গাজার উত্তরাঞ্চলীয় জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে নতুন করে ট্যাঙ্ক পাঠিয়েছে ইসরাইল। শনিবার রাতভর আকাশ ও স্থলপথে ভারী বোমা হামলার পর রোববার ভোরে সেখানে ট্যাঙ্ক পাঠায় দেশটি। গাজার একটি হাসপাতালের বিবৃতিতে বলা হয়, উপত্যকার মধ্যাঞ্চলে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের আল-আকসা শহিদ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসরাইলে পারমাণবিক হামলার হুমকি দিয়েছে তেহরান।
এদিকে রোববার রাফাতেও হামলা জোরদার করেছে ইসরাইলি সেনারা। গোটা নগরীতেই ইসরাইল ট্যাঙ্ক থেকে বোমাবর্ষণ করছে। হামলা থেকে বাঁচতে হাজারো মানুষ রাফা ছেড়ে যাচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স ও সংবাদকর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালানো হচ্ছে সেখানে। এদিকে মিসর জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার মামলায় দক্ষিণ আফ্রিকার সহযোগী হবে।
জাবালিয়া ও রাফায় হামলা : গাজার আটটি ঐতিহাসিক শরণার্থী শিবিরের মধ্যে সবচেয়ে বড় জাবালিয়া। এটি ১ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনির আশ্রয়স্থল। তাদের অধিকাংশই ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় ইসরাইলের শহর ও গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়েছিল।
শনিবার সন্ধ্যায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলেছে, জাবালিয়ায় ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাসকে তাদের সামরিক সক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করায় বাধা দিচ্ছে সেনারা। এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ আমরা জাবালিয়ায় হামাসের সামরিক সক্ষমতা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা শনাক্ত করেছি। সেই চেষ্টা নির্মূলে সেখানে কাজ করছি।
গাজা শহরের জেইতুন জেলায় অভিযান চালিয়ে ইসরাইলি বাহিনী প্রায় ৩০ ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করেছে বলেও দাবি করেন হাগারি।
জাবালিয়ার বাসিন্দা ৪৫ বছর বয়সি সায়েদ একটি চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে রয়টার্সকে বলেছেন, ‘গতকাল থেকে আকাশ ও স্থলপথে বোমাবর্ষণ বন্ধ হয়নি। সবখানেই বোমাবর্ষণ করছিল তারা। এর মধ্যে, বিদ্যালয়ের কাছাকাছি থাকা বাস্তুচ্যুতদের আবাসস্থলও ছিল। যুদ্ধ আবার শুরু হচ্ছে। জাবালিয়ার পরিস্থিতি দেখে এমনই মনে হচ্ছে।’ ইসরাইলি সেনাদের নতুন অনুপ্রবেশের কারণে অনেক পরিবারই অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
গাজা সিটির পূর্বাঞ্চলীয় উপশহর আল-জেইতুন এবং আল-সাবরাতে আবারও ট্যাঙ্ক পাঠিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। সেখানকার বাসিন্দারা ভারী বোমা হামলার খবর জানিয়েছেন। হামলায় অনেক বহুতল আবাসিক ভবনসহ বেশ কয়েকটি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। কয়েক মাস আগে এসব এলাকার বেশিরভাগের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার দাবি করেছিল ইসরাইলি বাহিনী।
এর মধ্যেই রাফার আরও এলাকা থেকে বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইল। এর মধ্য দিয়ে রাফায় আরও বড় ধরনের অভিযানের ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটি। আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে গত সপ্তাহে ইসরাইলি সেনারা পূর্ব রাফায় প্রবেশ করেছে। এতে গাজায় মানবিক ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সেখানকার সংবাদকর্মী ও অ্যাম্বুলেন্সেও ইসরাইল হামলা চালাচ্ছে।
আইসিজেতে যাচ্ছে মিসর : গাজা উপত্যকায় গণহত্যা চালানোয় ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) মামলায় দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছ মিসর। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি আগ্রাসন বাড়ার প্রেক্ষাপটে তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে। মিসরীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি হামলার আরও বর্বরতা এবং ব্যাপ্তি বাড়ার ফলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নেতানিয়াহুকে একহাত এরদোগানের : ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী গাজার শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচিত রাফা শহরে বড় আকারে অভিযান শুরু করার পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছেন, তেল আবিবের কর্তা নেতানিয়াহু যেভাবে গাজা উপত্যকায় গণহত্যা চালাচ্ছেন, যে ধরনের নিষ্ঠুরতা দেখাচ্ছেন, তাতে হিটলারও লজ্জা পাবে। এর আগে নেতানিয়াহুকে ‘কসাই’ হিসেবে অ্যাখায়িত করার পর গণহত্যাকারী বলেও বিশ^জুড়ে গণমাধ্যমের শিরোনামে এসেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।
পারমাণবিক বোমার বড় হুমকি ইরানের : ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি দেশটির পারমাণবিক উচ্চাকাক্সক্ষা নিয়ে বিশ্বের উদ্বেগকে আবারও বাড়িয়ে দিয়েছেন। ইসরাইলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মাঝে অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে ইরানের পারমাণবিক বোমা বানানো ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি। দেশটির পারমাণবিক মতবাদে পরিবর্তন আনার ইঙ্গিতও দিয়েছেন কামাল খারাজি। তিনি বলেছেন, যদি ইরানের অস্তিত্ব ইসরাইলের দ্বারা হুমকির মুখে পড়ে তা হলে ইরান পারমাণবিক মতবাদে পরিবর্তন আনবে। খারাজি বলেন, আমাদের পারমাণবিক বোমা তৈরির কোনো সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু ইরানের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে, আমাদের সামরিক মতবাদ পরিবর্তন করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।