ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

উপজেলা নির্বাচন আইন ও বিধিমালা সংশোধনী
সহজ হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পথ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৪:১০ এএম  (ভিজিট : ৫৮৮)
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনি আইন ও বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংশোধনীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পথ সহজ করার সুপারিশ করে খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি। তবে কঠোর হচ্ছে জামানত বাজেয়াপ্তের বিধান।

বুধবার সকালে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানার নেতৃত্বে ইসি ভবনে এ সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার মূল আলোচ্যসূচি ছিল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনি বিধিমালা ২০১৩-এর সংশোধনী ও উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-এর সংশোধন ও বিবিধ। এর আগের দিন গত ৬ ফেব্রুয়ারি ইসির ২৭তম কমিশন সভায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা এবং আচরণ বিধিমালার সম্ভাব্য সংশোধনীর বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অন্য কমিশনাররাও এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।

বর্তমানে উপজেলা নির্বাচনি আইনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে প্রার্থীর মনোনয়নের সঙ্গে ২৫০ জন ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে তা বাতিলের প্রস্তাব দিয়ে নির্বাচনি আচরণ বিধিমালাতে এক গুচ্ছ সংশোধন আনার প্রস্তাব করেছে আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নির্বাচনি আচরণ বিধিমালাতে প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থীদের প্রচারে সুযোগ দেওয়া, জনসভা ও মিছিলের আইনি বৈধতা দেওয়া, নির্বাচনি প্রচারে রঙিন পোস্টার ও ব্যানার ব্যবহারের সুযোগ আবারও ফিরিয়ে আনা, পোস্টারে পলিথিনের আবরণ বা প্লাস্টিক ব্যানার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা ও নির্বাচনে মাইক ব্যবহারে শব্দের মানমাত্রাও বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে নির্বাচনি প্রচারের বিষয়টি বিধিমালার আওতায় আনার কথা সংশোধনীতে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে এই সুযোগে ভূইফোঁড় প্রার্থী ঠেকাতে জামানত বাড়ানো ও বাজেয়াপ্ত করার বিধানে কড়াকড়ি আরোপের কথা ভাবছে ইসি। বর্তমানে প্রদত্ত ভোটের সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট না পেলে জামানত বাজেয়াপ্তের বিধান থাকলেও নতুন সংশোধনীতে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, নির্বাচনে যে সংখ্যক ভোট পড়বে, তার ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট পেতে হবে-না হলে প্রার্থীর জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করে সরকারি কোষাগারে জমার বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সময়ের আলোকে বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা এবং উপজেলা পরিষদ বিধিমালায় কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব রয়েছে। এটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কমিশনার রাশিদা ম্যাডামের নেতৃত্বে (বুধবার) আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি আজকে প্রথম একটি মিটিং করেছে। মিটিং করার পর তারা সুপারিশ করেছে। তাদের সুপারিশ এখন কমিশন সভায় তোলা হবে।

বুধবার নির্বাচন ভবনে নিজ দফতরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আসলে কোনো আইন সংশোধন করতে চাইনি। আচরণ বিধিমালায় কয়েকটি জায়গায় অসঙ্গতি আছে, কিছু অস্পষ্টতা আছে। এসব যারা প্রয়োগ করতে চান, তারা ফিডব্যাক দিয়েছেন। সেই ফিডব্যাকের পর এসব পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। আচরণ বিধিমালা শুধু নির্বাচন কমিশন সংশোধন করতে পারে। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের একটি ভেটিং লাগে। তা পেলে আমরাই জারি করতে পারি। 

তিনি বলেন, পোস্টার ভিজে যেন না যায়, সে জন্য কিন্তু পরিবেশ অধিদফতর থেকে এগুলো ডিসকার্ড করার জন্য বলা আছে। এ ধরনের বিধি, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোটারদের স্বাক্ষর-এসব বিষয়ে সচিবালয় হয়তো ফিডব্যাক পেয়েছে। মিশ্র মতামত আছে। এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না।

স্বতন্ত্র হলে ভোট করা আপনাদের জন্য সহজ হয় কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, না, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অথরিটি স্থানীয় সরকার। তারাই তো দেখবে কোনোটি রাখলে ভালো, কোনোটি রাখলে খারাপ। আমাদের দায়িত্ব হলো নির্বাচন করা। যে পদ্ধতি থাকবে, সে পদ্ধতিতে আমরা নির্বাচন করব। যেমন সংসদে কয়টি আসন থাকবে-এটি তো নির্বাচন কমিশন দেখতে পারে না। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো নির্বাচন করে দেওয়া।

তিনি বলেন, আমরা এখানে (উপজেলা নির্বাচন) কমপক্ষে চার ধাপে করব। প্রতি ধাপে ১০০ বা এর কাছাকাছি উপজেলায় ভোট হবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের এফোর্ট বেশি থাকবে। আমরা আশা করি, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেভাবে করেছি, উপজেলা নির্বাচন তার চেয়ে ভালোভাবে করব। কারণ জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে ৩০০ আসনে করতে হয়েছে। ৩০০ জায়গায় এফোর্ট দিতে হয়েছে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এ ইসি সচিব বলেন, ইতিহাস বলে স্থানীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি হয়। স্থানীয় পর্যায়ে অনেক পার্টিসিপেশন থাকে, এ কারণে ভোটের মাঠে অটোমেটিক ব্যালেন্স তৈরি হয়। সেখানে আমরা এফোর্ট দিলে সুষ্ঠু ভোট হবে বলে আমরা মনে করি।

দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ার‌্যান পদে ভোট হওয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৬ সালে ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা সংশোধন’ করা হয়। তখন থেকে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে ২৫০ জন ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয়। এই স্বাক্ষর জমা দেওয়ার বিধানের কারণে অনেকেই প্রার্থী হতে পারেন না। আবার ওই তালিকার গরমিল, স্বাক্ষরদাতাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তা অস্বীকার করানোসহ নানা কারণে বিভিন্ন সময়ে প্রার্থিতা বাতিলের অনেক নজির রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার ক্ষেত্রে বিধিমালা সংশোধন করতে যাচ্ছে কমিশন। এতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালার বিধি ১৫-তে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর যৌক্তিকতা হিসেবে বলা হয়েছে, প্রার্থিতার সমর্থনে স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জমা দেওয়ার ফলে ভোটারদের গোপনীয়তা নষ্ট হচ্ছে।

ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৪, ১১, ১৮ ও ২৫ মে চার ধাপে দেশের ৪৫২টির মতো উপজেলার সাধারণ নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছে ইসি।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close