ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ভোমরা স্থলবন্দরে কমেছে আমদানি
প্রকাশ: শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৬:৩৪ এএম  (ভিজিট : ৫৩৪)
ডলার সংকটসহ বিভিন্ন কারণে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি কমে গেছে। আগে এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতীয় আমদানি পণ্যবাহী ৪০০ থেকে ৪৫০ ট্রাক এলেও এখন তা অর্ধেকে নেমেছে। ফলে এ অর্থবছরেও বন্দরের রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্র পূরণে সংশয় দেখা দিয়েছে। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা ডলার সংকট, বন্দরে ব্যবসায়ীদের হয়রানি ও চাঁদাবাাজিসহ বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ২৬ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলেও আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ৬৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৮৫৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের মতো এবারও নির্ধারিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

বন্দর সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের হয়রানির কারণে যেমন এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তার ওপর ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো নিয়মিত ঋণপত্র দিতে পারছে না। আগে ১০ শতাংশ মার্জিনে ঋণপত্র খোলা যেত, এখন এ ঋণপত্র খুলতে হচ্ছে ১৫০ শতাংশ মার্জিনে। আর টাকার মূল্যমান কমে যাওয়ায় ঋণপত্র খোলার সময় ডলার মূল্য ধরা হচ্ছে ১১৫ টাকা, অথচ বিল পাস হচ্ছে প্রতি ডলার ১২৫ টাকায়। এতে আমদানিকারকরা ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে আমদানি কমে যাচ্ছে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বন্দরের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ৭২ ধরনের পণ্য আমদানির অনুমোদন থাকলেও নিয়মিত পণ্য আমদানি হয় ২২টি। এসব পণ্যের বেশির ভাগই কাঁচামাল ও ফল। তবে গত কয়েক মাস ধরে এ বন্দর দিয়ে কোনো ফল আমদানি হচ্ছে না। এ ছাড়া ভারত থেকে অন্য যেসব পণ্য আমদানি হয় সেগুলো ভোমরা বন্দরে আসার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ খালাস করতে গড়িমসি করে। খালাস করতে দেরি হওয়ায় কাঁচামালগুলো ট্রাকে পচতে শুরু করে। এ ছাড়া খালাস করতে শ্রমিকদের ডবল মজুরি দিতে হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের দাবি, কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যেখানে সুবিধা পাবেন সেখানেই পণ্য আমদানি করবেন। ভোমরা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিতে কোনো ছাড় দেওয়া হয় না। তাই ভোমরা বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

দ্বৈতনীতি, অবকাঠামো উন্নয়নের ধীর গতি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের অবহেলা ও বন্দরের তিনটি বিভাগের সমন্বয়হীনতাকে ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে তারা বলেন, পাশর্^বর্তী বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে ভোমরা বন্দরের প্রতিযোগিতা শুরু থেকেই। বেনাপোলসহ অন্য বন্দরে ব্যবসায়ীদের যে পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তুলনামূলকভাবে ভোমরা বন্দর ব্যবসায়ীরা তার কিছুই পান না। পূর্বে বেনাপোল বন্দর দিয়ে কাঁচামাল ও ফলমূল আমদানি হতো না। ব্যবসায়ীরা ভোমরা বন্দর দিয়ে আমদানি করত। বর্তমানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে কাঁচামাল ও ফলমূল আমদানি হচ্ছে। ফলে অনেক ব্যবসায়ী এখন বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করায় ভোমরা বন্দরের আমদানি কমেছে।
এ ব্যাপারে ভোমরা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক আহ্বায়ক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন বলেন, ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানি কমে যাওয়ার পেছনে যে শুধু ডলার সংকট দায়ী তা নয়। দেশের অন্যান্য বন্দরে আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক। কিন্তু ভোমরা স্থলবন্দরে কেন অস্বাভাবিক-প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এখানকার ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে তাদের সর্বস্ব হারান। এ জন্য অনেকে এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে আমদানি কার্যক্রমে। তার ওপর একটা বন্দরের উন্নয়নের জন্য দক্ষ নেতৃত্বের প্রয়োজন। আর এখানে দক্ষ নেতৃত্ব না থাকায় ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সমস্যা পোহাতে হয়। এসব কারণেই আমদানি কমেছে।

ডলার সংকট অনেকাংশে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য আমদানিতে প্রভাব ফেলেছে জানিয়ে ভোমরা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম খান বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই বন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্য খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। ভোমরা বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীদের সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমোদন নেই। তার ওপর ডলার সংকটসহ এলসি জটিলতা রয়েছে। এসব কারণে বন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য আমদানি কমেছে। এখন আমদানি বাড়াতে হলে বৈষম্যগুলো দূর করতে হবে।

এ ব্যাপারে ভোমরা কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার মো. এনামুল হক জানান, পণ্য চাহিদার ওপর আমদানি কম-বেশি হয়। ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ এলসি করেন তার বিপরীতে পণ্য আমদানি হয়। এখানে কাস্টমসের কোনো কিছু করার নেই। সরকারি নিয়মকানুন মেনেই বন্দর পরিচালিত হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, দেশের তৃতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর হিসেবে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর। ভারতের কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের সঙ্গে ভোমরা বন্দরের দূরত্ব বাংলাদেশের যেকোনো বন্দর অপেক্ষা কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে সুবিধাবোধ করেন। বর্তমানে বন্দরটিতে আমদানি ও রফতানিকাজে জড়িত রয়েছেন পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী। একসময় এ বন্দর থেকে প্রতিদিন রাজস্ব আদায় হতো ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা। বছর শেষে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার মতো।

সময়ের আলো/আরএস/ 







https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close