ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়া জটিল
প্রকাশ: শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪, ৮:২১ পিএম  (ভিজিট : ৫৭০)
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত ভুল আছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় যে কয়টি ব্যাংক দেয়া হয়েছে সবক’টি ব্যাংকই দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। এসব ব্যাংকের মালিকদের উদ্দেশ্যই ছিল অর্থ আত্মসাৎ করা। দেশের আর্থিক খাতের বিদ্যমান অস্থিরতার দায় বাংলাদেশ ব্যাংক এড়াতে পারে না। ব্যাংক এখন পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। 

রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতিই ব্যাংকিং সেক্টরে সুশাসনের পথে বড় বাধা। রাজনীতিবিদই ব্যাবসায়ী, মিডিয়া হাউজের মালিক, ব্যাংকেরও মালিক, ফলে দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়ে সুশাসনের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। ব্যাংক একীভূতকরণের মাধ্যমে সংকট নিরসণের যে প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে তা ইতিবাচক হলেও প্রক্রিয়াটি জটিল। 

ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে আর্থিক তছরুপকারী দুর্বল ব্যাংকের মালিকরা যাতে পার না পেয়ে যায় তা খেয়াল রাখতে হবে। ঋণখেলাপী ও টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান শাস্তির ব্যবস্থা করা হলে এ ধরণের অপরাধ কমে আসবে। 

দুর্বল ব্যাংকের সংকট কাটাতে যেয়ে সবল ব্যাংক যেন দুর্বল ব্যাংকে পরিণত না হয় সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। তবে ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়া জটিল। পৃথিবীর অনেক দেশে ঋণখেলাপীদের সামাজিকভাবে বর্জন করা হয়। তারা ব্যবসা বাণিজ্য, বাড়িভাড়া এমনকি পেট্রোল পাম্পে তেলও নিতে পারেনা। অথচ আমাদের দেশে ঋণখেলাপী ও অর্থ পাচারকারীরা এয়ারপোর্টে ভিআইপি হিসেবে যাতায়াত করে।

আজ শনিবার ঢাকার এফডিসিতে ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। 

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দেশের উন্নয়ন নিয়ে আমরা গর্ব করলেও আর্থিক খাতের অনিয়ম নিয়ে কথা বলতে লজ্জা বোধ হয়, মাথা হেইট হয়ে আসে। ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের সংস্কৃতি আমাদের জন্য একটা বড় কালো দাগ। ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম ভয়াবহ ক্যান্সারের রূপ নিচ্ছে। একের পর এক ঋণ কেলেঙ্কারি, অর্থ আত্মসাৎ, রিজার্ভ চুরি, বেসিক ব্যাংকের জালিয়াতি, ফারমার্স ব্যাংকের পতন, পিপলস লিজিং এর অবসায়ন, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, ডেসটিনির জালিয়াতি, পুঁজি বাজারের কারসাজি, শেয়ার মার্কেট লুট ইত্যাদি কলঙ্কিত ঘটনা আর্থিক খাতকে ব্যাপক দুর্বল করে ফেলেছে। ব্যাংক খাত আজ তছনছ হয়ে যাচ্ছে। সোনালী ব্যাংক লুট হয়েছে। জনতা ব্যাংক লুট হয়েছে। 

বেসিক ব্যাংক ধ্বংস হয়েছে। পদ্মা ব্যাংক কলঙ্কের ইতিহাস রচনা করেছে। এই বেসামাল পরিস্থিতি উত্তরণে বাংলাদেশ ব্যাংক সবল ব্যাংকের সাথে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূতকরণ কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে ব্যাংক একীভূতকরণের মাধ্যমে আর্থিক খাতের সুশাসন নিশ্চিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা খুবই জরুরি। 

কতিপয় রাজনৈতিক চক্র, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী যাতে আর আর্থিক খাতে অনিয়ম করতে না পারে তার জন্য সরকারকে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। 

সম্প্রতি পদ্মা ব্যাংক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়েছে। একীভূত হওয়ার পর রেড জোনে থাকা পদ্মা ব্যাংকের গ্রাহকদের নগদ অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে এক্সিম ব্যাংকের আমানতকারীদের মধ্যেও টেনশন তৈরি হয়েছে।  খেয়াল রাখতে হবে পদ্মা ব্যাংকের ভাইরাস যাতে এক্সিম ব্যাংকে সংক্রমিত না হয়। একই সাথে এক্সিম ব্যাংককেও নিজেদের কোনো অনিয়ম থাকলে দ্রুত তা সমাধান করা উচিত। তা না হলে এক্সিম ব্যাংকও পদ্মায় ডুবে যেতে পারে। মনে করা হয় ফারমার্স ব্যাংকে বাঁচতে দিয়ে পদ্মা ব্যাংক হতে দেওয়াটা ছিল বড় ভুল। ফারমার্স ব্যাংকটিকে বন্ধ করে দিলে হয়তো এত বড় আর্থিক ক্ষতি কিছুটা হলেও কম হতো। কিসের ভিত্তিতে ব্যাংক একীভূত করা হচ্ছে, দুর্বল ব্যাংকের দায়-দেনা কে পরিমাপ করবে, দুর্বল ব্যাংকের ক্ষতির দায় কে নেবে, ভালো ব্যাংকটি খারাপ অবস্থায় পড়বে কি না, একীভূত ব্যাংক দুইটি কীভাবে পরিচালিত হবে এগুলো এখন বড় প্রশ্ন ?  

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “ব্যাংক একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতে সুশাসন জোরদার করবে” শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রস্তাবের পক্ষে প্রাইম ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি এর বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। 

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, সাংবাদিক ইকবাল আহসান এবং সাংবাদিক সেলিম মালিক। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।  

সময়ের আলো/এম 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close