ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ব্যবসায় টানা লোকসান
আদমদীঘিতে বন্ধ ২৩৩টি চালকল
প্রকাশ: শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪, ১:৩৮ এএম আপডেট: ৩০.০৩.২০২৪ ৫:২৭ এএম  (ভিজিট : ৩৯২)
টানা লোকসানে ব্যবসার মূলধন হারিয়ে আদমদীঘিতে ২৩৩টি চালকল বন্ধ হয়ে গেছে। শস্যভান্ডার খ্যাত বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় প্রচুর ধান উৎপাদিত হয়। এ কারণে নব্বইয়ের দশকের পর থেকে এ উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠে অনেক চালকল। অনেকে ফসলের জমিতেই চালকল স্থাপন করে ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম প্রথম ব্যবসায় ভালো মুনাফা হয়।

২০০৪ সালে এই উপজেলায় স্বয়ংক্রিয় চালকল চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত সাধারণ চালকলের ব্যবসা লাভজনক ছিল। কিন্তু ধান সেদ্ধ ও শুকানো ছাড়াই স্বয়ংক্রিয় চালকলে সরাসরি কাঁচা ধান থেকে দ্রুত চাল বের হয়। এতে স্বয়ংক্রিয় চালকলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে লোকসান ও ব্যাংক ঋণের চাপে পড়ে একের পর এক সাধারণ চালকল বন্ধ হতে থাকে। টানা লোকসানে ব্যবসার মূলধন হারানোয় উপজেলায় ২৩৩টি চালকল (হাসকিং মিল) বন্ধ হয়ে গেছে। চালকলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় সাত হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। আদমদীঘি উপজেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বড় খাদ্যগুদামগুলো রয়েছে সান্তাহার উপজেলায়। 

সেখানে সিএসডি, এলএসডি ও সাইলো রয়েছে। উপজেলায় ২৯৮টি চালকল ছিল। এর মধ্যে সাধারণ চালকল ২৮৪টি এবং স্বয়ংক্রিয় চালকল ১৪টি। চুক্তি ভঙ্গ করায় এর মধ্যে ৫২টি সাধারণ চালকল এবং ৩টি স্বয়ংক্রিয় চালকলের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। বর্তমানে ১১টি স্বয়ংক্রিয় ও ৫৪টি সাধারণ চালকল চালু রয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৭০০ মেট্রিকটন। সংগৃহীত চালের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার মেট্রিকটন সরবরাহ করেছে স্বয়ংক্রিয় চালকল, বাকি ৭০০ মেট্রিকটন সরবরাহ করেছে সাধারণ চালকল।

সান্তাহার শহরের মুসফিক চালকলের মালিক মতিয়ুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, তার একটি সাধারণ চালকলে ১৫ দিনে ধান ছাঁটাইয়ের ক্ষমতা ১৫৪ মেট্রিকটন। প্রতিদিন ধানের প্রয়োজন হয় ১৪০ বস্তা (প্রতি বস্তা ৭৫ কেজি)। কিন্তু শহরের বৈশাখী নামের স্বয়ংক্রিয় চালকলে ১৫ দিনে ৩টি ইউনিটের ছাঁটাইয়ের ক্ষমতা ৪৮ হাজার মেট্রিকটন। প্রতিদিন এই চালকলে ধানের প্রয়োজন হয় ৩ হাজার মেট্রিকটনেরও বেশি। উৎপাদন ক্ষমতার বিশাল ব্যবধান হওয়ায় এবং লাভ কম হওয়ায় সাধারণ চালকলগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

সাধারণ চালকলের মালিক হেলালুর রহমান বলেন, বিভিন্ন কারণে স্বয়ংক্রিয় চালকল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা টিকতে পারছি না। অন্যতম কারণ হলো ধান থেকে চাল উৎপাদনের আনুপাতিক হার। সাধারণ চালকলে প্রতি মণে ধান থেকে চাল উৎপন্ন হয় ২৫ কেজি, অথচ স্বয়ংক্রিয় চালকলে প্রতি মণে উৎপন্ন হয় প্রায় ২৮ কেজি। এ ছাড়া স্বয়ংক্রিয় চালকলের মালিকরা স্বল্প সুদে ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ পাওয়ায় ধান কাটার পরপরই বেশি করে ধান কিনে রাখতে পারেন, যেটি সাধারণ চালকলের মালিকরা পারেন না।

চাল ব্যবসায়ী আবদুল মতিন বলেন, বর্তমানে বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় চাল তৈরি করে লাভ হয় না। প্রতি মণ ধান কেনাসহ উৎপাদন খরচ পড়ে প্রায় ২ হাজার ৪০০ টাকা। কিন্তু চাল বিক্রি হয় ২ হাজার ২৫০ টাকায়। প্রতি মণে লোকসান হয় দেড় থেকে দুইশ টাকা।

তিনি আরও বলেন, দুইশর বেশি চালকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে গেছেন। এসব শ্রমিক বর্তমানে বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

মতি চালকলের নারী শ্রমিক রেহেনা বেগম, মর্জিনা বেগম এবং আনিসুর ইসলামসহ কয়েকজন বলেন, চালকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা বর্তমানে একেবারে বেকার। পরিবারের সদস্যরা এক বেলা খেয়ে দুই বেলা না খেয়ে দিন পার করছে। কেউ কেউ এ পেশা ছেড়ে বিকল্প পেশায় চলে যাচ্ছে।

আদমদীঘি উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা কেএম গোলাম রাব্বানী বলেন, স্বয়ংক্রিয় চালকলের সংখ্যা বৃদ্ধি, ধানের দাম বেড়ে যাওয়া ও মূলধন হারানোসহ বিভিন্ন কারণে সাধারণ চালকল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close