চুয়াডাঙ্গায় মৃদু শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়েছে। উত্তরের হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত। সূর্যের দেখা মিলছে না। পৌষের শেষে হাড় কাপানো শীতে স্থবির হয়ে পড়ছে। গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মত কুয়াশা ঝরছে। দিন রাত বইছে বাতাস। শীতের কারণে খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দিনের বেলায় যানবহন চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। শীত থেকে সাধারণ মানুষ নিজেদের রক্ষা করতে আগুন জ্বালিয়ে উঞ্চতা নেওয়ার চেষ্টা করছে। মানুষের উপস্থিতি তেমন একটা নেই সড়কে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেনা। শুক্রবার সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা
রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ১০০ শতাংশ। কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা ৫০০ মিটার।
জেলা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান বলেন, চুয়াডাঙ্গার উপর দিয়ে মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে আজ থেকে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আকাশ ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়া থাকার কারণে সূর্যের দেখা মিলছেনা। সূর্য না উঠায় শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। শৈত্য প্রবাহ আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। পৌষের শেষ দিকে মৃদু শৈত্য প্রবাহ শুরু হল। মাঘ মাসে শীত থাকতে পারে।
তিনি আরও বলেন, উত্তরের হিমেল বাতাসের কারণে হাড়কাপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। সাথে ঘন কুয়াশা রয়েছে। কুয়াশা ঝড়ে পড়ছে। কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা ৫০০ মিটার চলে এসেছে। ফলে সড়কে যানবহন নিয়ে সতর্কতার সাথে চলাফেরা করতে হবে। বাতাসে আদ্রতা ১০০ শতাংশ।
এদিকে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছে খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। তারা কাকডাকা ভোরে কাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন। কিন্তু কাজ না পেয়ে দীর্ঘ সময়ে বসে থেকে বাড়ি ফিরছেন। অনেকের শীতের কাপড় না থাকায় সড়কের পাশে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনে উঞ্চতা নিয়ে শীত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করছেন। সাধারণ মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে তেমন একটা বের হচ্ছেনা। সন্ধ্যার পর মানুষের উপস্থিতি তেমন একটা চোখে পড়ছেনা। হঠাৎ শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্র মানুষগুলো পুরাতন কাপড়ের দোকানে ভীড় করছেন। পছন্দ মত অল্প টাকায় শীতের কাপড় কিনছেন। হাসপাতাল গুলোতে বাড়তে শুরু করেছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা।
শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা বাড়তি রোগির চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার পুলিশ লাইন পাড়ার রিকসা চালক হারুন বলেন, পেটের তাগিদে ঘরের বাইরে বের হতে হয়েছে। পেটে ভাত না থাকলে শীত, গরম আর বর্ষায় কি আসে যায়। রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি কম। ঘুরে ঘুরে তেমন একটা ভাড়া হচ্ছেনা। অলস সময় পার করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা রেলবাজারের মুদি দোকানি ইমরান হোসেন জানান, সকাল থেকে দোকান খুলে বসে আছি। বেচা বিক্রি নেই। এত বেশি শীত ভাষায় বলে বোঝানো যাবেনা।
আলমডাঙ্গা রোয়াকুলি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, কুয়াশার পানি বরফের চেয়েও বেশি ঠান্ডা। হাতে লাগলেই শুলিয়ে যাচ্ছে আর কিছু ধরে কাজ করার কোন উপায় থাকছেনা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু কনসালটেন্ট আসাদুর রহমান মালিক খোকন জানান, হঠাৎ করে চুয়াডাঙ্গা শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়েছে। অসহনীয় শীত পড়েছে। শিশুরা শীতে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। রোগীর চাপ কয়েক গুণ বেড়েছে। শিশুদের সাবধানে রাখতে হবে।
সময়ের আলো/জেডআই