ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লি
বিশ্ব ইজতেমা শুরু আজ
প্রকাশ: শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৭:৩৯ এএম  (ভিজিট : ৬৯০)
বিশ্ব ইজতেমা শুরু হচ্ছে আজ। রাজধানী ঢাকার টঙ্গীর তুরাগের তীর এখন লাখো মুসল্লির আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে মুখরিত। ভারত, পাকিস্তান, কুয়েত, সৌদি আরব, আফগানিস্তান, জাপান, ওমান, কানাডা, মোজাম্বিক, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কিরগিস্তান, সিঙ্গাপুর, ইতালি, জর্ডান ও যুক্তরাজ্যসহ অর্ধশত দেশের মুসল্লি এবারে ইজতেমায় অংশ নিচ্ছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মেলায় তিন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। ২৮টি ওয়াচ টাওয়ার ও ড্রোনের মাধ্যমে ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

শুক্রবার বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা আহমদ লাটের বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে বিশ্ব ইজতেমা। এরপর সকাল ১০টায় তালিম করবেন একই দেশের মাওলানা জিয়াউল হক। জুমার নামাজ পড়াবেন কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা জুবায়ের আহমদ। বাদ জুমা বয়ান করবেন জর্ডানের মাওলানা ওমর খতিব। বাদ আসর বয়ান করবেন বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা জুবায়ের বাংলাদেশ।
এদিকে বিশ্ব ইজতেমা শুরু হওয়ার আগেই তিন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে তৃতীয় ব্যক্তি মারা যান। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ইজতেমা ময়দানে হঠাৎ বমি হলে অসুস্থ হন আবদুস সাত্তার (৭০)। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। আবদুস সাত্তার নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার কুমরি বাজার গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। এর আগে বুধবার ইজতেমায় এসে ও আসার পথে দুই মুসল্লি অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তারা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের চৌহদ্দীটোলা গ্রামের জামান মিয়া (৪০) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার ধামাউরা গ্রামের ইউনুছ মিয়া।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। এর আগে বুধবার মধ্য রাতেও এক দফা হালকা বৃষ্টি হয়। এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ৪০টি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে মুসল্লিদের সার্বক্ষণিক ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। ২৮টি ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে মাঠটিকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। পাশাপাশি পাখির চোখে দেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে জোরদার করার জন্য একাধিক ড্রোন ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়াও হেলিকপ্টার দিয়ে পুলিশ ও র‌্যাবের টহল অব্যাহত রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ৬ হাজার সদস্যসহ ১৫ হাজার পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি র‌্যাবের কর্মীরা সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রাখবে পুরো মাঠটিকে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ৫টি ও বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে ১টি পন্টুন নির্মাণ করে নদীর ওপর দিয়ে মুসল্লিদের চলাচল নির্বিঘ্ন করা হয়েছে।

এক খিমায় ভারত-পাকিস্তানের মুসল্লিরা : ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ থাকলেও বিশ্ব ইজতেমায় তারাসহ সাত দেশের মুসল্লিরা একই খিমা (একই পরিমণ্ডল) অবস্থান করছেন। মিলেমিশে আল্লাহর দিদার লাভের আশায় তারা সব ভেদাভেদ ভুলে দ্বীনি এলেম শিক্ষা নিচ্ছেন। বুধবার বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে বিদেশি মেহমানদের প্যান্ডেলে গিয়ে জানা গেল এসব তথ্য।

বিশ্ব ইজতেমার পাহারা জামাতের খাদেম সোহেল রানা জানান, একটি খিমায় সাত দেশের নাগরিক অবস্থান করছেন। ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ ও ইরানের মুসল্লিরা এই খিমায় আছেন। অনেকে এসেছেন, আরও আসছেন। তারা শান্তিপূর্ণভাবে ইসলামের সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ইবাদত-বন্দেগি করছেন।

ভারতের উত্তর প্রদেশের মুসল্লি রেহাম কোরেশী (৫৫) বলেন, আমরা ইসলামের শিক্ষা নিতে এসেছি। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজ দেশে ও বিদেশে ইসলাম প্রচার করব। একই দেশের ফেরাশত আলী (৬০) বলেন, ইসলামের খেদমতে এসেছি। নিজের ও পরিবারের জন্য দোয়া করতে এখানে আসা।

ভারতের গুজরাটের মুরব্বি মো. ইয়াকুব ও মো. ইয়াসিন বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও ইসলামের দ্বীনি শিক্ষা মানুষকে শান্তির পথে নিয়ে যায়।

পাকিস্তানের ইসলামাবাদের নাগরিক ওমর কাশেমী বলেন, আমরা জামাত নিয়ে এসেছি। পাকিস্তান তাবলিগ জামাতের একজন সদস্য হিসেবে ইজতেমায় আসা। প্রতি বছর আমি এই ইজতেমায় আসি। ইসলামের খেদমতে আমরা অনেকেই এসেছি, আরও আসছেন।

ভাসমান ব্রিজ স্থাপন সেনাবাহিনীর : বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের সুবিধার্থে তুরাগ নদীর ওপর ৫টি ভাসমান ব্রিজ স্থাপন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এ ছাড়া মুসল্লিদের ওজু ও খাবার পানির জন্য সেনাবাহিনীর দুটি ওয়াটার বাউজার সার্বক্ষণিক পানি সরবরাহ করবে। সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সেনাসদস্যরা ইজতেমা এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন করে এসব জনকল্যাণমূলক কাজ সম্পন্ন করছেন। পাশাপাশি ইজতেমা এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের একটি বোম্ব ডিসপোজাল দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শুক্রবার থেকে রোববার এবং আগামী ৯-১১ ফেব্রুয়ারি দুই পর্বে টঙ্গী তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, বিশ্ব ইজতেমাকালীন সময়ে যেকোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সবসময় দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জনকল্যাণমূলক কাজ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছরের মতো এবারও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিশ্ব ইজতেমা এলাকায় ভাসমান ব্রিজ ও ওয়াটার বাউজার স্থাপন করা হয়েছে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close