ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ, ২২ বছর পরে গ্রেফতার
প্রকাশ: বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪, ১১:১৩ পিএম  (ভিজিট : ৪১২)
দিনাজপুর জেলার খানসামায় ২২ বছর আগে 'প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ' নামে একটি এনজিও'র সুপার ভাইজার পদে চাকরি করতেন তসলিম উদ্দিন। তখন তার বয়স ছিলো ৩০ বছর। এনজিও'র আওতায় একটি স্কুলের শিক্ষক হিসেবে চাকরি করতেন এক নারী। ওই নারীকে বিয়ের প্রলোভনে শারিরীক সম্পর্ক গড়ে তোলেন তসলিম। এক পর্যায়ে ওই নারী ৫ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়েন। বিয়ের চাপ দেওয়ায় নারীরজোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটান। সেই ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ওই মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যায়। অবশেষে ২২ বছর র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হলেন তসলিম। র‍্যাব বলছে- গ্রেফতার এড়াতে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুরে ও নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ছদ্মবেশে আত্মগোপনে ছিলেন এই সাজা প্রাপ্ত এই আসামি।

বুধবার (২৭ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে র‍্যাব-৩ এর প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দিনাজপুর জেলার খানসামা এলাকায় এক শিক্ষিকাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে গর্ভপাত ঘটানোর মামালায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি তরমুজ ব্যবসার আড়ালে আত্মগোপণে ছিলেন। দীর্ঘ ২২ বছর পর তাকে নারায়ণগঞ্জ জেলার ভুলতা গাউসিয়া ফলপট্টি থেকে গ্রেফতার করা হয়।

আসামির বরাত দিয়ে আরিফ মহিউদ্দিন জানান, তসলিম উদ্দিন ২০০০ সালে দিনাজপুর জেলার খানসামা থানার খামারপাড়া ইউনিয়নে ‘প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজিওর ফিল্ড সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ইউনিয়নের সাতটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১৪ জন শিক্ষকের সুপারভাইজার ছিলেন। ১৪ জনের মধ্যে একজন বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এনজিও থেকে নিয়োগ পান এক শিক্ষিকা। কাজের সূত্রে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিয়মিত কর্মসূচীর অংশ হিসাবে তসলিম উদ্দিন ওই শিক্ষিকাকে নিয়ে শিশুদের বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলতেন। নিয়মিত যোগাযোগের ফলে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গ্রেফতার তসলিম বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক। তবে এই তথ্য ওই শিক্ষিকার কাছে গোপন করেন তিনি। শিক্ষিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জেরে তাকে নানাভাবে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন। ফলে ভুক্তভোগী শিক্ষিকা গর্ভবতী হয়ে পড়েন। বিষয়টি তসলিমকে জানিয়ে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। তখন তসলিম নিজেকে বিবাহিত দাবী করে কৌশলে সন্তান গর্ভপাত করায়।

র‌্যাব-৩ অধিনায়ক আরও জানান, ভুক্তভোগী শিক্ষিকা মানসম্মান ও গর্ভের সন্তান হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। এমনকি তখন তিনি আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। পরবর্তীতে আসামি তসলিম চাকরি ছেড়ে ঢাকায় একটি ঔষধ কোম্পানির ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কাজ শুরু করে। ফলে ভুক্তভোগীর পরিবার বাধ্য হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও ভ্রুণ নষ্ট করার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে। মামলাটির দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৩ সালে দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল তসলিমকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন।

এরপর থেকে ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করতে থাকে। প্রথম দুই বছর একটি ঔষধ কোম্পানির ডেলিভারি ম্যান, এরপর তিন বছর সিলেটে একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। মামলার রায় হওয়ার পর গাজীপুরে কখনো ভ্যান চালিয়ে, কখনো মাটিকাটা শ্রমিকের কাজ করে, কখনো এনজিওর মাঠ কর্মী হিসেবে ছদ্মবেশে কাজ করে আসছিলো। এনজিওর মাঠকর্মী থাকাকালীন সময়ে গাজীপুরের শ্রীপুর এবং কাশিমপুর এলাকার বিভিন্ন গ্রাহকের প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় আত্মগোপন করে। সর্বশেষ গাউছিয়া বাজারে ফলপট্টিতে একটি ফলের আড়তের তরমুজ ব্যবসা শুরু করে।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close