প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৪, ৯:১৯ পিএম (ভিজিট : ৬৯৪)
কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সেনাভরি নদী। এ নদী পার হয়ে উপজেলা শহরে যাতায়াত করে কোদালকাটি ইউনিয়নের ৬০ গ্রামের মানুষ। মাত্র ৭০ মিটার চওড়া এ নদীতে বন্যা মৌসুমে একমাত্র ভরসা নৌকা ও শুকনো মৌসুমে কাদা পানিতে যাতায়াত করতে হয় তাদের। যুগ যুগ ধরে সদর ইউনিয়নের খাঁজার ঘাট এলাকায় সোনাভরি নদী ওপর একটি সেতুর অভাবে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চরবাসী।
তাদের দাবি, একটি সেতু নির্মাণ করা হলেই ঘুরতে পারে চর এলাকার অর্থনৈতিক চাকা, বদলে যেতে পারে জীবন-বৈচিত্র্য।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমে উপজেলার সদর ইউনিয়নের খাঁজার ঘাটের সেনাভরি নদী পারাপার করা হয় একমাত্র নৌকা দিয়ে এবং শুকনো মৌসুমে কাদা-পানিতে পারাপার করতে হয়। এভাবেই বছরের পর বছর কষ্ট করে নদী পারাপার হচ্ছে কোদালকাটি ইউনিয়নের বদরপুর, আনন্দ বাজার, সাজাই, চরসাজাই, পাখিউড়া, হাতিমারাসহ প্রায় ৬০ গ্রামের মানুষ। এছাড়া কোদালকাটির চরে রয়েছে ২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি দাখিল মাদ্রাসা, ৪টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ও কয়েকটি হাফেজিয়া মাদ্রাসাসহ বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন সকাল-বিকেল নিয়মিত বাজার বসে নদীপাড়ের এ বাজারে।
জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন কুড়িগ্রাম জেলার ১১১ বর্গ কিলোমিটারের ছোট্টে একটি উপজেলা ‘রাজীবপুর’। রাজীবপুর সদর, কোদালকাটি ও মোহনগঞ্জ এ তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলা। উপজেলা সদর থেকে পুরোটাই সোনাভরি নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন কোদালকাটি ইউনিয়ন। এ এলাকায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য ধান, পাট, গম, ভুট্টা, বাদাম ও বিভিন্ন প্রকার রবি ফসলসহ শাক-সবজি দ্বারা ভরপুর। এতে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে রাজীবপুর সদর ও রৌমারীর বিভিন্ন হাট-বাজারসহ সারাদেশে বিক্রির জন্য পার করতে হয় সোনাভরি নদী। এছাড়া জীবন বাঁচানোর তাগিদে শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, হাট-বাজারসহ নিত্য প্রয়োজনে চরবাসীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুগ যুগ ধরে পারাপার হতে হচ্ছে ওই নদী। এ এক অসহনীয় দুর্ভোগে রয়েছেন এই অঞ্চলে। একটি সেতু নির্মাণের অভাবে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষের।
ওই এলাকার শিক্ষক শিরিনা খাতুন, আকতারুজ্জামান, বেলাল হোসেনসহ অনেকে বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও সুফল ভোগ করতে পারছেন তারা। দেশের সবখানে সেতু-কালভার্ট হচ্ছে কিন্তু এই এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ হয় না। নির্বাচন এলেই এই অঞ্চলের মানুষকে জনপ্রতিনিধিরা উন্নয়নের নানা ধরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচন শেষে তাদের আর মাঠে দেখা যায় না। চর এলাকা নিয়ে ভাবেও না কেউ। দুঃখের বিষয় শুধু সেতুর দাবি করেই গেলাম কিন্তু বাস্তবায়ন পেলাম না।
কথা হয় কোদালকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবির ছক্কু ও ওয়ার্ড সদস্য রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তারা বলেন, খাঁজার ঘাটে একটি সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘ দিনের। সবচেয়ে বড় কষ্ট হয় কোনো গর্ভবতী মা এবং মুমূর্ষ রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে। ওইখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে যাতায়াতের সমস্যা দূর হবে। এতে এলাকার মানুষ শান্তি পাবে।
রাজীবপুর উপজেলা প্রকৌশলী মনছুরুল হকের দাবি, সব প্রকল্পেই খাঁজার ঘাটের সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন হলেই কাজ শুরু করা হবে।
রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আহমেদের ভাষ্য, খাঁজার ঘাট এলাকা পরিদর্শন করে সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত সেতু নির্মাণ হয়ে যাবে এবং ওই এলাকার মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।