ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৪ মে, ২০২৪, ৩:০৩ এএম  (ভিজিট : ৯৯৪)
প্রথম কাব্যের দ্বিতীয় খণ্ড নামেই বের হওয়ার কথা ছিল। হয়নি। নতুন নামেই প্রকাশিত হয় বইটি। বিজ্ঞাপনে যেসব কবিতা ও গান দেওয়ার কথা ছিল, তার কিছু বাদ দিতে হয়েছিল। তৎকালীন আইনের রোষদৃষ্টি এড়ানোর জন্যে। কিন্তু এড়ানো যায়নি ‘আইন-রূপ আয়ান ঘোষের’ দৃষ্টি ঠিকই পড়েছিল বইয়ের ওপর। 

সময় ১৯২৪ সাল। আজ থেকে একশ বছর আগে বইটি প্রকাশিত হয়। সেই বছরই নিষিদ্ধ হয়। বলছি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিষের বাঁশী’ কাব্যের কথা। কাজী নজরুল ইসলাম ঝড়ের বেগে এসে প্রবেশ করেছিলেন বাংলা সাহিত্যে। তার প্রকাশিত লেখা ঝড় তোলে বাংলা সাহিত্যে। লেখক জীবন শুরুর দিকেই তিনি যে পরিমাণ কবিতা রচনা করেন তা ভাব, বিষয়, ছন্দে ছিল ব্যতিক্রম। বই প্রকাশের আগেই নজরুল তৎকালীন সুধী সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। ‘অগ্নিবীণা’ (১৯২২) প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই নজরুল বাংলা সাহিত্যমন্দিরে নিজের অক্ষয় বিগ্রহ স্থাপন করে ফেলেন। 

লেখালেখি, পত্রিকা সম্পাদনা, কারাবন্দি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক নজরুলকে বই উৎসর্গ করা নিঃসন্দেহে একজন তরুণ কবির জীবনে এসব পরম প্রাপ্তি। ১৯২৪ সালে কাজী নজরুল ইসলাম হুগলীতে থাকার সময় আগস্ট মাসে ‘বিষের বাঁশী’ এবং ‘ভাঙার গান’ প্রকাশিত হয়। দুটিই নজরুলের বিখ্যাত কাব্য। 

শুধু তা-ই নয়, প্রকাশের বছরই বই দুটি নিষিদ্ধ হয়। ‘বিষের বাঁশী’ বইটি কবি নিজেই প্রকাশ করেন। নামপৃষ্ঠায় এর মুদ্রণসংখ্যা ২২০০ কপি বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। 

আরও লেখা ছিল ‘গ্রন্থাকার কর্তৃক সর্ব্বস্বত্ব সংরক্ষিত’। ‘বিষের বাঁশী’ প্রকাশের কৈফিয়তস্বরূপ নজরুল লিখেছিলেন : ‘অগ্নিবীণা দ্বিতীয় খণ্ড নাম দিয়ে তাতে যেসব কবিতা ও গান দেবো বলে এতকাল ধরে বিজ্ঞাপন দিচ্ছিলাম, সেসব কবিতা ও গান দিয়ে এই ‘বিষের বাঁশী’ প্রকাশ করলাম। নানা কারণে ‘অগ্নিবীণা’ দ্বিতীয় খণ্ড নাম বদলে দিতে বাধ্য হলাম। কারণ আইন-রূপ আয়ান ঘোষ যতক্ষণ তার বাঁশ উঁচিয়ে আছে, ততক্ষণ বাঁশীতে তথাকথিত ‘বিদ্রোহ’ রাধার নাম না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।’

কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। বাঁশির প্রতিপক্ষ হিসেবে ঠিকই বাঁশ নেমে এসেছিল। রুদ্ধ করেছিল সুর। যদিও ‘বিষের বাঁশী’র বিরুদ্ধে ইংরেজ সরকারের প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এক বাঙালি বাবু। তার নাম অক্ষয়কুমার দত্তগুপ্ত। 

ছিলেন তৎকালীন বেঙ্গল লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান। ইংরেজ সরকারের প্রতি নিজের আনুগত্য প্রকাশ করে চিঠিটি লেখেন ১৯২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। সেখানে তিনি জানান, নজরুলের বিপ্লবাত্মক কবিতা ইংরেজ শাসনের জন্যে বিপজ্জনক। এজন্যে যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একটি জিনিস লক্ষণীয়, ঘরের শত্রু বিভীষণ সেই পৌরাণিক কাল থেকে শুরু করে আজ অবধি ক্ষতি করে যাচ্ছে বাঙালির। সিঁধ কেটে যাচ্ছে ঘরের। সিরাজ-উদ-দৌলার কথা বলি, মাস্টারদা সূর্য সেনের কথা বলি আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের নামই স্মরণ করি, সবখানে এই মীর জাফরেরাই বড় ক্ষতি করে গেছে আমাদের। 

লাইব্রেরিয়ান বাবু অন্যকিছুতে তার নাম সার্থক করতে না পারলেও বেইমানির জন্যে ঠিকই তার নাম অক্ষয় হয়ে রইল। যদিও নজরুলের প্রথম নিষিদ্ধ বই ‘যুগবাণী’ প্রবন্ধগ্রন্থ। ১৯২৪ সালে ‘বিষের বাঁশী’, ‘ভাঙার গান’ দুটিই একসঙ্গে নিষিদ্ধ হয়। এরপর ‘প্রলয়শিখা’ এবং ‘চন্দ্রবিন্দু’ বইয়ের ওপরও নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে আসে। ‘বিষের বাঁশী’ প্রসঙ্গে আসি। বইটি তিনি মিসেস এম. রহমান সাহেবাকে উৎসর্গ করেন। উৎসর্গপত্রে তাকে নিবেদন করা একটি কবিতা রয়েছে। 

এছাড়াও বইতে মোট সাতাশটি কবিতা ও গান রয়েছে। বইয়ের বেশিরভাগ কবিতা-গানই আগে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ‘বিষের বাঁশী’র বইয়ের কবিতার বিষয় হলো স্বদেশপ্রেম, রাজনীতি, বিদ্রোহ-বিপ্লব, সমাজের অসংগতি, সর্বোপরি তারুণ্যের জয়গান। শুধু বিষয়গুণেই নয়, প্রকরণ-প্রকৌশলেও লেখাগুলো প্রসাদগুণসমৃদ্ধ। ছন্দ যে কীভাবে বক্তব্যের অনুগামী হয়, ‘বিষের বাঁশী’র কবিতাগুলো যেন তারই উৎকৃষ্ট নিদর্শন। শতবর্ষ পেরিয়ে এসে যদি আমরা আবার ‘বিষের বাঁশী’র দিকে ফিরে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব শুধু বিষয়গুণে নয়, এর প্রকৌশলের জন্যেও কাব্যটি উপযোগিতা হারায়নি। পাশাপাশি ‘বিষের বাঁশী’র ছন্দের, শব্দের প্রভাব যে পরবর্তী কবিদের ওপরও পড়েছে।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close