পার্লামেন্ট অধিবেশনে জিম্মিদের স্বজনদের হামলার পর গাজা উপত্যকায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ইনেত এবং মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস জানিয়েছে, দুই মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার এবং মিসরের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের কাছে প্রস্তাবটি পাঠানোও হয়েছে। এদিকে সিএনএনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বকে গাজা থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে রাজি ইসরাইল।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ইনেত এবং মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস জানিয়েছে, প্রস্তাবে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি প্রক্রিয়াকে কয়েকটি স্তর বা পর্যায়ে ভাগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। জিম্মিদের মধ্যে যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি এবং অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন, সবার আগে তাদের মুক্তি চায় ইসরাইল।
পরবর্তী পর্যায়গুলোতে আটক ইসরাইলি নারী সেনাসদস্য, বেসামরিক তরুণ-তরুণী ও পুরুষ সেনাসদস্যদের মুক্তির ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, এই জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে। তবে কতজনকে মুক্তি দেওয়া হবে, সেই সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি।
প্রস্তাবে যুদ্ধ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়নি ইসরাইল; তবে বলেছে, গাজার প্রধান শহরগুলোতে ইসরাইলি সেনাদের উপস্থিতি হ্রাস করা হবে এবং যুদ্ধ শুরুর পর উপত্যকার যেসব ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ছেড়েছে তাদের নিজ নিজ এলাকায় ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হবে।
ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, জিম্মিদের মুক্তির পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে দুই মাস সময় নেবে বলে ধারণা করছেন তারা। এই সময়সীমায় গাজায় কোনো অভিযান চালানো হবে না।
এদিকে সিএনএন বলছে, বৃহত্তর যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে গাজায় থাকা হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বকে উপত্যকা থেকে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে রাজি আছে তেল আবিব। এ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুইজনের বরাতে সিএনএন এমন খবর দিয়েছে।
হামাস ধ্বংসের পরিকল্পনা কাজে আসছে না : হামাসকে ধ্বংস করতে ইসরাইলের পরিকল্পনা কাজে আসছে না বলে মন্তব্য করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। একই সঙ্গে সংকট সমাধানে শান্তি আলোচনা দরকার বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাটজ সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে ওই বৈঠকে বিরোধ নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের আলোচনাকে তিনি এড়িয়ে গেছেন।
ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাটজ মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আলোচনার জন্য ব্রাসেলসে অবস্থান করছিলেন। মূলত ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ওপর হামলা এবং গাজায় ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক আক্রমণের পরিণতির বিষয়ে সেখানে আলোচনা হচ্ছে।
ইসরাইলি বাহিনীর লাগাতার বোমাবর্ষণে গত প্রায় সাড়ে তিন মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন ২৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার এবং ইসরাইলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে ধসে যাওয়া বিভিন্ন ভবনের ধ্বংস্তূপের নিচে এখনও চাপা পড়ে আছেন অন্তত কয়েক হাজার মানুষ। গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘোষিত এক মানবিক বিরতির ৭ দিনে মোট ১০৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বাকি ১৩২ জন এখনও তাদের হাতে আটক রয়েছে।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ইনেত জানিয়েছে, সোমবার জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেখানে আটক জিম্মিদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার আশ^াস দিয়েছেন তিনি।
সময়ের আলো/আরএস/