ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

তামাক গিলে খাচ্ছে নাইক্ষ্যংছড়ির ফসলি জমি, হুমকিতে পরিবেশ
প্রকাশ: শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১:৩৪ পিএম আপডেট: ০৫.০৪.২০২৪ ১:৩৯ পিএম  (ভিজিট : ৫২৩)
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিষাক্ত তামাক চাষ, বাদ যায়নি ফসলি জমি ও ছড়া,খাল। ফসলি জমিতে ধান, খাল ও চড়ার পাশে সবজি চাষ বাদ দিয়ে এখন প্রায় চাষিরা ঝুকছে তামাক চাষে। এতে পুড়ছে পাহাড়ের কাঠ। কৃষকেরা বেশি লাভের আশায় তামাক কোম্পানিগুলোর প্রলোভনে পড়ে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে তামাক চাষে জড়িয়ে পড়েন কৃষকেরা। নাইক্ষ্যংছড়ি বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো অফিসের আওতায়, নাইক্ষ্যংছড়ি, রামু,ঈদগাহ মিলে এই বৎসর তামাক চাষ হয়েছে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের আশারতলী, জাংছড়ি, বাইশারী, ঘুমধুম, সোনাইছড়ি ও দুর্গম দৌছড়ি ইউনিয়নে পরিবেশ আইন কে বৃদ্ধা আঙ্গুলী দেখিয়ে ঝিরি খাল দখল করে করা হয়েছে তামাক চাষ।

অপরদিকে রামুর রাজারকুল, খুনিয়া পালং, কাউয়ারখোপ, মনিরঝিল, মৈষকুম, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়ার নাপিতেরচর ও ফাক্রিকাটা সহ বিভিন্ন এলাকায়। এমনকি ঐতিহাসিক বাঁকখালী নদীর দুই তীরে রক্ষা পাইনি তামাক ক্ষেত থেকে। এছাড়া ফসলি ক্ষেতে এবং পাহাড়ি এলাকায় চাষ বেড়েছে তামাকের। নদীর তীরবর্তী চাষীদের ফলন নির্ভর করে পানি সেচের উপর। সেক্ষেত্রে বাকঁখালী নদী কৃষকদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু তামাক চাষে ব্যবহৃত অতিমাত্রার সার-কীটনাশক ও তামাকের রাসায়নিক উপাদান ক্রমেই নদী ও জলাশয়ের পানিতে মিশে পানিদূষণ করছে। বর্তমানে যা অনিরাপদ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ডিম পাড়ার পরিস্থিতিতে কীটনাশকযুক্ত পানির কারণে মাছ বংশ বিস্তারের অনুকুল পরিবেশ হারাচ্ছে। পরিবেশ বাদিদের মতে,বর্ষা মৌসুমে ঢলের পানিতে  নদীর দুকূল উপচে পলি জমে। আর সেই উর্বর জমির বেশির ভাগই এখন তামাকের দখলে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের কৃষক আলী হোসেন বলেন, আমরা অতি লাভের আশায় তামাক চাষ করলেও ভবিষ্যৎ পরিবারের জীবন ঝুকিতে। তার পরেও অধিকাংশ কৃষক লাভের আশায় ফসলের পরিবর্তে তামাক চাষ করতে বেশি আগ্রহী হয়েছেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, এই তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবে ভূমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। তামাক চাষকৃত জমিতে অন্য ফসল সহজে হয়না। ফসলের জন্যে হুমকিস্বরূপ এই বিষাক্ত তামাক। বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক রোপন থেকে শুরু করে পাতা কাটা এবং শুকানো পর্যন্ত এর সকল প্রক্রিয়াতে রয়েছে বিষাক্ত উপাদান। কৃষকরা ভয়াল এ বিষ সম্পর্কে জানার পরেও বাড়তি লাভের আশায় তামাক চাষে ঝুঁকছে। এসব কাজে শ্রম আইন লঙ্ঘন করে কোমলমতি শিশু ও নারীদের ব্যবহার করছে। ফলে বাড়ছে ক্যানসারসহ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর কর্মকর্তা এজেড এম সেলিম বলেন, অতিরিক্ত শ্রম ও বিষাক্ত তামাকের ঘ্রাণে বিশেষ করে প্রসূতি মহিলা ও শিশুদের ঝুঁকি বাড়ে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট সহায়তা চাই সচেতন মহল।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলার সহ-সভাপতি মো. নেজাম উদ্দিন জানান, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি জেনেও কৃষকেরা তামাক কোম্পানিগুলোর ঋণসহায়তা ও লোভনীয় প্রলোভনে তামাক চাষ ছাড়তে পারছে না। দিন দিন তামাক চাষের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। তামাকে অতিরিক্ত কীটনাশক ও সার প্রয়োগের ফলে নদীদূষণ বেড়েছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। পাশাপাশি তামাক পোড়ানোর জন্য সংরক্ষিত বন ও ভিটেবাড়ির গাছ কেটে উজাড় করা হচ্ছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি মৌসুমে শুধু নাইক্ষ্যংছড়ি এ-ই অফিসের মাধ্যমে হাজার হেক্টর তামাক পুড়তে প্রয়োজন হয় প্রায় আড়াই থেকে তিন লক্ষ ঘন ফুট কাঠ। প্রতি মৌসুমে কত ঘন ফুট কাঠ পুড়ানো হয়, এর বৈধতা কি জানতে চাইলে

নাইক্ষ্যংছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা নঈমুল ইসলাম জানান, কতো ঘনফুট কাঠ পুড়ানো হয় তাহা সঠিক জানা নেই। তবে নাইক্ষ্যংছড়ির চেয়ে পাশ্ববর্তী গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়ায় বেশি কাঠ পুড়ছে। এসব কাঠ গুলো নাইক্ষ্যংছড়ির ডিপো থেকে যায় এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, কিছু কাঠ বাড়ি ঘরের হলেও অধিকাংশ পাহাড়ের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রশাসককে ফাঁকি দিয়ে এ-সব তামাক চুল্লীতে বিক্রি করছে।


সময়ের আলো/এএ/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close