ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য
থামছে না আবাদি জমিতে পুকুর খনন
প্রকাশ: শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৭:৩৩ এএম  (ভিজিট : ৪১৪)
নাটোরে কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না আবাদি জমিতে পুকুর খনন। কৃষি জমি রক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকার পরও তা মানা হচ্ছে না। তিন ফসলি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন বন্ধ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়ে জেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা প্রতিবাদ করছেন। এর মধ্যেই মাটি কাটার ভেকু পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নাটোর সদরসহ সাতটি উপজেলায় এখন পুকুর খননের মহোৎসব চলছে। তিন ও চার ফসলি জমির মাটি কেটে চলছে পুকুর খনন।

এ ব্যাপারে নাটোর জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁইয়া বলেন, জেলার প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। তারা আবাদি জমি রক্ষায় নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন। পুকুর খনন বন্ধ করতে আর্থিক দণ্ডসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। 

এদিকে নাটোর সদর উপজেলার পাইকোরদল এলাকায় অবৈধভাবে পুকুর খননের সময় আগুন দিয়ে ভেকু পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুকুরে থাকা ভেকুটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, নাটোর সদর পাইকোদল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে একরামুল ইসলাম তার জমিতে গত কয়েক দিন ধরে প্রতি রাতে পুকুর খনন করছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বেশ কয়েকজন মিলে বুধবার রাতে মাটি কাটার মেশিনে আগুন লাগিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। 

নাটোর ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার শাহাদত জানান, প্রায় ১ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। নাটোর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু রায়হান জানান, দুর্বৃত্তরা ভেকুটি পুড়িয়ে দিয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও কাউকে পায়নি। ঘটনার তদন্ত চলছে। 

নাটোর সদর উপজেলার কোরটা, গাজীরবিল, লক্ষ্মীপুর, খোলাবাড়িয়া, ভাতুরিয়া, ছাতনী, বাকশোর, পাইকোরদৌল, বলদখালসহ বিভিন্ন গ্রামে সরেজমিন দেখা যায়, ফসলি জমিতে চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। চারপাশে তাকালেই দেখা যায়, ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে একের পর এক পুকুর। পুকুরের পাশে পতিত পড়ে আছে অনেকের আবাদি জমি। অনেক জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। চার ফসলি জমি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এলাকার অনেক কৃষক। এরই মধ্যে আবার নতুন করে চার ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। এমন চিত্র শুধু নাটোর সদর নয়, সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, লালপুর, বাগাতিপাড়া এবং নলডাঙ্গা উপজেলায়ও। 

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০১০-১১ মৌসুমে নাটোর জেলায় মোট আবাদি জমি ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৩৮ হেক্টর। এ বছর তা কমে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৭১৭ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। এসব আবাদি জমিতেই পুকুর খনন করা হয়েছে। সাময়িক বেশি লাভের আশায় কৃষকরা ফসল উৎপাদন না করে মাছ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। 

নাটোর জেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তিন কিংবা চার ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। এক ফসলি বা অনাবাদি জমিতে পুকুর করে মাছ চাষের বিষয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তিন কিংবা চার ফসলি জমিতে পুকুর খননে নিবৃত্ত করতে চাষিদের পরামর্শ দিয়ে আসছে মৎস্য বিভাগ।

পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালে ঢাকার লইয়ারস সোসাইটি ফর ল নামের মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠনের পক্ষে এর মহাসচিব মেজবাহুল ইসলাম আতিক নাটোরের পাঁচ উপজেলা-নাটোর সদর, নলডাঙ্গা, সিংড়া, বাগাতিপাড়া ও গুরুদাসপুরে আবাদি জমিতে জনস্বার্থে পুকুর খনন বন্ধের আদেশ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন। 

শুনানি শেষে বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মাদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই বছরের ১২ মে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, নাটোরের জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, সংশ্লিষ্ট পাঁচটি উপজেলায় কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে তদারকি ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন। তবু বন্ধ হয়নি আবাদি জমিতে পুকুর খনন।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close