ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বদলে গেছে চেল্লাখালী নদীর প্রকৃতি, বুক জুড়ে সবুজের সমারোহ
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০২৪, ৩:৫৭ পিএম  (ভিজিট : ৭২৪)
ভারতের মেঘালয় সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের খরস্রোতা পাহাড়ি নদী চেল্লাখালী। গত কয়েক বছর ধরে নদীটির একটি অংশে ‘চেল্লাখালী বালু মহাল’ এবং অপরাংশে বুরুঙ্গা বালু মহাল’ নামে পৃথক বালু মহাল ইজারা দিয়ে আসছে জেলা প্রশাসন। বালু মহালকে ঘিরে যত্রতত্র অবৈধ উপায়ে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর নাব্যতা এখন গভীর সংকটে। তলদেশের বালু সরে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে মাটি। এছাড়াও নদী তীরবর্তী আশপাশের সমতল জমি থেকে উত্তোলিত বালুর পরিত্যক্ত অংশ নদীগর্ভে ফেলায় বিট বালু ও পলি মাটি দিয়ে ভরাট হয়ে গেছে নদীর তলদেশ। ফলে যেমনি নষ্ট হয়েছে নদীর গভীরতা, তেমনি বালুর পরিবর্তে স্তর পড়েছে পলি মাটির। কমে গেছে পানির প্রবাহ। পরিবেশের এমন বিপর্যয়েও আশার আলো দেখিয়েছেন আশপাশের কৃষকরা। বালু মহাল এলাকায় নদীর তলদেশের বেশিরভাগ অংশে আবাদ করেছেন বোরো ধানের। তীরবর্তী ঢালু এবং উপরিভাগের দ্বিতীয় স্তরে আবাদ করছেন নানা ধরণের সবজি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম পলাশিকুড়া, বাতকুচি ও বুরুঙ্গা। এ তিনটি গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে ভারতের তুরা পাহাড়ের বিভিন্ন ঝরনার সমন্বয়ে সৃষ্ট নদী চেল্লাখালী। চেল্লাখালী নদীর বুরুঙ্গা ব্রিজের উত্তরাংশে রয়েছে ‘বুরুঙ্গা বালু মহাল’ এবং দক্ষিণাংশে রয়েছে ‘চেল্লাখালী বালু মহাল’। বালু মহাল দুটি এ বছরও পৃথক প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দুই কোটি টাকার উপরে মূল্যে এক বছরের জন্য ইজারা প্রদান করা হয়েছে। 

ইজারাদারদের অনুমতি সাপেক্ষে স্থানীয় কতিপয় বালু ব্যবসায়ী বালু মহালের বাইরে গিয়ে নদী তীরবর্তী আবাদি ও সমতল ভূমি খুঁড়ে উত্তোলন করছে খনিজ বালু। উত্তোলিত ওই বালুর পরিত্যক্ত অংশ গিয়ে মিশছে নদীতে। ফলে নদীর পানি যেমনি ঘোলাটে-কর্দমাক্ত হয়ে গেছে, তেমনি নদীর তলদেশ পর্যায়ক্রমে এখন ভরাট হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় নাব্যতা সংকটে পড়েছে নদীটি। সামান্য সরু অংশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কর্দমাক্ত পানি। বাকী অংশজুড়ে শোভা পাচ্ছে নানা জাতের আবাদ। নদীর বুক জুড়ে শুধু সবুজের সমারোহ। এ যেন হতাশার মাঝেও আশার আলো। পাহাড়ি ঢল ও অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে যারা নদীগর্ভে জমি হারিয়েছিলেন, তারা আজ নদীগর্ভে আবাদ করে আশার আলো দেখছেন। নদীর একেবারে তলদেশে দুই ধারে বোরো আবাদের সমারোহ। নদীর একটু উপরিভাগের স্তরে এবং ঢালে সেজেছে নানা জাতের সবজি ক্ষেত। আলু, পিঁয়াজ, বেগুন, টমেটো, ক্ষীরা, মিষ্টি কুমড়া, লাল শাক, শীতকালীন লাউ, মরিচসহ নানা জাতের শাক-সবজি চাষ হচ্ছে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। 

পলাশিকুড়া গ্রামের কৃষক আজাফর আলী জানান, গত বছর ২৫ শতাংশ জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন তিনি। ৩৫ মণের মতো ফলন হয়েছিল। আগের বছরও একই রকম হয়েছে। এ বছরও তিনি বোরো আবাদ করেছেন। তার দেখাদেখি এ বছর প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় অনেকেই বোরো আবাদ করেছেন।

তিনি আরও জানান, এ বছর বোরো আবাদের পাশাপাশি শীতে লাউ আবাদ করেছেন তিনি। এ থেকে অন্তত হাজার পিসের মতো লাউ বিক্রি করেছেন। আরও লাউ বিক্রি করবেন। বিক্রি করছেন লাউ শাক। এছাড়াও গোল আলু, পিঁয়াজ, ক্ষীরা এসব আবাদ করেছেন। 

তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আল্লাহর রহমতে ফসলে কোন ঘাটতি নেই। প্রচুর আবাদ হয় এখানে। নদীতে পলী মাটি থাকায় সার তেমন দেওয়া লাগে না। ফলে খরচও কম। সবমিলিয়ে তিনি অনেক লাভে আছেন।

বাতকুচি গ্রামের কৃষক নূর আলী জানান, আগে নদী গহীন আছিল। এখন ভাইসা উঠছে। আমরা টুকটাক করে আবাদ করতাছি। আবাদ ভালোই হয়।

একই গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিন জানান, তিনি নদীতে ২ কাঠা জমি আবাদ করেছেন। নদীতে প্রচুর সার। এ জন্য সার দেওয়া লাগে না। এমনিতেই সেই ক্ষেত হয়েছে। তিনি আরও জানান, শুধু তিনিই নন; অন্তত ৫০ জন কৃষক নদীতে আবাদ করেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ জনান, চেল্লাখালী নদীর নিচের একটি অংশ পলাশিকুড়া, বাতকুচি, আন্দারুপাড়া ও বুরুঙ্গা এলাকায় স্থানীয় কৃষকরা বোরো আবাদ করেছেন। এর পাশাপাশি লাউ, মরিচ, বেগুন, পেঁয়াজ, ক্ষীরা, মিষ্টি লাউসহ নানা ধরণের সবজি আবাদ হচ্ছে। 

তিনি বলেন, নালিতাবাড়ী একটি পানি শর্টেজ এরিয়া (পানি সংকট এলাকা)। চেল্লাখালী নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ওই জায়গাটি এখন আর পতিত নেই। ওই জমিতেও চাষাবাদ হচ্ছে। এতে করে আর্থ-সামাজিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। কৃষি উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে নালিতাবাড়ীতে।

চেল্লাখালী নদীর বুক জুড়ে বোরো আবাদ, দুই ধারে শোভা পাচ্ছে সবজির ক্ষেত। ছবি: সময়ের আলো

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  চেল্লাখালী নদীর প্রকৃতি   সবুজের সমারোহ   খরস্রোতা পাহাড়ি নদী  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close