়েছে তা অনুমান করে মূল্য নির্ধারণ করে গাছ কেনেন। গড়ে প্রতিটি গাছ থেকে ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায় কেনা হয়। তারপর তা কেটে হলি হিসেবে বিক্রি করেন। গাংনী হাসপাতাল বাজারের তাল শাঁস বিক্রেতা শিশির পাড়া গ্রামের ফল বিক্রেতা হিরমত আলী বলেন, সারা বছরই সিজনের ফল বিক্রি করি। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরু থেকে তাল শাঁসের ব্যবসা শুরু করি। গত বছর ১২ টাকা হালি বিক্রয় করলেও এবছর ২০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি হলেও এবছরেও চাহিদা খুব বেশি। ছোট বড় সকলেরই বেশ পছন্দের। তাই এখন দুজন মিলে কাটতে কাটতেই তা শেষ হয়ে যাচ্ছে। একই কথা জানালেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সামনের ব্যবসায়ী লিটন আলী ও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে তাল শাঁস বিক্রেতা মহিবুল ইসলাম।
মুক্তিযোদ্ধা আহাম্মদ আলী টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের প্রভাষক এসএম রফিকুল আলম বকুল জানান, গ্রীষ্মকালের অন্যতম একটি রসালো সুস্বাদু ফল হচ্ছে তালের শাঁস। এটি খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার হিসেবে পরিচিত। ছোটকালে ১ টাকায় এক হালি তাল শাঁস খেতাম। এখন অনেক দাম তবুও ছেলে-মেয়ের জন্য নিয়মিত কিনে নিয়ে যায়। তালের শাঁস খেতে অনেকটা নারকেলের মতই। নরম ও সুস্বাদু হওয়ায় পরিবারের সকলেই তাল শাঁস খেতে খুবই ভালোবাসে। কেবল খেতেই সুস্বাদু নয়, এর রয়েছে পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা।
ক্রেতা কৌশিক বাপ্পি জানান, বাজারের সব কিছুতেই প্রায় কম-বেশি বিষের ব্যবহার হয়। একমাত্র তাল শাঁসই বিষমুক্ত ফল। কচি তালের নরম রসালো শাঁস খেতে সুস্বাদু। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ির সদস্যদের জন্য কিনে নিয়ে যায়। মাসহ পরিবারের সকলেই খেতে ভালোবাসে।
তালের উপকারিতা সম্পর্কে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আব্দুল আল মারুফ বলেন, তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ মানুষের দেহের পানি শূন্যতা দূর করে। এ ফলে মিনারেলস, আয়োডিন, জিংক, পটাশিয়াম ও ফসফরাস থাকে। বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর তালের শাঁস নানা রোগের দাওয়াই হিসেবে কাজ করে।
সময়ের আলো/আরআই