গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা দিয়ে বয়ে গেছে ২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ঘাঘট নদী। আঁকাবাঁকা এ নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু নেই নদীশাসন ব্যবস্থা। ফলে তীরবর্তী মানুষ দিন দিন হারাচ্ছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। আর ভাঙন আতঙ্কে অনেকের রাত কাটছে নির্ঘুম। দীর্ঘ সময় ধরে নদীশাসন ব্যবস্থা না থাকায় এমন ক্ষতি হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। উপজেলার বনগ্রাম, জামালপুর, দামোদরপুর ও নলডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায় নদীভাঙনের ভয়াবহ দৃশ্য। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের মুখে শোনা যায় ভাঙনরোধের নানা দাবি-দাওয়ার কথা।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ইতিমধ্যে ঘাঘট নদীর একাধিক পয়েন্টে ভাঙনরোধে কাজ করা হয়েছে। আবারও ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হবে।
দামোদরপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘাঘট নদী ভাঙনরোধে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সভায় আলোচনা করেছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আঁকাবাঁকাভাবে বয়ে চলা ঘাঘট নদীটি বনগ্রামের টুনিরচর থেকে শুরু হয়ে নলডাঙ্গার শ্রীরামপুর গিয়ে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার সীমানায় ঠেকেছে। এখানে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি অবাধে বালু উত্তোলন বাণিজ্য করায় নদীভাঙন আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। অথচ ভাঙনরোধে সরকারিভাবে নেওয়া হচ্ছে না পদক্ষেপ। কোনো কোনো স্থানে জিও ব্যাগ, ব্লক স্থাপন করা হলেও তা টেকসই হচ্ছে না। যার কারণে গত একযুগে সাদুল্লাপুরের ঘাঘট নদীর ভাঙনে সহস্রাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি বিলীন হয়েছে। এই নদীর অংশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় হয়েছে বাস্তুহারা কিছুসংখ্যক পরিবারের। একই সঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান চলে গেছে নদীগর্ভে। বর্তমানে শত শত পরিবার নদীভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতে কয়েক যুগেও ঘাঘট নদীশাসন না করায় সিট জামুডাঙ্গা (মুন্সীপাড়া), উত্তর ভাঙ্গামোড় (কুটিপাড়া), জামুডাঙ্গা, টুনিরচরসহ আরও অনেক স্থানে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া চাঁন্দেরবাজার, মহিষবান্দি, ছোট দাউদপুর, হামিন্দপুর ও শ্রীরামপুর গ্রামের নদী তীরবর্তী পরিবারগুলোর দিন কাটছে আতঙ্কে। প্রতি বছরের বন্যা আর নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেকে। কেউ কেউ মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে পথে বসেছেন।
উত্তর ভাঙ্গামোড়ের (কুটিপাড়া) বাসিন্দা ফুল মিয়া, বাকী মিয়াসহ আরও অনেকে বলেন, এই মৌজায় ঘাঘটে বাঁক সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে বেশ কিছুসংখ্যক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। এ স্থানে লুপ কাটিং পদ্ধতিতে গতিপথ সোজা করা হলে নদী ভাঙন থেকে রক্ষাসহ চাষযোগ্য হবে জমি। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছেন বলেও জানান তারা।
ইতিমধ্যে নদীতে চলে গেছে বহু আবাদি জমি। এখন হুমকির মুখে রয়েছে বসতভিটা। যেকোনো মুহূর্তে ভাঙনে বিলীন হতে পারে ঘরবাড়ি। এমন চিন্তায় ঘুম আসে না বলে জানালেন সিট জামুডাঙ্গা (মুন্সীপাড়া) গ্রামের বাসিন্দা লাল মিয়া, আজিজার ও নীল মিয়া।
প্রফুল্ল চন্দ্র বললেন, আগে নদীটি সোজা ছিল। কিন্তু ইদানীং নদী ঘন ঘন বাঁক নিচ্ছে। আর নদীতে মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় ভাঙন আরও বেড়েছে। প্রতি বছরেই নদী ভেঙে ভেঙে আঁকাবাঁকা হয়ে বয়ে যাচ্ছে। আর নদীর পেটে বেশি পরিমাণ পলি ধারণ করেছে। তাই নদীটি শাসন করা জরুরি। এদিকে বেশি বেশি বাঁক নিলে ও পলি ধারণ করার কারণে নদীর পার ভাঙে। তাই নদীর গতিপথ সোজা করে পানিপ্রবাহ সচল করতে নদীশাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পাতিল্যাকুড়া-চকদাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা খরিপ উদ্দিন বলেন, কয়েক বছর আগে ভাঙনে বিলীন হয়েছে আমার ঘরবাড়ি। একমাত্র বসতভিটা হারিয়ে আমি এখন ঠাঁই নিয়েছি ভাইয়ের বাড়িতে।
সময়ের আলো/জেডআই