ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

অবাধে চলছে মাটি কাটা, বিক্রি ও পুকুর খনন
ফসলি জমির মাটি গিলছে ইটভাটা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪, ৮:২৩ এএম  (ভিজিট : ৬৯২)
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। দালালদের প্রলোভনে স্থানীয় অনেকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন কৃষিজমির মাটি। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অবাধে ভেকু দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কাটার কারণে অনেক ফসলি জমি পুকুরে পরিণত হয়েছে। ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে নেওয়ায় একদিকে কমে যাচ্ছে ফসলি জমির পরিমাণ, অন্যদিকে অনুর্বর হয়ে পড়ছে জমি। সবমিলিয়ে চরম হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমির আবাদ। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ঘটলেও দেখার যেন কেউ নেই!

সরেজমিন দেখা যায়, নাটঘর, বিদ্যাকুট, রসুল্লাবাদ, শিবপুর, শ্রীরামপুর, জিনদপুর, বিটঘর, ফতেপুর, শ্যামগ্রাম, নবীনগর, নবীপুর, নরসিংহপুর ও চিত্রি ইউনিয়নের বহু গ্রামে ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি (টপ সয়েল) কাটার মহোৎসব চলছে। এসব মাটি বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এ ছাড়াও উপজেলার সেমন্তঘর, কাইতলা, কাজালিয়া, সোনাবালুয়া, আহমদপুর, টানচারা, হাজীপুর, বাশারুক, ইসলামপুর, নোয়াগ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে চলছে অবাধে মাটি কাটা, বিক্রি ও পুকুর খনন।  

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলার সময় তারা অভিযোগ করেন, অবৈধ মাটি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ভূমি অফিসসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছে এসব অপকর্ম। তাই অভিযোগ করলেও মিলছে না প্রতিকার। তা ছাড়া মাটিবাহী ট্রাক্টর ও ট্রলি চলাচলের জন্য জমির মাঝখান দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। মাটিভর্তি এসব অবৈধ ট্রাক্টর ও ট্রলির ভারী চাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কাঁচা-পাকা সড়ক। অদক্ষ ড্রাইভার ও শিশু-কিশোরদের দিয়ে অবাধে এসব যানবাহন বেপরোয়াভাবে চালানো হচ্ছে। রাস্তায় মাটিভর্তি একাধিক গাড়ি একটানা চলার কারণে ধুলাবালি ও কানফাটা আওয়াজে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন স্কুল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রীসহ পথচারীরা।

এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, জেলা প্রশাসকের অনুমতি ব্যতীত কোনো ব্যক্তি জমির শ্রেণি পরিবর্তন কিংবা জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি অন্যত্র বিক্রি করতে পারে না। এই নিয়মের বাইরে গিয়ে যদি কেউ জমির মাটি কাটে বা বিক্রি করে তা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবু কাশেম বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার জন্য ডিসি বরাবর আবেদন করতে হয়। জমির শ্রেণি পরিবর্তন কেবলমাত্র ডিসি স্যার করতে পারেন। তা ছাড়া পুকুর উন্নয়ন আইন অনুযায়ী মাটি কাটার জন্য এমন জমি নির্বাচন করতে হয় যে জমিতে চাষাবাদ হয় না। বিশেষ করে কোনোভাবেই তিন ফসলি জমির ক্ষতি করা যাবে না। জলাবদ্ধতা হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে মাছ চাষের জন্য পুকুর কাটা যেতে পারে। হাতে অথবা ভেকু দিয়ে মাটি কাটার অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে। তবে কোনো অবস্থাতেই এই মাটি ড্রেজার দিয়ে কাটা যাবে না। অন্যত্র বিক্রিও করা যাবে না। এই মাটি দিয়ে কেবলমাত্র পুকুরের পার তৈরি করতে হবে। পুকুর খনন করার জন্য সাধারণত ৬-৭ ফুট গভীর করে মাটি কাটা যাবে এবং তলদেশ সমান রাখতে হবে। এর বেশি খনন করলে মাটি বিক্রি বা অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্যের জন্য তা করা হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, ফসলি জমির প্রাণ বলা হয় টপ সয়েলকে। জমির প্রথম ৮-১০ ইঞ্চিকে বলা হয় টপ সয়েল। এখানে থাকে মাটির জৈব পদার্থ। টপ সয়েল কর্তন করা হলে জমি উর্বরতা শক্তি হারায় এবং দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়। নবীনগর পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট শিব সংকর দাস বলেন, আবাদি জমির মাটি কিছুতেই অন্যত্র বিক্রি করা যাবে না। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। ফসলি জমির মাটি কাটা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।

উপজেলার রসুলাবাদ গ্রামের ড্রেজার ব্যবসায়ী বিল্লাল মিয়া বলেন, আমি আমার নিজের ১৮ কানি ফসলি জমি থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করেছি। আমি কখনো অন্যের জমির মাটি কাটি না। গত কিছু দিন হলো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আমার ড্রেজারগুলো প্রশাসনের লোকজন নিয়ে গেছে। শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের নাসিরাবাদ গ্রামের জমির মালিক হাসান বলেন, জমি আবাদের চেয়ে পুকুর চাষ বেশি লাভজনক। তাই পুকুর খনন করছি। পুকুর খনন করতে প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে কোনো অনুমতি নেননি বলে জানান তিনি।

শিবপুর ইউনিয়নের কনিকারা গ্রামের আবদুল মান্নান বলেন, ৩-৪ বছর পরও জমির মাটি সমান না হওয়ায় আবাদ করতে পারছি না। তাই এখন জমির মাটি কেটে সমান করছি। ইটভাটার লোকজন নিজ দায়িত্বে জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এর বিনিময়ে আমরা কোনো টাকা পাচ্ছি না। 

পৌর এলাকার পূর্বপাড়ার কৃষক শাহ আলম মিয়া বলেন, এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি আইনের তোয়াক্কা না করেই ভেকু এবং ড্রেজার দিয়ে ফসলি জমি ধ্বংস করে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে মাটি বিক্রির রমরমা ব্যবসা। তা ছাড়া দালালরা জমির মালিকদের অতিরিক্ত টাকার লোভ দেখিয়ে জমির উপরিভাগের মাটি নিয়ে যাচ্ছে
ইটভাটায়।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close