ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

মাত্রাতিরিক্ত নৌকা ভাড়া ও ইজারা
দুর্ভোগে পদ্মাপারের মানুষ
চরাঞ্চলবাসীকে জিম্মি করে অতিরিক্ত টোল আদায়
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৮:২৪ এএম  (ভিজিট : ৩৬৪)
বহু নদনদীবেষ্টিত বাংলাদেশের একটি বড় অংশ চরভূমি বা চরাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। দেশের দুর্গম বিভিন্ন চরাঞ্চল বরাবরই উন্নয়নবঞ্চিত। অবহেলা, উপেক্ষা ও বঞ্চনার মাত্রাও এখানে বেশি। চরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। সব মিলিয়ে ৫০-৬০ লাখ মানুষের বসবাস চর এলাকায়। ভৌগোলিক বিচার-বিশ্লেষণে চরাঞ্চল বাংলাদেশের উচ্চমাত্রার দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। তীব্র নদীভাঙন, বন্যা, খরাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বেকারত্ব মোকাবিলা করেই বছরের প্রায় পুরোটা সময় ধরে চরের মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়। তার ওপর চরের মানুষকে জিম্মি করে অতিরিক্ত টোল আদায় যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। অতিরিক্ত নৌকা ভাড়ার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলবাসীরা। দীর্ঘদিনের এই ভোগান্তির কোনো সমাধান হচ্ছে না। 

এমনিতেই পদ্মার ভাঙনে দিশাহারা চরাঞ্চলের মানুষ, তার ওপর আবার নৌকায় যাতায়াতে জিম্মি করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বিষয়টি সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা। জেলার সদর উপজেলার জোহরপুর, নারায়ণপুর ও বাখের আলী ঘাট এবং শিবগঞ্জ উপজেলার কদমতলী, বোগলাউড়ি ও মনোহরপুর ঘাট দিয়ে চরাঞ্চল এলাকার মানুষ নৌকায় চলাফেরা করেন। উপজেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া নির্দেশনা মানেন না ইজারাদাররা। 
স্থানীয়রা জানান, পদ্মা নদীর ওপার থেকে বাড়ি ভেঙে এপারে নিয়ে এলে গুনতে হয় ১০-১৫ হাজার টাকা। অবিলম্বে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত টোল নেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত টোল আদায়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি পদ্মাপারের বাসিন্দাদের।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ পেলে সদর এবং শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে বলব। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। কেউ নিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জনগণের যাতে কোনো রকমের ভোগান্তি না হয় তা নিশ্চিত করা হবে।

পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মালেক বলেন, আগে ২৯টি ক্যাটাগরিতে টোল আদায় করা হতো। আগামী ১৪৩১ বঙ্গাব্দ থেকে ১১৩ ক্যাটাগরির ভিত্তিতে টোল আদায় করা হবে। ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশে উজিরপুর, পাঁকা ও দুর্লভপুর ইউনিয়নের তিন চেয়ারম্যান বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে যেখানে শুকনো থাকবে সেখানে টোল আদায় করা যাবে না। যেখানে পানি থাকবে সেখানে নির্ধারিত টোল আদায় করা যাবে।

নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, এক বছর আগে স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অভিযোগ দিলে তিনি ঘাটে তালিকা টাঙানোর নির্দেশ দেন। তারপর থেকে তালিকা টাঙানো হয়েছে। তখন থেকে আর কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। এই মুহূর্তে টোল বেশি নেওয়ার অভিযোগ কেউ এখনও করেনি। করলে আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নিব।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ঘাট ইজারাদার রিপন আলী বলেন, উপজেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া রেটেই আমরা টোল আদায় করছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টোল আদায়কারী বলেন, বেশি টোল আদায় না করলে চলব কেমন করে? এখন জিনিসপত্রের দাম অনেক। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে চাঁদা দিতে হয়। এসব কারণে বেশি টোল আদায় করা হয়।

সরেজমিনে কথা হয় স্থানীয় কৃষক দুলালের সঙ্গে। তিনি জানান, ১২ বিঘা জমিতে ধান, গম, কলাই, কলাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছেন। উৎপাদিত ফসল বিক্রির জন্য বাজারে নিতে নৌকার ভাড়ায় খরচ বাড়ে দ্বিগুণ। তিনি বলেন, ধান কিংবা গমের বস্তা নৌকায় পার করলে দিতে হয় ৫০-৫৫ টাকা। প্রতিটি কলার কাঁদি বিশ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও ঘাটের লোকজন ৪০-৪৫ টাকা করে নিচ্ছে। মাসুম নামের আরেক পদ্মাপারের বাসিন্দা বলেন, নৌকায় গরু পারাপারে উপজেলা প্রশাসন ৫০০ টাকা টোল নির্ধারণ করলেও ঘাটের মালিক নেন ৬০০ টাকা। বিভিন্ন ধরনের আটা, ভুসি, খৈল, সারের বস্তার ভাড়া নেয় ৪৫-৫০ টাকা। প্রতিবাদ করতে গেলে ঘাটের লোকজন আমাদের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন। 

তোজাম্মেল নামে এক ঘাট ব্যবহারকারী বলেন, চলতি সপ্তাহে ২৫ কেজি ওজনের একটি লোহার জানালা পারাপার করতে নৌকা ভাড়া নিয়েছে ২৫০ টাকা। ঘাটের ইজারাদাররা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া ভাড়ায় নৌকা চালাতে বললেও শোনে না। তাদের ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না কেউ। কাজের তাগিদে বাধ্য হয়ে শহরমুখী হতে হয়। 

নৌকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। যার ফলে বহু লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। ২০২১ সালে ৪ জন নিহত ও ৮ জন নিখোঁজ হন। ২০২৩ সালে একজন মারা যান ও তিনজন নিখোঁজ হন। এছাড়া আরও বহু ঘটনার সাক্ষী এই অঞ্চলের বাসিন্দারা।

দশরশিয়া বাজারের মুদি দোকানদার মিজানুর রহমান বলেন, বোগলাউড়ি ঘাট থেকে দশরশিয়া বাজারে নৌকায় মালামাল আনতে দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হয়। ১৫ কেজি ফলে ৬০ টাকা, ১টি ডাবে ৪ টাকা, ১০০ লিটারের তেলের ব্যারেলে ১৫০ টাকা, খেজুরের কার্টনে ১০০ টাকা, বিস্কুটের কার্টনে ২০০ টাকা, আটা ও চালের বস্তায় ৪৫ টাকা, মোটরসাইকেলসহ একজন যাত্রীকে ১২০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব ঘাটে পারাপারের সময় বিশ কেজির কার্টনে ৬০০ টাকা, সিমেন্টের বস্তায় ৫০ টাকা, ওষুধের কার্টনে ৮০-১০০ টাকা দিতে হয় ঘাটের ইজারাদারকে।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close