ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যু বৃদ্ধির নেপথ্যে জলবায়ু পরিবর্তন
প্রকাশ: সোমবার, ১ জানুয়ারি, ২০২৪, ২:১৫ এএম আপডেট: ০১.০১.২০২৪ ৮:১০ এএম  (ভিজিট : ৫৭৫)
নব্বই দশকে বাংলাদেশে হাতে গোনা মানুষ বজ্রপাতের শিকার হয়ে মারা যেত। সেই সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে, দেশে বছরে এখন গড়ে ৩০০ মানুষের মৃত্যুর কারণ বজ্রপাত। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি রোববার বাংলাদেশের বজ্রপাত এবং এর প্রভাবে মৃত্যু নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সংবাদমাধ্যমটি নাসা, বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের বরাতে জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই নাটকীয়ভাবে বজ্রপাতের মৃত্যু বেড়ে গেছে।

বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে বজ্রপাতে স্বজন হারানো কয়েকজনের কথা তুলে ধরেছে। তাদের একজন মামুন। যিনি ২০২১ সালের আগস্টে নিজের বিয়ের দিন বাবা, দাদা-দাদি, চাচা-চাচি, চাচাতো ভাই-বোনসহ ১৬ সদস্যকে হারিয়েছিলেন। মামুন সেই বীভৎস স্মৃতি স্মরণ করে বিবিসিকে জানিয়েছেন, তার আত্মীয়রা নৌকায় করে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। তখন ঝড় শুরু হলে তারা নদীপারের একটি টিনশেডের নিচে আশ্রয় নেন। সেখানেই আঘাত হানে বজ্র। এতে ঘটনাস্থলেই অনেকের মৃত্যু হয়।

মামনু বলেছেন, আমি প্রচণ্ড জোরে শব্দ শুনতে পাই। দ্রুত পরিবারের সদস্যদের কাছে যাই। সেখানে গিয়ে আমি হতবিহ্বল ও বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখতে পাই।  কেউ কেউ মরদেহকে জড়িয়ে ধরছিল, আহতরা ব্যথায় কাঁদছিল, শিশুরা চিৎকার করছিল, আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি। আমি বুঝতে পারছিলাম না কার কাছে আগে যাব। যখন আমি বাবার মরদেহ দেখতে পাই। তখন কেঁদে উঠি। আমি খুবই বিস্মিত এবং অসুস্থ হয়ে পড়ি।

নতুন কাপড় পড়ে বিয়েতে গেলেও ওইদিন সন্ধ্যায় তাদের সবাইকে সাদা কাফন পরিয়ে সমাহিত করা হয়। আর বিয়ের খাবার গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়। মামুন পরে বিয়ে করেন। কিন্তু তিনি তার বিবাহবার্ষিকী পালন করেন না। কারণ এ সময়টা আসলে সেই ভয়াবহ স্মৃতি তার মনে পড়ে যায়। মামুন বলেছেন, ‘ওই ঘটনার পর আমি এখন সত্যিই বৃষ্টি এবং বজ্রপাতকে ভয় পাই।’

বাংলাদেশে এখন বন্যায় যে সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়, এরচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় বজ্রপাতে। এত মানুষের মৃত্যুর ব্যাপারে বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিবিসিকে বলেছেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, পরিবেশগত পরিবর্তন, জীবন ব্যবস্থা সবকিছু বজ্রপাতে মৃত্যু বৃদ্ধি করছে।’

বজ্রপাতে মৃত্যু এতটাই বেড়েছে যে বাংলাদেশে এখন বন্যা, সাইক্লোন, ভূমিকম্প এবং খরার সঙ্গে বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বজ্রপাতে যারা মৃত্যুবরণ করেন তাদের বেশিরভাগই কৃষক। যারা খোলা মাঠে কৃষিকাজ করার সময় প্রাণ হারিয়েছেন। বিবিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশ ছাড়া ভারতেও বজ্রপাত একটি বড় চিন্তার কারণ। ভারতেও গত কয়েক বছরে বজ্রপাতে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তবে বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে এ সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমেছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা নিশ্চিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে আরও বেশি করে লম্বা লম্বা গাছ লাগাতে হবে, যেন বজ্রপাত ওই গাছগুলোতেই হয়।  বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে বন উজাড় হয়েছে সেখানে বেশি গাছ লাগাতে হবে। এ ছাড়া বিস্তৃত পরিসরে বজ্র প্রতিরোধী শেড নির্মাণেরও পরামর্শ দিয়েছেন তারা, যেন কৃষকরা প্রয়োজনে সেখানে আশ্রয় নিতে পারে। ঝড়ের আগাম সতর্কবার্তা দেওয়ার ব্যবস্থাকে আরও জোরালো করার পরামর্শও তারা দিয়েছেন, যেন মানুষ আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে পারে। 

সাতক্ষীরায় বজ্রপাতে প্রাণ হারানো আবদুল্লাহর কথা তুলে এনেছে বিবিসি। তার স্ত্রী রেহানা স্বামীর মৃত্যুর দিনের কথা বলতে গিয়ে জানান, সেদিন আকাশ ছিল পরিষ্কার। আরও কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে ফসলের মাঠে গিয়েছিল আবদুল্লাহ। বিকাল ফুরিয়ে যেতেই ব্যাপক ঝড় শুরু হলো। একপর্যায়ে বজ্রপাতের শিকার হলেন তার স্বামী। রেহানা জানান, অন্য কৃষকরা আবদুল্লাহকে রাস্তার পাশের একটা দোকান পর্যন্ত এনেছিল, তবে ততক্ষণে তিনি আর বেঁচে ছিলেন না।  

বজ্রপাত মোকাবিলার ক্ষেত্রে একটা সমস্যা হলো-সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকা প্রান্তিক মানুষদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ঘাটতি। তাদের বেশিরভাগই সেলফোন ব্যবহার করে না। এর চেয়েও বড় সমস্যা যেটি, সেটি হলো অনেকেই জানেন না বজ্রপাত কতটা বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যু বৃদ্ধির নেপথ্যে জলবায়ু পরিবর্তন
ভয়াবহ হতে পারে। বজ্রপাতের শিকার হওয়ার আশঙ্কার কথা মাথায় থাকে না বেশিরভাগ মানুষেরই। 

আবদুল্লাহর মৃত্যুর দিন তার সঙ্গেই ছিলেন কৃষক রিপন হোসেন। সেদিনের ঘটনা দেখার আগ পর্যন্ত তিনি জানতেন না, বজ্রপাত কতটা ভয়াবহ হতে পারে। ‘একটা বড় ধরনের উচ্চৈঃস্বরের শব্দ, এরপর আমি বিপুল পরিমাণে ফ্ল্যাশিং লাইট দেখতে পেলাম। বড় আগুনের কুণ্ডলী যেন। আমি মুহূর্তেই বিদ্যুতের শক অনুভব করি এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। পরে চোখ খুলেই দেখি, আবদুল্লাহ মারা গেছে।’ রিপন নিজেই বিস্মিত যে তিনি বেঁচে আছেন। আবদুল্লাহর কথা ভেবে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। চোখ বুঝলেই সেদিনের কথা মনে পড়ে আমার। বিবিসিকে বলেন তিনি।

সময়ের আলো/আরএস/ 







https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close