ই-পেপার সোমবার ২৮ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ২৮ অক্টোবর ২০২৪

শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪৩০
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৩, ৮:১১ এএম আপডেট: ১৪.০৪.২০২৩ ৮:৪২ এএম  (ভিজিট : ২৯২৪)
আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা বর্ষপঞ্জির হিসাবে ১৪৩০ বঙ্গাব্দে পদার্পণের দিন। বাংলা সনের প্রথম ঋতুর প্রথম দিন। আজ ভোরের আলো ফুটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে চিরায়ত উৎসবে মেতে নতুন বছরকে বরণ করে নেবে বাঙালি। মূলত পহেলা বৈশাখের রূপ মূর্ত হয়ে ওঠে বর্ণিল সাজের মধ্য দিয়ে। এ সাজ যেমন বাঙালির পোশাকে ফুটে উঠে, তেমনি ফুটে উঠে মেলা ও শোভাযাত্রায়। মেলার পসরাতেও দৃশ্যমান হয় রঙের বৈচিত্র্য, দৃশ্যমান হয় হরেক রকম খাবারের পাশাপাশি গৃহস্থালি তৈজসেও। এমনকি প্রকৃতিও সাজে বাহারি রঙের ফুল আর ফসলে। এককথায় নানা রঙের সম্মিলনে পূর্ণতা পহেলা বৈশাখ। 

এদিকে এখন মানুষে মানুষে হানাহানি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। রয়েছে বৈশ্বিক হানাহানিও। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চরম ধস। বিশ্বব্যাপী এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর মাঝে নতুন সূর্য, নতুন এক সকালে আজ শুরু হচ্ছে নতুন বছর। বাংলা নববর্ষে এবারের প্রত্যাশা ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’। অর্থাৎ হানাহানির পৃথিবীতে শান্তি নেমে আসুক।

নববর্ষ বিদায়ি বছরের গ্লানি মুছে দিয়ে বাঙালি জীবনে ওড়ায় নতুনের কেতন, চেতনায় বাজায় মহামিলনের সুর। সব ভেদাভেদ ভুলে সব বাঙালিকে দাঁড় করায় এক সম্প্রীতির মোহনায়। নববর্ষের আগমনী ধ্বনি শুনলেই সমগ্র জাতি নতুনের আহ্বানে জেগে ওঠে। আবহমান বাংলার চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনার মূলে রয়েছে এক অসাধারণ অনুষঙ্গ, সেটি হলো বাংলা নববর্ষ। জরাজীর্ণকে দূরে ঠেলে আজ স্বপ্ন দেখার দিন, নতুন আলোয় অবগাহনের দিন। বাংলার ঘরে ঘরে আজ উৎসবের আমেজ। পহেলা বৈশাখ বাঙালির সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব। হাজার বছরের ঐতিহ্যের বহমানতায় আজ বাঙালি হারিয়ে যাবে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে 

আজকের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরোনো সব গ্লানি মুছে ফেলে সবাই গেয়ে উঠবে নতুন দিনের গান। বিগত বছরের আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার হিসাব চুকিয়ে শুরু হবে নতুন এক পথচলা। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে নববর্ষ উদযাপনে একসঙ্গে গাইবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’। রমনা বটমূলে ছায়ানটের সংগীতে নববর্ষের আলো ফুটে উঠবে। আজ সকাল ৬টায় রমনার বটমূলে শুরু হবে ছায়ানটের বাংলা বর্ষবরণের আয়োজন। রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় ও স্বাস্থ্যবিধি বিবেচনায় রেখে এবারের আয়োজনে শিল্পীসংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। এই বর্ষবরণে মূল আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই অনন্য শোভাযাত্রাকে বিশ্বসংস্কৃতির অমূল্য সম্পদের মর্যাদা দিয়েছে ইউনেস্কো। বরাবরের মতো মঙ্গল শোভাযাত্রা সকাল ৯টায় শুরু হবে। টিএসসি থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি উপাচার্যের বাসভবন মোড় ঘুরে আসবে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারা দেশে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

মোগল সম্রাট আকবর উপলব্ধি করেন, চান্দ্র মাসনির্ভর হিজরি সনের আলোকে রাজস্ব ও খাজনা আদায় ফসল উৎপাদনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তাই রাজস্ব আদায়ে শৃঙ্খলা অর্জনের জন্য প্রবর্তন করেন সৌরসন কিংবা গ্রেগরিয়ান দিনপঞ্জিভিত্তিক বঙ্গাব্দের। বাংলার মোগল সুবেদার মুর্শিদ কুলি খান আকবরের রাজস্বনীতি গ্রহণ করে ‘পুণ্যাহ’-এর রীতি উদ্ভব করে এই দিনটির সঙ্গে উৎসবের যোগসূত্র ঘটান। বাংলায় পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সঙ্গে ব্যবসারও যোগ ঘটে হালখাতার হিসাব মিলিয়ে নতুন খাতা খোলার, ক্রেতাদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়নের, যা আজও বিশেষ করে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রচলিত। তবে বাঙালির নববর্ষ সব বাঙালির কাছে একভাবে আসেনি। কারও কাছে এসেছে খরা হয়ে, কারও কাছে খাজনা দেওয়ার সময় হিসেবে, কারও কাছে বকেয়া আদায়ের হালখাতা হিসেবে, কারও কাছে মহাজনের সুদরূপে, আবার কারও কাছে এসেছে উৎসব হিসেবে।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধানরা। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। আরও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। বাংলা নববর্ষ উদযাপনে দেশের সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে বৈশাখি র‌্যালি আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া কুইজ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লোকজ মেলার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন। সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার ও ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে ও কারাবন্দিদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এবং কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব জাদুঘর ও প্রত্নস্থান সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত আজ। শিশু-কিশোর, ছাত্রছাত্রী, প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিনা টিকেটে প্রবেশের সুযোগ থাকছে।

সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে এবং যথাযথ আড়ম্বরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। অভিজাত হোটেল ও ক্লাবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের আয়োজন রাখা হয়েছে। সব সরকারি-বেসরকারি টিভি, বাংলাদেশ বেতার, এফএম ও কমিউনিটি রেডিও বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি চ্যানেলগুলো রমনা বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে। দেশের পত্র-পত্রিকায় বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close