ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ধনপোতা ঢিবি: খননে বেরিয়ে আসছে পোড়া ইটের চওড়া দেয়াল
প্রকাশ: বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৪, ৩:১৮ এএম  (ভিজিট : ৭২২)
যশোরের মনিরামপুরের খেদাপাড়া অঞ্চলের ধনপোতা ঢিবিতে চলছে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন। ২০ দিন ধরে ৮টি বর্গের খনন কাজে এরই মধ্যে বেরিয়ে এসেছে পোড়া ইটের ৫/৬টি চওড়া দেয়ালের অংশ। প্রাচীন স্থাপনার এ অংশগুলো ছাড়াও পাওয়া গেছে মৃৎপাত্র, পাথরের টুকরা, বাটি, পশুর হাড় ও লোহার পেরেক।

ধনপোতা ঢিবির খনন কাজ পরিচালনা করছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের খুলনা অঞ্চলের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ধনপোতা ঢিবিতে পাওয়া ইটের সঙ্গে মনিরামপুরের দোনার অঞ্চলের দমদম পীরের ঢিবি ও কেশবপুরের ভরত ভায়নার দেউল ঢিবির মিল রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই স্থাপনাগুলো খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ থেকে দশম শতকের মধ্যকার সময়ের। ঢিবিতে পাওয়া এই দেয়াল উপাসনালয় না-কি আবাসস্থলের তা এখনও স্পষ্ট না। কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি জানুয়ারি মাসজুড়েই এ খনন কাজ চলবে। অন্তত আরও ৮টি বর্গে খনন কাজ চলবে। কাজ শেষ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।

গত রোববার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ধনপোতা ঢিবিতে ৩৬ বর্গমিটারের ৮টি বর্গে খনন কাজ করছেন ১৭ জন শ্রমিক। ঢিবির একটি বর্গের খনন হয়েছে মাটির স্তর থেকে ২.৬১ মিটার। যার গভীরতা সমুদ্রের সমতল থেকে ৪.৯১ মিটার। অন্য বর্গগুলোর খনন কাজ কিছুটা কম হয়েছে। খনন কাজ পরিদর্শন করতে এসেছেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ খুলনা অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন। আশপাশের এলাকার অনেক নারী-পুরুষও এসেছেন খনন করে পাওয়া পুরোনো আমলের নিদর্শন দেখতে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের দিকে মনিরামপুরে দমদম পীরের ঢিবিতে খনন কাজ হয়েছিল। তখন এক অনুসন্ধানে খেদাপাড়া অঞ্চলের ধনপোতা ঢিবির সন্ধান মেলে। এরপর গত বছর ১০ ডিসেম্বর ধনপোতা ঢিবির আনুষ্ঠানিক খনন কাজ শুরু হয়। শুরুতে ৬ জন শ্রমিক দিয়ে একটি বর্গে খনন কাজ শুরু হয়। দ্বিতীয় দিনের খননে সন্ধান মেলে একটি দেয়ালের। 

স্থানীয়রা বলছেন, সনাতন ধর্মে বিরাট রাজার যে ইতিহাস রচিত হয়েছে, সেই বিরাট রাজার বসতি ছিল এখানে। বহুকাল আগে এখানে স্বরূপ নামে একটি নদী ছিল। ওই নদীতে একসময় জাহাজ চলত। নদীর তীরে ছিল বিরাট রাজার বসবাস। তিনি সেখানে বসে বিচারকাজ চালাতেন। বর্তমানে ধনপোতা ঢিবিটির মালিক খেদাপাড়া অঞ্চলের পঙ্কজ বিশ্বাসসহ তাদের গোত্রের ৫/৬ জন। পঙ্কজ বিশ্বাসের ছেলে প্রতাপ বিশ্বাস বলেন, ৫৭ শতক এলাকার ঢিবিটি আমাদের ঠাকুর দাদাদের পৈতৃক সম্পদ। আমাদের সাত পুরুষ এখানে কোনো বসতি দেখেননি। তিনি বলেন, আমরা এখানে চাষাবাদ করি না। ঢিবি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আশপাশের শত শত বসতির গবাদিপশুর খাদ্য ও রান্নার জ্বালানির জোগান হয় এই ঢিবি থেকে। 

কালীদাস নামে স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, ৩০/৪০ বছর আগে একবার এই ঢিবির খনন হয়েছিল। সে সময় পাথরের সিঁড়ি পাওয়া যায়। আমি এক মণ ওজনের একটি পাথর কুড়িয়ে নিয়েছিলাম। পরে খননকাজ বন্ধ হয়ে যায়। 

হারুন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, এই ঢিবি নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। ঢিবি খননের কথা শুনে দেখতে এসেছি। এখানকার বড় বড় গাছ কেউ কাটার সাহস করে না। এই ঢিবি নিয়ে অনেক ভয়ের গল্পও আছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, ধনপোতা ঢিবি খননে এ পর্যন্ত বেশ কটি চওড়া ইটের দেয়াল পাওয়া গেছে। ধনপোতা ঢিবিতে পাওয়া ইটের সঙ্গে মনিরামপুরের দোনার অঞ্চলের দমদম পীরের ঢিবি ও কেশবপুরের ভরত ভায়নার দেউল ঢিবির সঙ্গে মিল রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখানকার স্থাপনাগুলো খ্রিস্টীয় ৬ থেকে ১০ শতকের মধ্যকার সময়ের। খনন কাজ শেষ হলে বিস্তারিত নিশ্চিত হওয়া যাবে।

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close