ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

নানা সংকটে ব্যাহত চিকিৎসাসেবা
হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
প্রকাশ: শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪, ৫:০৬ এএম  (ভিজিট : ৫৩০)
জনবল ও আবাসন সংকটে ধুঁকছে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুমিল্লার হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। আড়াই লাখ জনগোষ্ঠীর এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে মঞ্জুরিকৃত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও কর্মকর্তার অভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা ও প্রশাসনিক কাজকর্ম। সঠিক ও উপযুক্ত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় লোকবল এবং বিশেষজ্ঞ চিকিকৎসকের অভার দূরীকরণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আশানুরূপ কোনো সাড়া মেলেনি।

এ ছাড়া উপজেলা সদর ও ইউনিয়ন পর্যায়ে অনেক বেসরকারি হাসপাতাল এবং ডায়াগনোস্টিক সেন্টার রয়েছে। এগুলোর সেবার মান নিয়েও জনসাধারণের মাঝে বিরূপ ধারণা রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা ও চিকিৎসায় অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। বেসরকারি এসব হাসপাতাল-ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের চিকিৎকসার মান নিয়ন্ত্রণে মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়ে থাকে। ইতিমধ্যে নিবন্ধন না থাকায় পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি রোগী সাধারণের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা জরুরি। ৪৩ বছরের পুরোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবনসহ তিনটি স্টাফ কোয়ার্টার খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল ও স্টাফ কোয়ার্টারের বিভিন্ন কক্ষের দেয়াল ও ছাদ থেকে খসে পড়েছে পলেস্তরা। ছাদ থেকে বড় বড় আস্তরখণ্ড ভেঙে পড়ে মেঝেতে স্তূপ হয়ে যাচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। এরই মধ্যে হাসপাতালের একটি ভবনে করা হয়েছে চুনকাম ও হালকা মেরামত কাজ। বর্তমানে হাসপাতাল ভবনের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি বিভাগ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে অন্য আরেকটি ভবনে। বেশ পুরোনো ও মান্ধাতা আমলের বৈদ্যুতিক লাইনগুলো লোড নিতে না পারায় আধুনিক সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।। ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম যা স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ও সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তেলের বরাদ্দ না থাকায় জেনারেটরটিও বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগীদের চরম দুরাবস্থা সৃষ্টি হয়। হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা মোম জ¦ালিয়ে আলো এবং গরমে হাত পাখার ব্যবহার করতে হয়।

বিদ্যমান ৪৩ বছরের পুরোনো হাসপাতালের ৫০ শয্যায় সম্প্রসারিত ভবনটিও বেশ পুরোনো মডেলের। এতে পর্যাপ্ত সংখ্যক কক্ষ না থাকায় হাসপাতালের সব চিকিৎসককে পৃথক কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে এমবিবিএস চিকিৎসকরা একসঙ্গে বহিবির্ভাগে চিকিৎসাসেবা দিতে পারছেন না। প্রতিনিয়তই রোগীর চাপ এবং ভিড় বাড়ছে। কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের আবাসিক সুবিধা না থাকায় তাদের বাইরে ভাড়া বাসায় থেকে কর্মস্থলে যোগ দিতে হয়। এতে ব্যাঘাত ঘটছে চিকিৎসাসহ অন্যান্য সব কাজকর্ম।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুছ ছালাম সিকদার বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে জনবল এবং আবসন সংকট প্রকট। জুনিয়র কনসালট্যান্ট, সনোলজিস্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি পদ তৃতীয় শ্রেণির ৪৩টি, চতুর্থ শ্রেণির কুকু, মশালচি, আয়া, ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ পদই শূন্য। ফলে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনগণ পর্যাপ্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে জনবল পদায়ন করা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও এর আবাসিক কোয়ার্টার এবং পুরোনো ভবনগুলো ভেঙে জরুরি ভিত্তিতে নতুন ভবন তৈরি করা ও বহিঃবিভাগ ও আন্তঃবিভাগে রোগীর চাপ বৃদ্ধির কারণে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

কুমিল্লা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, পাঁচ বছরের জন্য একটি অপারেশন প্ল্যান তৈরি করা হয়। সেটি এ বছর শেষ। পাঁচ বছরের পরিকল্পনায় এটি ধরা আছে। আশা করছি আগামী অর্থবছর থেকে পর্যায়ক্রমে হোমনা হাসপাতাল এবং ঝুঁকিপূর্ণ সব আবাসিক ভবন ভেঙে নতুন ভবন তৈরি করা হবে। 

কুমিল্লা সিভিল সার্জন নাসিমা আক্তার বলেন, এ বিষয়ে আমরা প্রস্তাবনা দিয়ে রেখেছি যেন এই অর্থবছরে ঢুকতে পারে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অপারেশন প্ল্যান আসছে। সেখানেও অনেক কাজ ঢুকে যাবে। তার মধ্যে আমরা হোমনার নামও লিখে দিয়েছি। যদি প্রস্তাবনা পাস হয় তা হলে হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।


উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি বিশেষজ্ঞ, শিশু, অর্থো-সার্জারি, কার্ডিওলজি, চক্ষু, ইএনটি, চর্ম ও যৌনসহ একজন করে ১০টি জুনিয়র কনসালট্যান্টের মঞ্জুরিকৃত পদের বিপরীতে সার্জারি, কার্ডিওলজি, চক্ষু, ইএনটি এবং চর্ম ও যৌনসহ ৫টি জুনিয়র কনসালট্যান্টের পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া মেডিকেল অফিসার (এনেস্থেসিয়া) ও অল্টারনেটিভ মেডিকেল অফিসারের পদ দুটিসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ২১ জন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মধ্যে সাতটি পদ শূন্য রয়েছে। অন্যদিকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ৩১টি মঞ্জুরিকৃত সহকারী সার্জন ও মেডিকেল অফিসারের বিপরীতে সাতটি পদ শূন্য এবং একজন অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত ও একজন চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ায় কার্যত আরও দুটি পদ শূন্য হয়ে গেছে। এদিকে অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত চিকিৎসককে বারবার চিঠি দেওয়া হলেও তা কেউ গ্রহণ না করায় চিঠিটি ফেরত এসেছে।

এ ছাড়া সিনিয়র স্টাফ নার্স (দ্বিতীয় শ্রেণি) ৫টি, মিডওয়াইফ (দ্বিতীয় শ্রেণি-ইউএইচসি) ১টি ও মিডওয়াইফ (দ্বিতীয় শ্রেণি সাব সেন্টার) ১টি, প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক ১টি, পরিসংখ্যানবিদ ১টি, অ্যাকাউনট্যান্ট ১টি, স্টোরকিপার ১টি, ক্যাশিয়ার ১টি, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ১টি, স্যাকমো (সাব সেন্টার) ২টি, স্যাকমো (ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র) ৮টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) ১টি, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ১টি, সহকারী পরিদর্শক ১টি, স্বাস্থ্য সহকারী ২৩টি, সহকারী নার্স ১টিসহ তৃতীয় শ্রেণির মোট ৮৪টি পদের বিপরীতে ৪৩টি পদ শূন্য রয়েছে। এদের মধ্যে আর দুজন প্রেষণে অন্যত্র চাকরি করছেন ফলে উপজেলার বহুল জনগোষ্ঠী তাদের কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। এদিকে ২৫ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মধ্যে ১৭টি পদ শূন্যসহ প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির মোট ১৭৬টি পদের মধ্যে ৭৪টি পদই শূন্য থাকায় হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close