ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

মুরগি ও মাছ চাষে বাজিমাত কলেজছাত্র অভির
প্রকাশ: সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০২৪, ৩:৫৬ পিএম  (ভিজিট : ১৮১৮)
ছোট বেলা থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবল ইচ্ছা জাগে মনে অভির। বাবা একজন সফল রাজনীতিবিদ। কিন্তু বাবার স্বপ্ন ছেলে লেখাপড়ার পাশাপাশি রাজনীতি করুক। কিন্তু ছেলে পড়ালেখার পাশাপাশি আত্মকর্মশীল হতে বিভোর। যেই ইচ্ছে সেই কর্ম। ধীরে ধীরে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে চলছে অভির। পড়াশোনার পাশাপাশি মুরগি পালন করে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছেন। তাকে দেখে প্রতিবেশী বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনরাও পরামর্শ নিয়ে মুরগি পালন কিংবা অন্য কোনো ব্যবসা করে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করছেন।

গল্পটি হোসেনপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির (২০২৩-২০২৪) শিক্ষা বর্ষের ছাত্র সাদমান হাসান অভির। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার পুমদি ইউনিয়নের নান্দানিয়া এলাকায়। তার বাবা জহিরুল ইসলাম মানিক। তিনি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। এখন বয়োবৃদ্ধ হওয়ায় কাজকর্ম করতে পারেন না।

ছাত্র অভি নবম শ্রেণি থেকেই শুরু করেন মুরগি খামার। বর্তমানে তিনি মাঝারি আকারের একটি খামার গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে সেখানে প্রায় তিন হাজার মুরগি রয়েছে। পাশাপাশি ৬০ শতক করে ২টি জায়গায় মাছের খামার রয়েছে। সেই পুকুরে বাংলা দেশীয় মাছ (রুই, কাতলা, মৃগেল, পুঁটি) চাষাবাদ করছে অভি। মাছ বিক্রি করে ভালো লাভবান হচ্ছে। এভাবে তিনি ছাত্র অবস্থায় সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থী অভি তার বাড়ির পাশে ব্যস্ত সময় পার করছেন নিজ হাতে গড়া খামারে। অভি জানান, তিনি তার বাবার মুরগি খামার দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

মুরগির স্বাভাবিক স্বাস্থ্য নিশ্চিতে কি ধরনের খাদ্য ব্যবহার করেন জানতে চাইলে তিনি জানান, মুরগির যত্নে রাসায়নিক মুক্ত সম্পূর্ণ দেশি ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি খাবার খামারে ব্যবহার করেন। স্টেরয়েড মুক্ত মুরগি পালন করেন বিধায় এলাকাবাসী অনেক সময় বেশি দাম দিয়েও নিয়ে যায়।

শুরু করার গল্প বলতে গিয়ে অভি বলেন, করোনাকালীন সময়ে বাসা থেকে বের হতে পারছিলাম না। স্কুল-কলেজও বন্ধ ছিল। সারাদিন বাসাতেই সময় কাটতো। বাবা আফতাব পোল্ট্রি খামার চালাতেন। কিন্তু বাবা অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় খামার বন্ধ হয়ে যায়। আমি তখন নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করি। সেই সময় নিজের উদ্যোগে স্বল্প মুরগি নিয়ে পোল্ট্রি শুরু করি। বর্তমানে মুরগি পালনের জন্য আলাদা জায়গায় খামার তৈরি করেছি। সেখানে প্রায় ৩ হাজার মুরগির বাচ্চা রয়েছে। দুই মাস পালন করার পরই সে বাচ্চা মুরগিতে পরিণত হবে এবং বিক্রয়যোগ্য হবে। বর্তমানে মাসে খরচ বাদে লাখ টাকার বেশি আয় হয়।

ইতোমধ্যে তার খামারে কর্মসংস্থান করছেন দৈনিক তিনজন লোক। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত করেছে তার প্রতিবেশী একাধিক বেকার যুবককে। তার পাশের মিনু মিয়ার রয়েছে পোল্ট্রি ও মৎস্য নামক খামার। তার ও রয়েছে মুরগি ও মাছের সমন্বিত চাষ। তবে বর্তমানে মাছ-মুরগির খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে আয় কমে গিয়েছে তার। শ্রমিকের বেতন ও বেড়েছে।

অভি আরো বলেন, সরকারিভাবে যদি কোনো সহযোগিতা পাই অথবা বিভিন্ন এনজিও থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পাই তাহলে সব কিছু পুষিয়ে আরো লাভবান হতে পারব। খামারের ও পরিধি বৃদ্ধি করবেন বলেও জানান তিনি।

অভির শিক্ষক আরিফুল হক বলেন, অভি অত্যন্ত মেধাবী ও কর্মঠ। অভি পড়াশোনার পাশাপাশি সফল উদ্যোক্তা হতে চলছে। এদেশের জন্য উদ্যোক্তা বড় প্রয়োজন। তাই অভির এই কর্মকাণ্ডকে আমি সাধুবাদ জানাই।

অভির বাবা জহিরুল ইসলাম মানিক বলেন, আমার ছেলে পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু একটা করতে চেয়েছে, আমি না করিনি। আমি তাকে সমর্থন দিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি যদি সে এভাবে ধরে রাখতে পারে তাহলে একদিন বড় উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। তখন সবাই তাকে নিয়ে গর্ব করবে।

হোসেনপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উজ্জ্বল হোসাইন বলেন, এটা খুবই ভালো একটা দিক। পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু একটা করছে। সে নিজেকে নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলছে। আমি তাকে স্বাগত জানাই। তাকে দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবে।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  মুরগি-মাছ চাষ   কলেজছাত্র সফল উদ্যোক্তা   কিশোরগঞ্জ   




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close