প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪, ৪:৪৮ পিএম (ভিজিট : ২৮০)
একসময়ের একমাত্র যোগাযোগমাধ্যম চিঠি ফেলার ডাক বাক্স বর্তমানে যেন রূপকথার গল্পে পরিণত হয়েছে! এখন আর আগের মতো কদর নেই চিরচেনা লাল ডাক বাক্সের। তবে এখনও কিছু কিছু জায়গায় দেখা মেলে চুপচাপ মাথা উঁচু করে একা দাঁড়িয়ে আছে ডাক বাক্স।
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের পাশে দাঁড়িয়ে আছে এমনই একটি ডাক বাক্স যার গায়ে লেখা আছে- চিঠির বাক্স, খোলার সময় সকাল ১০:৩০। দেখে মনে হয় সেটি যেন দাঁড়িয়ে আছে চিঠির অপেক্ষায়। কিন্তু সময় বয়ে গেলেও চিঠিও আসে না, বাক্সটিও আর খোলা হয় না।
মেহেরপুর প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার শামীম আহমেদ বলেন, আগের দিনের মতো এখন আর চিঠিপত্র লেনদেন হয় না। বর্তমানে পোস্ট অফিসে পার্সেল, বীমা, পরীক্ষার খাতা, সঞ্চয়পত্রের মতো কাজগুলোই বেশি হচ্ছে।
মেহেরপুরের প্রবীণ বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, সময় পাল্টে গেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়ায় পাল্টে গেছে ডাক বিভাগও। কালের পরিক্রমায় আমাদের মানসিকতাও পাল্টেছে। এখন সময় নষ্ট করে আর কেউ যেমন চিঠি লেখে না, তেমনি চিঠি অনেক দেরি করে প্রিয়জনের হাতে পৌঁছে যাক এটিও কেউ চায় না। কালের বিবর্তনে এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে প্রিয়জনের কাছে হাতে লেখা চিঠি আর জৌলুস ছড়ানো ডাক বাক্সের কদর। এখন ডাক বাক্সে সরকারি চিঠিপত্র ছাড়া আর কোনো চিঠিই পাওয়া যায় না।
গত শতকের পঞ্চাশের দশকে ডাকপিয়ন পায়ে হেঁটে বাড়িতে বাড়িতে চিঠি নিয়ে আসতেন। প্রিয়জনের একটি চিঠির জন্য তখন সবাই তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় থাকত। কুরিয়ার সার্ভিসের যুগে এসেও মানুষ চিঠি দিতে ভুলে যায়নি, যদিও ডাকপিয়নের সাইকেলের টুংটাং আওয়াজ আর শোনা যায় না। এখন স্ত্রী স্বামীর কাছে, মা তার সন্তানদের কাছে কিংবা কোনো তরুণ তার প্রিয়জনের কাছে চিঠি লিখে ডাক বাক্সে দিয়ে আসে না। বর্তমান সময়ের মানুষরা তার প্রিয়জনের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাজ সারেন। মোবাইল ফোন কিংবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রিয়জনের কাছে দ্রুত ভাব বিনিময় করা যায় সত্য, কিন্তু প্রকৃত অর্থে লেখনির মাধ্যমে তার আবেগতাড়িত ভালোবাসার কথা তাতে তেমনভাবে ফুটে ওঠে না। প্রিয়জনের কাছ থেকে হাতে লেখা চিঠি পাওয়ার আবেগ বর্তমান প্রজন্ম অনুভব করতে পারে না।
সময়ের আলো/জিকে