ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ঈদ আয়োজন: আমেরিকার দিনরাত্রি
প্রকাশ: সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১:১৩ এএম আপডেট: ০৯.০৪.২০২৪ ৮:১১ এএম  (ভিজিট : ১৩৪৬)
বড় ছেলে প্রায় দু’বছর থেকেই আমাদের অনুরোধ করছিল তার কাছে যেতে। কিন্তু আমাদের চাকরি এবং বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছিল না। হঠাৎ ২০২৩ সালে একটা সুযোগ পেয়ে গেলাম। কথা ছিল জুনের দিকে শিশুসাহিত্যিক এবং অন্বয় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী হুমায়ুন কবির ঢালির সঙ্গে নিউইয়র্ক বইমেলায় যাব। কিন্তু অফিস থেকে ছুটি পেলাম না। আমার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমাকে দাফতরিক বিশেষ কারণে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়া পিছিয়ে দিতে বললেন। সুযোগটা এলো অক্টোবর মাসে। আমার ছোট ভায়রা মির্জা জহুরুল আলম জাউন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার ছোট কিন্তু খুব চমৎকার সুন্দর শহর লেন্সডেলের অধিবাসী। সে তার বড় ছেলের জন্য কনে দেখার কথা বলেছিল। সৌভাগ্যক্রমে আমার স্ত্রী বাংলাদেশি কনে পেয়ে যান। এবং আরও সুবিধা হলো কনে পড়ালেখার সুবাদে ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে বসবাস করছে। সুতরাং আমার ছেলের আহ্বান এবং ছোট ভায়রার ঘটক হিসেবে এবার যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত হলো। এখন বাধা একটাই অফিস ছুটি। ব্যবস্থাপনা পরিচালক কথা দিয়েছিলেন তাই ছুটি পেতেও অসুবিধা হলো না। অবশেষে ১৯ অক্টোবর আমরা টার্কিশ এয়ারলাইনে যাত্রা শুরু করলাম।

ঢাকা থেকে ১৯ অক্টোবর ভোর ৬টায় আমাদের বিমান আকাশে উড়ল। সাত ঘণ্টা পনের মিনিট পর তুরস্কের রাজধানী ইস্তানবুলে পৌঁছলাম। ইস্তানবুলে আমাদের বিমান বদল করতে হবে। আমাদের হাতে ছিল দুই ঘণ্টা। কিন্তু আমরা ভুল করে ট্রানজিট এলাকায় না ঢুকে বহির্গমনে চলে এলাম। আমরা যে এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করলাম, তা চালু হয়েছে অক্টোবর ২০১৮ সাল। যেহেতু আমরা বহির্গমনে চলে এসেছি তাই আমাদের আবারো নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমানে উঠতে হবে। এমনিতেই ঢাকা থেকে বিমান ছাড়তে দেরি হয়েছিল। সুতরাং এত বিশাল এলাকাজুড়ে এয়ারপোর্ট অনেকটা দৌড়ে নিরাপত্তা বলয় গিয়ে হাজির হতে হলো। চেক পয়েন্টে বেল্ট, জুতা, মানিব্যাগ, ওভারকোট সবকিছুই স্ক্যানিং মেশিনে দিতে হলো। নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে আমরা আমাদের জিনিসপত্র সংগ্রহ করে এলিভেটরে উপরে চলে এলাম। উপরে এসে বুঝতে পারলাম তাড়াহুড়ায় আমার হাত ঘড়িটা ফেলে এসেছি। স্ত্রীকে বললাম কথাটা। সে বিরক্ত হয়ে বলল, ‘তোমার এমনই হবে’; কিন্তু তখনই তার মনে পড়ল ওভারকোটটার কথা। আমাকে বলল, ‘আমার ওভারকোটও ফেলে এসেছি।’ এবার আমি একটু সাহস পেলাম।

রসিকতা করে বললাম, ‘তোমার ওভারকোট আমার ঘড়ির সন্ধানে থেকে গেছে।’ বেচারি মন খারাপ করে বলল, ‘দেখি চেষ্টা করে উদ্ধার করা যায় কি না।’ আমি বললাম, ‘হাতে সময় নেই।’ তবুও আমাকে দাঁড় করিয়ে সে জিনিসগুলো উদ্ধারে চলে গেল। কিছুক্ষণ পরেই দেখলাম ফিরে আসছে। বলল, ‘নিচে নামার সিঁড়ি এ পাশে নেই।’ অগত্যা ইমিগ্রেশনের দিকে এগোলাম। সম্ভবত শেষ যাত্রী হিসেবে বোর্ডিং করে আমরাই বিমানে উঠলাম। হিউস্টন পৌঁছাতে তখনও প্রায় ১১ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের পথ। আমরা ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় হিউস্টনের জর্জ বুশ ইন্টারকন্টিনেন্টাল বিমানবন্দরে পৌঁছালাম। ইমিগ্রেশনে আমাদের তেমন কোনো সমস্যাই হলো না। কারণ আমরা পূর্বেও যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছিলাম। অফিসার আমাদের ই-পাসপোর্ট নিয়ে মেশিন স্ক্যানিং করেই আমাদের বহির্গমন পথ দেখিয়ে দিলেন। 

এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে দেখলাম আবহাওয়া একদম বাংলাদেশের মতো। অক্টোবরের শেষদিকে নাতিশীতোষ্ণ। ছেলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হলো। সে জানাল সে পথে রয়েছে। আমাদের বেরিয়ে এসে ১২ নম্বর পিলারে অপেক্ষা করতে বলল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই আমার ছেলে এবং আমার ছোটবেলার বন্ধু গাড়ি নিয়ে হাজির। গাড়িটাও বন্ধুর। ছেলের সিডান গাড়ি। বড় লাগেজ বহন করা সমস্যা। তাই বন্ধু ওর বড় গাড়ি নিয়ে এসেছে। আমরা পথে যেতে যেতে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের একটা নমুনা দেখলাম। দেখলাম বিভিন্ন স্থানে পাশাপাশি ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের পতাকা উড়ছে। বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় সমর্থন তো ইসরাইলের প্রতি তা হলে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়ালে সমস্যা করে না। বন্ধু আমাকে প্রায় ধমকের সুরেই বলল, ‘ব্যাটা এইটা তোদের গণতন্ত্র না, এটা আমেরিকার গণতন্ত্র। কথা বলতে বলতেই আমরা ২৫ থেকে ৩০ মিনিটে আমার ছেলের বাসা স্প্রিং, স্বডাস্ট, উডল্যান্ড পৌঁছালাম।

ভায়রার ছেলের বিয়ের মূল অনুষ্ঠান ছিল ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে। কারণ বিয়ের কন্যা বসবাস করে অরল্যান্ডোতে। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী কন্যার আবাসস্থলেই বিবাহ সম্পন্ন হতে হবে। বিয়ের যাবতীয় প্রস্তুতির জন্য আমাদেরকে চব্বিশে অক্টোবরই অরল্যান্ডো যেতে হবে। অনেক দিন পর ছেলের সঙ্গে দেখা, স্বাভাবিকভাবেই সে আমাদের ছাড়তে চাচ্ছিল না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পূর্বেই আমাদের প্রোগ্রাম এবং ডোমেস্টিক ফ্লাইটের টিকেটও বুক করা ছিল। আমার আপন চাচাতো বোন থাকেন অরল্যান্ডোতে। তথাপি আমার ভায়রার পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা সবাই একত্রে থাকব বিধায় সে পূর্বেই এয়ার বিএন্ডবি থেকে একটি কটেজ বুক করে রেখেছিল। একই সঙ্গে চলাচলের জন্য গাড়িও বুকিং ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে বুকিং অর্থ শুধু গাড়ি বুকিং, কোনো ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আসবে না। ক্লায়েন্টকে কোম্পানি একটা ঠিকানা দিয়ে দেবে এবং একটা গোপন কোড নম্বরও দেবে। ক্লায়েন্ট নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে গোপন কোড ব্যবহার করে গাড়ির চাবি সংগ্রহ করবেন। গাড়ি ব্যবহার করবেন। আবার ফেরত দেওয়ার দিন তাদের নির্দিষ্ট করা স্থানে একইভাবে গাড়ি রেখে আসবেন। মজার বিষয় হলো এই সময়ের মধ্যে ক্লায়েন্টের সঙ্গে গাড়ি কোম্পানির কোনো ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হবে না। সব কার্যক্রম চলবে সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ডের রেফারেন্সে টেলিফোনে এবং অনলাইনে। গাড়ি ব্যবহার করার সময় কোনো ক্ষতি হলে সে ক্ষতিপূরণ ক্লায়েন্টের কাছ থেকে নেওয়া হবে। অবশ্য এ জন্য ক্লায়েন্টের ইন্স্যুরেন্স করা থাকে। 

নির্ধারিত তারিখে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ডোমেস্টিক ফ্লাইট ফ্রন্টিয়ার এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে যাত্রা করার জন্য এয়ারপোর্টে রওনা হলাম। বন্ধুই সহযোগিতা করল। এয়ারপোর্ট যাওয়ার মাঝামাঝি পথে এসে আমাদের ফ্লাইট ডিলের ঘোষণা পেলাম। বন্ধু মোস্তফা আমীন খোকন সিদ্ধান্ত নিল বাসায় ফিরে না গিয়ে আমরা বিভিন্ন মলে ঘুরে বেড়াব। আমরা তাই করলাম। অবশেষে প্রায় দুই ঘণ্টা পরে আমরা এয়ারপোর্ট পৌঁছালাম। 

আমাদের চেক-ইন করাই ছিল। বোর্ডিং কার্ড নিয়ে এয়ারপোর্ট ঢুকে আরেকবার বিমানের সময় পেছানোর ঘোষণা পেলাম। কী আর করা, আমরা যেখান থেকে বোর্ডিং করব সেখানে বসার জায়গা পেয়ে গেলাম। এরই মধ্যে আমার তরল প্রাকৃতিক ডাক এলো। আমার ছেলে পূর্বেই বলে দিয়েছিল ছোট খালি পানির বোতল সঙ্গে রাখতে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের কোথাও ওয়াশরুমে হ্যান্ডফ্লাশ ব্যবহার হয় না। ওরা টিস্যুকে প্রাধান্য দেয়। 

সুতরাং খালি বোতল নিয়ে বাইরের বেসিন থেকে পানি নিয়ে আমি কার্য সমাধা করলাম। আরও প্রায় ঘণ্টাখানেক পর আমাদের বোর্ডিং শুরু হলো। দেখলাম ওরা প্রত্যেকের ব্যাকপ্যাক ওদের সামনে রাখা স্টিলের খোপের মতো জায়গায় ঢুকিয়ে মাপ নিচ্ছে। যাদেরটা খাপের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে তাদেরকে বিমানে বোর্ডিং দেওয়া হচ্ছে। আর যাদেরটা বেশি তাদের কাছ থেকে চার্জ নিচ্ছে। আমি ঘাবড়ে গিয়ে ভায়রাকে ফোন করলাম। কারণ আমাদের সঙ্গে শুধু ব্যাকপ্যাকই না ছোট হ্যান্ডকেরিও ছিল। ভায়রা আমাকে আশ্বস্ত করল যে আমাদের সবকিছু অগ্রিম পেমেন্ট করা আছে। ‘এ’ রো। অর্থাৎ আমরা বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত। আমরা এ রো দিয়ে প্রবেশ করতেই মোটামুটি ভিআইপি মর্যাদা পেলাম। আমাদের দুজনের হ্যান্ডকেরিতে ভায়রার ছেলের বিয়ের জন্য নিয়ে আসা বিভিন্ন জিনিস ছিল। অনেক ওজন থাকায় স্বেচ্ছায় একজন শ্বেতাঙ্গ যুবক আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল এবং একই সঙ্গে আশ্বস্ত করল যে নামার সময়ও সে সহযোগিতা করবে এবং সে তা করেছিল। তার ব্যবহারে মুগ্ধ না হয়ে উপায় ছিল না। এমনও দেখেছি যে আপনি হয়তো লাইনে দাঁড়িয়েছেন, হয়তো বেখেয়ালে এগিয়ে গেলেন। আপনার সামনে থাকা ব্যক্তিও আপনাকে বলবে-‘নো প্রবলেম, গো এহেড’। বিমান টেক অব করার পর আমার আরেকটি মজার অভিজ্ঞতা হলো।

বিমানবালারা খাবার ট্রলি নিয়ে বের হলে আমি মনে করলাম তারা আমাদের পরিবেশন করবে। কিন্তু অবাক হয়ে গেলাম যখন দেখলাম ওরা হাঁকডাক দিয়ে খাবার ফেরি করে বিক্রি করছে! অনেকেই তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানীয় কিনে নিচ্ছে। অনেকটা আমাদের দেশে বাসের হকারির মতো। অবশেষে আমরা অরল্যান্ডো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে সুন্দরভাবে ল্যান্ড করলাম। বিমান থেকে বের হয়ে আমরা শাটল ট্রেনে উঠলাম। ট্রেন থেকে নেমে বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার মূল পথ হারিয়ে ফেললাম। ভুল পথ দিয়ে আমরা বাইরে বেরিয়ে এলাম। এখানেও শ্বেতাঙ্গ মা ও মেয়ে আমাদের দারুণ সহযোগিতা করেছিল। আবার ছেলে আমাকে এবং আমার বন্ধু আমার স্ত্রীকে সিম দিয়েছিল। ওগুলোও কাজে লাগল। আমার ভায়রা আমাদের দু’ঘণ্টা পূর্বেই পেনসিলভেনিয়া থেকে অরল্যান্ডো এসে পৌঁছেছিল। সে এবং তার বড় ছেলে (পাত্র) আমাদের খুঁজে বের করল। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আমরা আমাদের অস্থায়ী নিবাস এয়ার বিএনবির বাড়িতে পৌঁছালাম। এই বাড়ির ব্যাপারটাও ঠিক গাড়ির মতো। কোনো পক্ষের কারও সঙ্গে দেখা নেই। কিন্তু সব কাজ সূক্ষ্মভাবে হয়ে যাচ্ছে। বাড়ির কোড নম্বর দিয়ে গেট খুলে আমরা বাড়িতে প্রবেশ করলাম। দেখলাম আমাদের পূর্বেই বাংলাদেশ থেকে কন্যার বাবা-মা এসে পৌঁছেছেন।

২৫ তারিখ আমাদের প্রোগ্রাম ছিল বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র প্রস্তুতকারক শুটিং স্পট ইউনিভার্সেল স্টুডিও দেখতে যাওয়া। আমরা যে সময় যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পৌঁছাই তখন তাদের হ্যালোইন উৎসবের সময়। ওদের মূল হ্যালোইন পালন হয় ৩১ অক্টোবর। কিন্তু উৎসবের বেশ কয়েক দিন পূর্ব থেকেই একটা সাজ সাজ রব পুরো আমেরিকায় ছড়িয়ে থাকে। এই সময় ওরা ঘরের সামনে বিভিন্ন রকমের আলোকসজ্জা করে। বাসার সামনে খোলা প্রান্তরে বিভিন্ন রকমের ভূতের আকৃতি সাজিয়ে রাখে। ওদের বিশ্বাস হ্যালোইনের রাতে খারাপ আত্মারা বেরিয়ে আসে। এই আত্মার জন্য ওরা ওদের বাড়ির সামনে খাদ্যদ্রব্য রেখে দেয়। যা পেয়ে খারাপ আত্মারা সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যায়। মূলত সবাই বিভিন্ন রকমের ক্যান্ডি বাসার সামনে রেখে দেয়। আশপাশের বাচ্চারা দল বেঁধে ভূতের পোশাক পরে একজোট হয়ে বের হয়। এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্যান্ডি সংগ্রহ করে। 

এই হ্যালোইন উৎসবের জন্য পুরো ইউনিভার্সাল স্টুডিও ছিল সরগরম। প্রচুর মানুষের সমাবেশ ছিল। আমরা যতটুকু দেখতে পেরেছিলাম তাতেও প্রায় দু’ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল। ৫৪১ একর এলাকাজুড়ে এই স্টোডিওতে তিনটি থিম পার্ক ও চারটি রিসোর্ট রয়েছে। এই স্টোডিওর প্রত্যেকটা বিভাগ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে তিন হতে চারদিন লেগে যায়।

২৬ তারিখ সকালে বর কনে এবং তাদের পিতামাতা অরল্যান্ডোর স্থানীয় বিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। আমেরিকার নিয়ম অনুযায়ী তাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো। কিন্তু মুসলিম রীতি অনুযায়ী না। পাত্র তাবলিগ জামাতের সদস্য। তার বন্ধু একজন পাকিস্তানি কাশ্মীরি মুফতি। পাত্র নিজে তার মুফতি বন্ধুকে মুসলিম রীতি অনুযায়ী তার বিয়ে পড়ানোর দায়িত্ব অর্পণ করেছিল। ২৭ তারিখে বাদ জুমা মসজিদে নিকাহর জন্য সবকিছু ঠিক করা হলো। ২৭ তারিখ শুক্রবার আমরা হিথ্রেুা মুসলিম কমিউনিটি সেন্টার মসজিদে সেই মুফতির ইমামতিতে জুমার নামাজ আদায় করলাম। বাদ জুমা নিকাহর কাজ সম্পন্ন হলো এবং ইসলামি রীতি অনুযায়ী নিকাহনামা লেখা হলো এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সই করলেন। বরের বাবা সন্ধ্যায় সবাইকে প্রীতি ভোজে আমন্ত্রণ জানিয়ে তখনকার কার্যক্রম শেষ করেন।

সন্ধ্যায় মূল শহর থেকে সামান্য দূরে আমরা একটি মেডিটেরিনিয়ান রেস্টুরেন্টে হাজির হলাম। আমাদের জন্য তখনও একটি বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। রাতে প্রীতিভোজের গিয়ে দেখি সেই জুমার নামাজের মুফতি এবং তার সহকারী একেবারে পুরো আমেরিকান ড্রেসে অর্থাৎ জিন্স এবং টি-শার্ট পরে ওয়ালিমার খাবারের জন্য হাজির। আমাদের দেশে ইমামের এই পোশাক কি কেউ সহ্য করত?

২৮ তারিখে অরল্যান্ডো এক প্রান্তে মেইটল্যান্ড এবং সাইবেলিয়া হৃদ অবস্থিত। অঞ্চলটি অরল্যান্ডোর একটি পস এরিয়া। লেকের পাড় ঘেঁষে সুসজ্জিত বাড়ি। বাড়ি এবং লেকের মাঝামাঝি গাড়ি চলাচল এবং হাঁটার রাস্তা। পরিবেশটা বেশ নীরব। লেকের পাড়েই অনেক ছোট ছোট ইয়ট ভেড়ানো। বোঝাই যায় এদের মালিক আশপাশে কোন বাড়ির মালিক। এরা অবসর সময়ে বোট নিয়ে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করে। কিংবা লেকের পানিতে ঘুরে বেড়ায়। পাশেই শিল্পকলার গ্যালারি এবং পাবলিক লাইব্রেরি। তবে বেড়াতে আসা লোকদের ক্ষেত্রে নিয়ম হলো সন্ধ্যার পূর্বেই এলাকা ত্যাগ করতে হবে।

বিয়ের কার্যক্রম শেষ করে ২৯ তারিখ সকালে আমরা আমাদের অস্থায়ী বাসস্থান ছেড়ে তিন দল তিন দিকে ছড়িয়ে গেলাম। আমি এবং আমার স্ত্রী আমরা লারগো, ট্যাম্পার দিকে আমাদের এক বন্ধুর বাড়িতে রওয়ানা হলাম। বন্ধু নিজেই চার ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে আমাদের নিতে এলো।

ফ্লোরিডার ট্যাম্পা, লারগো, ক্লিয়ার ওয়াটার, মায়ামি হলো পৃথিবীবিখ্যাত ট্যুরিস্ট স্পট। এখানকার আবহাওয়াও বাংলাদেশের মতই। তাই আমেরিকার অন্য অঞ্চলে যখন প্রচুর শীত পড়ে। তখন বিশালসংখ্যক টুরিস্ট এই অঞ্চলে চলে আসে। বিশেষ করে ক্লিয়ার ওয়াটার, স্পা বিচ, লেইক সেমিনোল পার্ক। স্পা বিচে জীবনে প্রথমবার চলাফেরা করা মুক্ত জলাশয় কুমির দেখা হলো। ক্লিয়ার ওয়াটার থেকে পঁচিশ মিনিটের রাস্তা সমুদ্রসৈকত ফোর্ট ডি সোটা। বিচটার নিরিবিলি পরিবেশ মনোমুগ্ধকর। সমুদ্র স্নানে পর্যটকরা আসেন তবে সন্ধ্যার পূর্বেই ফিরে যান। পাশেই বনভূমি ঘেরা এলাকায় বয়স্করা পরিবারসহ তাদের লিভিং কার্ট নিয়ে সময় কাটান। 

তবে টেম্পার সেন্ট পিটের্সবার্গ বিচে দেখা হলো পৃথিবীর প্রথম যাত্রীবাহী বিমান। এই বিমানের যাত্রী এবং পাইলটসহ দুই আসনবিশিষ্ট। বিমানটি ছিল মূলত পানির বিমান (সী প্লেন)। ১৯১৪ সালে টেম্পা বে ফ্লোরিডা থেকে এ বিমান তার একমাত্র যাত্রী নিয়ে প্রথম যাত্রা শুরু করে। বিমানটি ১৫০ ফুট উচ্চতায় ২৩ মিনিট উড়াল দিয়ে ২১ মাইল পথ পাড়ি দেয় এবং টেম্পা ডাউন টাউনে হিলস-ব্রো নদীতে অবতরণ করে। এর প্রথম যাত্রী ছিলেন পিটার্সবার্গের মেয়র আব্রাম সি ফিল এবং পাইলট ছিলেন টনি জান্নুস। বিমানটির নাম ছিল বিনোইস্ট। বিমানটি প্রস্তুতকারী কোম্পানির প্রেসিডেন্ট থোমাস বিনোইস্টের নামে নামকরণ করা হয়। 

বিমানটি ২৫ ফিট লম্বা এবং দুই পাখার প্রান্ত মাপসহ এর ব্যাস হলো ৪৪.৬ ফিট। বিমানটি প্রদর্শনের জন্য পোতাশ্রয় রাখা হয়েছে। এই সেন্ট পিটার্সবার্গেই রয়েছে পৃথিবীবিখ্যাত চিত্রকর সালভাদর ডালির আর্ট মিউজিয়াম। দুর্ভাগ্য আমার তা শুধু বাইরে থেকে দেখার সুযোগ হয়। দুবার চেষ্টা করেও ভেতরে প্রবেশের সুযোগ হয়নি। তবে হিলস-ব্রো নদীর তীরে তাদের সাধারণ আর্ট মিউজিয়াম দেখার সুযোগ ঠিকই পেয়েছিলাম।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close