ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ভাঙছে বেড়িবাঁধ, আতঙ্কে মেঘনাতীরের মানুষ
ইজারার শর্ত ভেঙে বালু উত্তোলন
প্রকাশ: শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৪, ৩:৪৪ এএম  (ভিজিট : ৬৯২)
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার মেঘনা নদীতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধ। ইজারার শর্ত অনুযায়ী ২০টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার কথা থাকলেও সেখানে শতাধিক ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় বেড়িবাঁধের ৫০ ফুট অংশে হঠাৎ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোর মানুষজন।

এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, বালুমহাল এলাকায় শর্তের বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। আগেও সীমানার বাইরে ড্রেজার মেশিন পাওয়া যাওয়ায় ইজারাদারের ৯ জন লোককে জেল-জরিমানা করেছি। পরে আবার এই বালু মহালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২০টির বেশি ড্রেজার পাওয়ায় ইজারাদারের প্রতিনিধিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। এ ছাড়া চরমানিকনগর থেকে মাটি কাটার সময় তিনজনকে আটক করে তাদের প্রত্যেককে ছয় মাসের জেল দেওয়া হয়েছে। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ইজারাদার শাহাদাত হোসেন বলেন, বালু উত্তোলনে আমরা সচেতন আছি। নিয়মবহির্ভূত কোনো কাজ করা হচ্ছে না। ড্রেজারের সংখ্যার সত্যতা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, সর্বোচ্চ ২০টি ড্রেজার কথাটা সত্যি নয়। মৌখিকভাবে ৩০-৩৫টি ড্রেজার চালানোর কথা রয়েছে। তবে ইজারায় সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। বালুমহালের কেয়ারটেকার ছাদেক মিয়া বলেন, সম্প্রতি হঠাৎ বেড়িবাঁধের কিছু অংশ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর বালু মহালের পক্ষ থেকে ৬৫ ট্রলি কংক্রিট দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো নদীগর্ভে বিলীন হওয়া থেকে রক্ষায় ২০১৮ সালে সোনাবালুয়া ঘাট থেকে এমপি টিলা পর্যন্ত ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে পাউবো। মেঘনার জাফরাবাদ মৌজার নতুনচর এলাকায় ৩২ একর দীর্ঘ একটি সুনির্দিষ্ট সীমানায় বালুমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। গত বছর ছয় মাসের জন্য ৯ কোটি টাকায় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শোভনের মালিকানাধীন মুন্সি এন্টারপ্রাইজ এ বালুমহালের ইজারা পায়। মাত্র ছয় মাসেই বালুমহালটির ইজারামূল্য ৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এক লাফে ৫৬ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নবীনগরের জাফরাবাদ মৌজায় অবস্থিত মেঘনা নদীর এই বালুমহালের দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার। পরদিন বুধবার দুপুরের পর দরপত্র বাক্স খোলা হলে সাতটি দরপত্র পাওয়া যায়। পরে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে বার্ষিক ৫৬ কোটি টাকায় বালুমহালটির ইজারা পায় মুন্সি এন্টারপ্রাইজ। জমা পড়া সাতটি দরপত্রের মধ্যে ৫১ কোটি টাকায় দ্বিতীয় দরদাতা এবং ৪৮ কোটি টাকায় তৃতীয় দরদাতা হিসেবে আরও দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায়। 

এদিকে ইজারার শর্ত ভঙ্গ ও সীমানা অতিক্রম করে দিনে ও রাতে নির্বিচারে বালু উত্তোলন করছেন মুন্সী এন্টারপ্রাইজ। এতে করে নদীর তীরবর্তী সোনাবালুয়া ঘাট, এমপি টিলা, নুরজাহানপুর, ঈদগা মাঠ ও কবরস্থানসহ নদী পাড়ের গ্রামগুলো নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নবীনগর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য অধ্যাপক নুরুন্নাহার বেগম বলেন, এই বালুমহাল এখন একটি মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের নিয়মনীতি ভঙ্গ করে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো ভাঙনের কবলে পড়তে পারে। এতে করে আবাদি জমি, বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হতে পারে তীরবর্তী গ্রামের মানুষগুলো যার একটি আলামত বেড়িবাঁধ ভাঙন। 

বড়িকান্দি ইউনিয়নের মুক্তারামপুর গ্রামের হুমায়ুন মিয়া বলেন, সীমানার বাইরে এসে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়েছে। তারাই ভাঙে আবার তারাই ভরে। প্রশাসনের লোকদের ম্যানেজ করে তারা বালু উত্তোলন করে। এভাবে চলতে থাকলে নদীর পাড়ের গ্রামগুলো বিলীন হয়ে যাবে।

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close