বুড়িগঙ্গার পাড় ঘেঁষে ঢাকার কেরানীগঞ্জে ছোট-বড় প্রায় ৭ হাজার ৫০০ পোশাক কারখানা আছে। এসব পোশাক কারখানার মোট শ্রমিকের ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশই শিশু শ্রমিক। যাদের বয়স ৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। পোশাক কারখানায় জড়িত এসব শিশু শ্রমিকরা সাধারণ মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ১৩ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করেন। এ ছাড়া কারখানা মালিকের নির্যাতন-নিপীড়ন তো রয়েছেই।
বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের (বিএলএফ) পরিচালিত এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার সংগঠনটির অফিসে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরেন বিএলএফ এর উপপরিচালক মাহমুদুল হাসান খান।
জরিপে বলা হয়, কেরানীগঞ্জে ৭৫০০ ছোট-বড় স্থানীয় পোশাক কারখানায় প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক কাজ করে। যাদের মধ্যে পাঁচ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি এবং ১৫-১৭ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে মাহমুদুল হাসান খান বলেন, এসব পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করে। যাদের বেতন ৫ থেকে ১৬ হাজার টাকার মধ্যে।
কেরানীগঞ্জের স্থানীয় পোশাক প্রস্তুতকারী কারখানার কর্মপরিবেশ সম্পর্কে মাহমুদুল হাসান খান বলেন, সাধারণ মৌসুমে, শিশু শ্রমিকরা প্রতিদিন গড়ে ১৩ ঘণ্টা কাজ করে থাকে তবে যখন কাজের মৌসুম থাকে তখন তাদের দিনে কমপক্ষে ১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।
নিয়োগ কর্তারা প্রত্যেক শ্রমিকদের সাথে মৌখিক চুক্তি করেন, যার কারণে শ্রমিকদেরকে নিয়মিত মজুরি প্রদানের কোন ব্যবস্থা নেই।
১৪ বছরের কম বয়সী বেশিরভাগ শ্রমিক শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করে যদিও তারা এই ২ বছরের সময়কালে কোনও সুবিধা পায় না।
স্থানীয় পোশাক প্রস্তুতকারী কারখানার শিশু শ্রমিক সহ শ্রমিকদের ৯০ শতাংশ (মহিলা শ্রমিক ছাড়া) কারখানায় থাকে শ্রমিকদের কোন ছুটি নেই, শ্রমিকরা "কাজ নেই, বেতন নেই" ভিত্তিতে কাজ করে।
শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই বললেই চলে কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত আলো, বাতাস, ফায়ার সেইফটিসহ পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কোন নিয়ম মানা হয় না।
মতবিনিময় সভায় বিএলএফ এর চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, কেরানীগঞ্জের শিশু শ্রমের যে পরিস্থিতি সেটা একেবারে বন্ধ করে দেওয়াও সম্ভব নয়। এখানের অবস্থা খুবই নাজুক। যেখানে শিশুরা কাজ করে, সেখানেই ঘুমায়। শুধু তাই নয়, এসব শিশুর কাজ নেই, বেতন নেই ভিত্তিতে কাজ করে। এজন্য সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রায় ৮০ শতাংশ শিশুই বাধ্য হয়ে এসব কর্মক্ষেত্রে কাজে আসে। যেসব শিশু এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করে তারা বেশিরভাগই দরিদ্র পরিবারের। এদের মধ্যে আবার অধিকাংশই ঢাকার বাইরে থেকে আসা। ফলে পরিবারের আয়ের জন্য শিশুদের কাজে পাঠাতে হয়।
মতবিনিময় সভায় এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএলএফের মহাসচিব এ জেড এম কামরুল আনাম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) বাংলা বিভাগের প্রধান রুহুল আমিন জ্যোতি, লেবার রাইটস জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান প্রমুখ।