ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

কালীগঞ্জে মাছের মেলা
১১ ফুট লম্বা পাখি মাছের দাম লক্ষাধিক টাকা!
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪, ২:১৬ এএম  (ভিজিট : ৫৮৪)
গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রতি বছরের মতো এবারও গতকাল সোমবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে সবচেয়ে বড় মাছের মেলা যা এলাকায় জামাই মেলা হিসেবেও পরিচিত। উপজেলার জামালপুর, মোক্তারপুর ও জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী বিনিরাইল গ্রামে ঐতিহ্যবাহী এ মাছের মেলা বাংলা মাঘ মাসের প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হয়। মেলার দিনটিকে ঘিরে এখানে দিনব্যাপী চলে আনন্দ-উৎসব। দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন উপজেলাবাসী। বিনিরাইলসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মেয়েরা মেলা উপলক্ষে তাদের স্বামী-সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। জামাইরা হচ্ছেন ওই মেলার মূল ক্রেতা ও প্রতিযোগী। তারা মেলার সবচেয়ে বড় মাছটি কিনে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়ার যেমন চেষ্টা করেন, তেমনি শ্বশুররাও চেষ্টা করেন বড় মাছটি কিনে মেয়ে, জামাই ও নাতি-নাতনিদের আপ্যায়ন করতে। বিনিরাইলের মাছের মেলা যেন জামাই-শ্বশুরের বড় মাছ কেনার এক নীরব প্রতিযোগিতার মাঠ!

সরেজমিন দেখা যায়, বরিশালের কুয়াকাটা থেকে আগত পাখি মাছ নামে একটি মাছ মেলায় আনা হয়েছে যার ওজন ৭৩ কেজি ও লম্বায় ১১ ফুট। মাছ বিক্রেতা তার দাম হাঁকেন ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। তবে মাছটির দাম উঠেছে সর্বোচ্চ ৯০ হাজার টাকা। মেলাকে ঘিরে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। এ ছাড়াও গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ কেবল মাছের মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে বেড়াতে আসেন। এবারের মেলায় চার শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মেলায় চিতল, বাঘাইড়, আইড়, রিডা, বোয়াল, কালিবাউশ, পাবদা, ইলিশ, গলদা চিংড়ি, বাইম, রূপচাঁদা, সুরমা, কোরাল, কাইক্কা, শাপলা, পোয়া ও টুনাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানারকম দেশি-বিদেশি মাছ। মাছের মেলা হলেও এখানে আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি, পোষা পাখি ইত্যাদির পসরাও বসে।

মেলায় আসা মাছ বিক্রেতারা জানান, তারা প্রায় ২৫ বছর ধরে মেলায় মাছ বিক্রি করতে আসেন। শুরুতে কেনাবেচা ভালো হলেও বর্তমানে তেমন হয় না। তবে ঐতিহ্যের কারণে বিনিরাইলে মাছের মেলায় ক্রেতার চেয়ে দর্শকের সংখ্যাই বেশি।

বিনিরাইলের মাছের মেলায় বেড়াতে আসা বক্তারপুর ইউনিয়নের ফুলদী গ্রামের স্কুলশিক্ষক আবুল কালাম খান তুষার বলেন, স্থানীয় জামাইদের নজর বিনিরাইলের মাছের মেলার বড় মাছটার দিকে। মাছ ব্যবসায়ীরা বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে মেলায় নিয়ে আসেন। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী মাছের দাম হাঁকা হয়। শুরুতে এ মেলা শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও বর্তমানে এটা সব ধর্মের মানুষের কাছে উৎসবে পরিণত হয়েছে।

বিনিরাইল মাছের মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি কিশোর আকন্দ বলেন, অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবের পর মেলাটি প্রথম প্রথম ক্ষুদ্র পরিসরে অনুষ্ঠিত হতো। প্রায় কয়েকশ বছর ধরে মেলাটির আয়োজন করে আসছেন এলাকার মুরুব্বিরা। আমাদের এলাকায় এ মেলাটি বর্তমানে একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়রা বলেন, বৃটিশ আমল থেকে শুরু হওয়া বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। মেলাটি কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মেলায় হাজার হাজার ক্রেতা, বিক্রেতা ও দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। মাছের মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। মেলায় কেনাবেচা যাই হোক না কেন, মেলাটি আমাদের কালীগঞ্জের ঐতিহ্য।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close