পবিত্র রমজান মাস মহান আল্লাহর এক বিশাল নেয়ামত। আমরা কি রমজানের হাকিকত ও এর মাহাত্ম্য হৃদয়ে ধারণ করতে পারছি? পবিত্র এ মাসের পবিত্রতা আমরা কতটুকু রক্ষা করতে পারছি? ইবাদত-বন্দেগির এ বসন্ত মাসেও যদি আমরা দিবানিশি দুনিয়ার ব্যস্ততায় ডুবে থাকি, তা হলে এ মাসের গুরুত্ব কোথায় রইল? রমজানের মাহাত্ম্য, এর গুরুত্ব, ফজিলত ও মর্তবা তাদের কাছেই রয়েছে, যারা এ মাসের বরকত সম্পর্কে অবগত। যারা জানে এ মাসটি খোদায়ি নূরে পরিপূর্ণ। এ মাসে আল্লাহর রহমতের প্লাবন বয়ে যায়, এ ধারণা যাদের আছে তারাই এ মাসের সম্মান করতে সক্ষম।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘হে আল্লাহ, রজব এবং শাবান মাসে আমাদের ওপর বরকত অবতীর্ণ করুন। আর আমাদের রমজানে পৌঁছিয়ে দিন’ (মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ২/১৬৫)। এই হাদিসের মর্ম হলো-আমাদের বয়স এতটুকু দীর্ঘ করে দিন, যেন রমজান মাসের সৌভাগ্য আমাদের অর্জিত হয়। এ থেকেই অনুমান করা যায়, দুই মাস পূর্ব থেকেই রমজানের জন্য অধীর অপেক্ষার পর্বটি শুরু হয়ে যায়। আর এই অপেক্ষার পর্বটি একমাত্র তাদের দ্বারাই হতে পারে, যারা এ মাসের মর্যাদা, এ মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত উপলব্ধি করেন।
আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির সৃষ্টিকর্তা। তাই তিনি জ্ঞাত ছিলেন মানুষ দুনিয়ার ধান্ধায় জড়িয়ে তাকে ভুলে যাবে। দুনিয়ার কর্মকাণ্ডে সে যত নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়বে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার একাগ্রতায় ততই দুর্বলতা আসবে। এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে একটি সুবর্ণ সুযোগ দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা দিলেন, প্রতি বছর আমি তোমাদের একটি মাস প্রদান করছি। ১১ মাস দুনিয়াদারি এবং অর্থকড়ির পেছনে ছুটাছুটি করার কারণে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে।
আন্তরিকতার সঙ্গে এই একটি মাস যদি তোমরা আমার কাছে প্রত্যাবর্তন কর, তা হলে ১১ মাসে যে আধ্যাত্মিক ঘাটতি তোমাদের হয়েছে, আমার নৈকট্য অর্জনের ক্ষেত্রে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, এই মহান ও পবিত্র মাসে তোমরা তা পূরণ করে নিতে পারবে। নিজের অন্তরের জং সাফ করে পবিত্র হয়ে যাও। আমার সঙ্গে দূরত্ব হ্রাস করে নৈকট্য অর্জন করে নাও। অন্তরে আমার স্মরণ ও জিকির বাড়িয়ে দাও। মহান রাব্বুল আলামিন এই উদ্দেশ্যেই মুসলিম উম্মাহর জন্য রমজানের বরকতময় মাস দান করেছেন। এই উদ্দেশ্যাবলি অর্জনে, আল্লাহর নৈকট্য হাসিল ও সান্নিধ্য অর্জনে রোজার ভূমিকা অপরিসীম। রোজা ছাড়া আর যেসব ইবাদত এই পবিত্র মাসে মুসলমানদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলোও আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য ও সান্নিধ্য অর্জনে বিরাট ভূমিকা রয়েছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্য একটিই, আর তা হলো-এই পুণ্যময় মাসে মানবজাতিকে নিজের কাছে টেনে নেওয়া।
মহান রাব্বুল আলামীন এজন্যই পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যে রূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জনে সক্ষম হও। অর্থাৎ পরহেজগারি অর্জন করতে পার’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)। ১১ মাস তোমরা যেসব কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে ছিলে সেসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তোমাদের তাকওয়ার বৈশিষ্ট্যে দুর্বলতা এসে গিয়েছিল। এবার রোজার মাধ্যমে তাকওয়ার সেসব বৈশিষ্ট্যকে সবল করে নাও। কথা এখানেই শেষ নয় বা এতটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় যে, রোজা রাখা হলো আর তারাবির নামাজ পড়া হলো, এতেই সবকিছু চুকে গেল। বরং পুরো রমজানটাকে এমনভাবে কাটানো যে, ১১ মাস আমরা জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য থেকে সরে ছিলাম, ইবাদত-বন্দেগি থেকে সম্পর্কহীন ছিলাম। এই দূরত্ব ও সম্পর্কহীনতাকে কাটাতে হবে। আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে হবে। তাঁর সান্নিধ্য লাভের প্রচেষ্টায় পুরো এই মাসটি কাটিয়ে দিতে হবে। এর পদ্ধতি এমন হতে পারে যে, পূর্ব থেকেই রমজান মাসটিকে দুনিয়াবি কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত করে নিতে হবে। কেননা, ১১ মাস তো দুনিয়ার ফিকিরেই অতিবাহিত হয়েছে। তাই এই মাসে দুনিয়ার কর্মকাণ্ড যতটুকু সংক্ষিপ্ত করা যায় তা করতে কার্পণ্য করা যাবে না। এ মাসটি হবে একজন মুসলমানের জন্য খালেস ইবাদতের মাস। আল্লাহর নৈকট্য ও সান্নিধ্য অর্জনের মাস।
শুধু উপবাস থাকাই রমজানের সাফল্যের শর্ত নয়, বরং উপবাসের সঙ্গে যাবতীয় পাপকাজ যেমন মিথ্যা কথা বলা, গিবত করা, চোগলখোরি, মুনাফাখোরি, কালোবাজারি, প্রতারণা ও প্রবঞ্চনার মতো ইসলামবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকার কঠোর অনুশীলন না করলে রমজানের সুফল পাওয়া যাবে না। পবিত্র রমজানের পবিত্রতা বজায় রেখে রমজানের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব উপলব্ধি করার জন্যে বিশ^-মুসলিমকে আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
সময়ের আলো/আরএস/