ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

ভোটার কম এলেও কেন্দ্রে ছিল উৎসবের আমেজ
প্রকাশ: সোমবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৪, ১:২৪ এএম  (ভিজিট : ৫৩৮)
শেষ হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ছিল ভোট দেওয়ার সবরকম আয়োজন। প্রতিটি বুথে ছিল স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, অমোচনীয় কালি, সিল-প্যাডসহ সব উপকরণ। ছিল পোলিং, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, সহকারী পোলিং অফিসার। একটি-দুটি করে প্রার্থীর এজেন্টও ছিল বুথে বুথে। কেন্দ্রের ভেতর-বাইরে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

এতসব আয়োজন যাদের জন্য ভোটকেন্দ্রে সেই ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। তবে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও কেন্দ্রের বাইরে ভোটের উৎসবের কোনো কমতি ছিল না। রোববার ঢাকার কামরাঙ্গীরচর, হাজারিবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, আদাবর, কল্যাণপুর, মিরপুর, ভাসানটেক, আগারগাঁও এবং ফার্মগেট এলাকার অসংখ্য ভোটকেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

জাতীয় নির্বাচনে রাজধানীর ঢাকার ভোটকেন্দ্রগুলোর ভেতরের চিত্র প্রায় সবগুলোতেই ছিল একই রকম। অর্থাৎ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। নির্বাচনি কর্মকর্তারা একরকম তীর্থের কাকের মতো পথ চেয়ে বসে ছিলেন ভোটারের জন্য। অনেকক্ষণ পর একজন ভোটার আসলে সবাই হয়ে ওঠেন তৎপর। একজন ভোটার এসে ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন, আবার ভোটারের অপেক্ষা। এভাবেই সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সময় পার করেছেন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নির্বাচনি কর্মকর্তারা।

তবে ভোটকেন্দ্রের বাইরের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। অধিকাংশ কেন্দ্রের বাইরেই ছিল ভোট ভোট উৎসব। কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীদের সমর্থকদের, বিশেষ করে প্রতিটি কেন্দ্রেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। কেন্দ্রের বাইরে ছোট ছোট বুথ করে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে সমর্থক ও স্বেচ্ছাসেবকরা ভোটারদের সহযোগিতা করছেন। কোন ভোটারের ভোট কোন বুথে, ভোটার নম্বর কত, ভোটারের নাম, বাবার নাম-সব লিখে তারা একটি করে স্লিপ ধরিয়ে দেন ভোটারের হাতে। এসব কাজ করার জন্য কেন্দ্রের বাইরে সমর্থকদের সরব উপস্থিতির কারণেই মূলত একটি উৎসব ভাব ছিল।

এ ছাড়া কেন্দ্রের বাইরে বিভিন্ন প্রার্থীর সারি সারি পোস্টার ভোটকেন্দ্রের বাইরের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়। রাজধানীর মিরপুর এলাকার মডেল একাডেমি কেন্দ্রের পুরো রাস্তাজুড়ে দড়িতে বেঁধে এমনভাবে পোস্টার টাঙানো ছিল যা দেখে চোখ জুড়িয়েছে ভোটার থেকে শুরু করে এখানে আসা প্রত্যেকের। এটি মূলত ঢাকা-১৪ আসনের একটি বৃহৎ কেন্দ্র। ঢাকার অন্য আসনে ৫-৬ জন করে প্রার্থী থাকলেও এ আসনে প্রার্থী ছিলেন ১০ জন। অন্যান্য কেন্দ্রের ভেতরে যেমন নির্বাচনি কর্মকর্তা ছাড়া এজেন্ট ছিল শুধু নৌকার, কিন্তু এ কেন্দ্রে এজেন্টও ছিল বেশি-৬ থেকে থেকে ৭ জন করে। একইভাবে অন্যান্য কেন্দ্রের বাইরে যেমন শুধু নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ভলেন্টিয়ারের সরব উপস্থিতি ছিল; কিন্তু এ কেন্দ্রের অন্যান্য প্রার্থীর ভলেন্টিয়ারেরও ভালো উপস্থিতি ছিল। এক কথায় মিরপুর মডেল একাডেমি কেন্দ্রে ভোটের উৎসবটি ছিল চোখে পড়ার মতো।

মিরপুর মডেল একাডেমি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার জোবায়ের হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, ‘এখানে অত্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোটাররা আসছেন তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন। এ কেন্দ্রে কোনো ধরনের ঝুঁকি এখনও চোখে পড়েনি। এমনকি কোনো প্রার্থীও কোনো ধরনের অভিযোগ করেননি। তবে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৪৯৩টি, ভোটার সংখ্যা ছিল ৩৭০০-এর বেশি।’
ঢাকা-১৪ আসনের মিরপুরের অন্যান্য এলাকায়ও ভোটের আমেজ দেখা গেছে। রোববার দুপুরে গিয়ে দারুস সালাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন। ভোটকেন্দ্রে ১০ প্রার্থীর এজেন্টও সেখানে ছিলেন। ভোটাররা আসছেন, তাদের ভোটার নম্বর বলে দিচ্ছেন এজেন্টরা। ভোটাররা তার পছন্দ প্রার্থীকে ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন।

কামরাঙ্গিরচরে বেলা বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে ভোটার উপস্থিতি : ঢাকা-২ আসনে কামরাঙ্গীরচরে আশরাফাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে ভোটার সংখ্যা। রোববার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও ১০টার পর থেকে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আটটি বুথ ও উচ্চ বিদ্যালয়ে ছিল ছয়টি বুথ। প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ হাজার ১৮ জন ও উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৮৯৬ জন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার ইশতিয়াক আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ২০০ ভোট পড়ে। তবে ১০টার পর থেকে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। আমরা যেটি লক্ষ করছি, বেলা যত বাড়বে ভোটারদের উপস্থিতি ততই বাড়বে।’

উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার হাবিবুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, ‘সকাল আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত ১৫৭টি ভোট পড়েছে। তবে নারী ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসছেন। পুরুষ ভোটারও পিছিয়ে নেই। কিন্তু সকাল ১০টার পর ভোটার উপস্থিতি বাড়ে।’

সরেজমিন দেখা গেছে, আশরাফাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৌকার বেশ কয়েকজন এজেন্ট থাকলেও ট্রাকের এজেন্টের দেখা মিলেছে দুয়েকজনের। এ ছাড়া আরও দুয়েকজন প্রার্থীর কোনো এজেন্ট ছিল না। আর উচ্চ বিদ্যালয়ে নৌকা ছাড়া অন্য কোনো দলের এজেন্টের দেখা মেলেনি।

ভরদুপুরে ভোটার বাড়ে মোহাম্মদপুরে
রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজে সকাল থেকে ভোটাররা আসতে থাকলেও দুপুরের দিকে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ে। সকালের দিকে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও ভরদুপুরে ভোটার বাড়ে মোহাম্মদপুরে। কেন্দ্রে আশা ভোটাররা বলেন, নির্বাচনি পরিবেশ খুবই ভালো। নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোটাররা ভোট দিচ্ছেন। ভোটকেন্দ্রে আসতে কারও কোনো আশঙ্কা নেই। সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন। ভোট দিতে আসা এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন। এবার সবচেয়ে বেশি ভোটার উপস্থিত হয়েছেন। ভোটের পরিবেশ খুবই সুন্দর।

ঢাকা কলেজ কেন্দ্রে আড়াই ঘণ্টায় ১৬০ ভোট : রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ একটি কেন্দ্র ঢাকা কলেজে সকাল ৮টা থেকে আড়াই ঘণ্টায় ভোট পড়ে ১৬০টি। এ কেন্দ্রের নারী ভোটকেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৩৭৮৫ জন হলেও আড়াই ঘণ্টায় ভোট পড়ে ৫৫টি। এ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মামুনুর রশিদ এ তথ্য জানান। ঢাকা কলেজের পুরুষ কেন্দ্র রয়েছে দুটি। এর একটিতে ভোটার সংখ্যা ২৩০০, আরেকটিতে ২৪৫০। এর মধ্যে ভোট কাস্ট হয়েছে ১০৫টি। সব মিলিয়ে ঢাকা কলেজের পুরো কেন্দ্রে দুই ঘণ্টায় ভোট পড়ে ১৬০টি।

ভোটের পরিবেশে সন্তুষ্ট ব্রিটিশ পর্যবেক্ষক মার্টিন ডে : সকাল ১০টার দিকে ঢাকা কলেজ কেন্দ্রে ভোটের পরিবেশ দেখতে আসেন যুক্তরাজ্য থেকে আসা নির্বাচন পর্যবেক্ষক মার্টিন ডে। ঢাকা কলেজের প্রতিটি বুথ ঘুরে দেখেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বহিনীর সদস্য, নির্বাচনি কর্মকর্তারা এবং নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও। বুথে বুথে গিয়ে মার্টিন ডে নির্বাচনি কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান, সব প্রার্থীর এজেন্ট উপস্থিত আছেন কি না, ভোট দেওয়ার গোপন কক্ষে ভোট দিতে ভোটারের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে যেসব লক লাগানো রয়েছে সেগুলো মজবুত কি না-এর কম নানা বিষয় তিনি জানতে চান কর্মকর্তাদের কাছে। পরিদর্শন শেষে কেন্দ্রের বাইরে এলে অপেক্ষমাণ গণমাধ্যম কর্মীরা ভোটের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে মার্টিন ডে বলেন, ‘এখন কেবল সকাল ১০টা বাজে। দুই ঘণ্টায় আমি মাত্র তিনটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। সারা দিন আরও অনেক কেন্দ্র পরিদর্শন করব, তারপর হয়তো আমি পুরো নির্বাচন সম্পর্কে আমার মতামত দিতে পারব। তবে সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ঘুরে যে নির্বাচনি পরিবেশ আমি দেখেছি-তাতে আমি সন্তুষ্ট।’

শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হচ্ছে : তাপস
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হচ্ছে। রোববার সকাল ৮.৩৯টায় ধানমন্ডি ৭/এ-তে অবস্থিত ডক্টর মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ভোট দিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি।

মিরপুরে বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের শেষ সময়ের ভোটের তোড়জোড়
রাজধানীর মিরপুরে বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজে শেষ সময়ে ভোটারদের ভোট দেওয়ার তোড়জোড় দেখা যায়। রোববার বিকাল ৪টার আগে রাজধানীর মিরপুরের বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজে ভোট দেওয়ার তোড়জোড় দেখা গেছে ভোটারদের মধ্যে। শেষ মুহূর্তে নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীরা ভোট দিতে আসেন। 

এ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, এ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৩৭৩১ জন। দুপুর ২টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে ভোট পড়ে ৫৯৮টি। তিনি বলেন, সকাল থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটাররা সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দিয়েছেন।

অপর একটি কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ছিল ৩৭০৯টি। দুপুর ২টা পর্যন্ত মোট ভোট পড়ে ৩৪৬টি। এ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আফসার উদ্দিন সময়ের আলোকে বলেন, ‘সকাল থেকে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও দুপুরের দিকে উপস্থিতির হার একটু বাড়ে। তবে ভোট সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে। কোনো প্রার্থী বা ভোটারদের কোনো অভিযোগ ছিল না।’

সময়ের আলো/আরএস/ 







https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close