ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যার মূল হোতা গ্রেফতার
প্রকাশ: রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৪, ৬:২২ এএম  (ভিজিট : ২৯৯৪)
ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে মন্দিরে আগুন দেওয়ার অভিযোগে দুই নির্মাণ শ্রমিককে নৃসংশভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পঞ্চপল্লী গ্রামটি এখন পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। টহলে রয়েছে বিজিবি-পুলিশ-র‌্যাব। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়েছে। 

এদিকে শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী ও নিহতদের বাড়ি নওপাড়া ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছেন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক। এ সময় তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। মন্ত্রী নিহত দুই ভাইয়ের পরিবারকে ২ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন। মন্ত্রী পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, যারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে। মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন একটি হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া কষ্টকর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছেন। যারাই এর সঙ্গে জড়িত তাদের কঠোর বিচারের আওতায় আনার কথা জানিয়েছেন তিনি।  

পঞ্চপল্লী গ্রামের কালীমন্দিরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হলো তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই ঘটনায় উত্তেজিত এলাকাবাসীর মারধরে দুই শ্রমিক নিহত হওয়ার বিষয়টি নিছক গুজব নাকি পরিকল্পিত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে নির্মাণ শ্রমিকদের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় কয়েকজন মুসলিম ছিলেন কেবল ওই নির্মাণ শ্রমিকরাই। সেই কারণে উত্তেজনার মধ্যে নিছক সন্দেহের বশে তাদের ওপর হামলা হয়েছে কি না তা দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান।

পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম জানান, এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, মন্দিরটি সর্বজনীন। ডুমাইন ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রাম আর পঞ্চপল্লী এলাকা। এই এলাকাটি পাঁচটি গ্রাম নিয়ে। সব গ্রামই হিন্দু অধ্যুষিত।আশপাশের এলাকাগুলোও হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। আগুন লাগার খবরে বেশি লোক জড়ো হয় আশপাশের এলাকা থেকে।

সন্ধ্যার পর মন্দিরে প্রদীপ জ্বালানোর ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। তখন পাশ শুধু সাতজন নির্মাণ শ্রমিক সেখানে ছিলেন। কিন্তু তাদের আগুন দিতে কেউ দেখেনি বা আগুন দেওয়ার হীন উদ্দেশ্য তাদের থাকতে পারে এমন-সন্দেহ করার কোনো যৌক্তিক কারণও খুঁজে পাওয়া যায়নি। 
শুক্রবার রাতে ফরিদপুর জেলা পুলিশের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. মোর্শেদ আলম এসব তথ্য জানান। পুলিশ সুপার আরও জানান, মন্দিরে অগ্নি সংযোগের ঘটনায় নির্মাণ শ্রমিকদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাদের সম্পৃক্ত থাকার বি-য়টি প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে তিনি জানান, আগুন যেভাবেই লাগুক না কেন তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

পুলিশ সুপার বলেন, প্রতিমায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে এবং শত শত মানুষ গুজবের কারণে বিক্ষুব্ধ হয়ে হামলায় অংশ নেয়। তিনি দাবি করেন, এই গুজব ছড়িয়ে হামলায় নেতৃত্বদানকারীকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও তদন্তের স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করেননি তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার জানান, এ ঘটনায় তিনটি মামলা করা হয়েছে।

একটি প্রতিমায় আগুনের ঘটনায়, আরেকটি গুজব ছড়িয়ে হামলা চালিয়ে দুই শ্রমিককে হত্যা এবং অপর আরেকটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাজে বাধাদান ও তাদের আহত করার ঘটনায়। তিনটি মামলায় কয়েকশ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। হত্যা মামলার বাদী নিহত দুই সহদোরে বাবা মো. শাজাহান খান। 

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে মন্দিরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ এনে স্কুল সম্প্রমসারণ কাজে নিয়োজিত ৭ মুসলিম শ্রমিককে নৃসংশভাবে হাত-পা বেঁধে পেটানো হয়। সেই ঘটনায় নির্মাণ শ্রমিক দুই সহোদর নিহত হয় এবং ৫ জন গুরুতর আহত হয়।

বকশীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগর বলেন, আমার তিনজন কর্মী মতিনের এলাকার হয়েও আমার পক্ষে কাজ করেছে এটাই তাদের অপরাধ। তাই বর্তমান মেয়রের ছোট ভাই মনির ও তার সমর্থকরা আমার কর্মীদের বেধড়ক পিটিয়েছে। পাশাপাশি মেয়র মতিনের অফিস নিজেরাই ভাঙচুর করে আমার কর্মীদের ওপর দোষ দিচ্ছে। 

বকশীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ফকরুজ্জামান মতিন বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। শুক্রবার রাতে তারই ধারাবাহিকতায় আমার নিজ অফিস ভাঙচুর করে সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগরের ক্যাডার বাহিনী। বকশীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল আহাদ খান জানান, শুক্রবার রাতে সাবেক ও বর্তমান মেয়রের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সাবেক মেয়রের সমর্থকদের মারধরের ঘটনা ও বর্তমান মেয়রের অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত করা হচ্ছে। একইসঙ্গে দুই পক্ষকেই শান্ত থাকতে বলা হয়েছে।

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close