প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২২, ৪:২৮ এএম (ভিজিট : ২২৬)
বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পেলে অতি দরিদ্ররা মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন জাতীয় খাবার কমিয়ে দেয়। আমিষের চাহিদা মেটাতে তারা তখন সবজি ও ডিম খাওয়া বাড়িয়ে দেয়। অতি দরিদ্র পরিবারের মোট খাদ্য ব্যয়ের ৩২ শতাংশই চাল কিনতে খরচ হচ্ছে বলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁয়ের বিআইডিএস কার্যালয়ে আয়োজিত সেমিনারে ‘বাংলাদেশে মাইক্রো ডেটা থেকে পরিবারের খাদ্য চাহিদার ধরন এবং স্থিতিস্থাপকতা সম্পর্কে আমরা কী শিখি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিআইডিএসের গবেষক ওয়াসেল বিন সাদাত এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এতে সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়েক সেন। এই গবেষণাটি ২০১৬ সালের কুইডস ডেটার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এতে ১৩২টি খাদ্যপণ্যকে ৯টি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে।
সেমিনারে ওয়াসেল বিন সাদাত বলেন, ‘দরিদ্র মানুষের আয়ের চেয়ে যখন খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায় তখন তারা মাছ, মাংস, ফলমূলের মতো পুষ্টিকর খাবার কমিয়ে দেয়। তবে দাম বাড়লেও প্রধান খাদ্য পণ্য চালের ভোগ কমে না। পাশাপাশি সবজি জাতীয় পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। অর্থাৎ অন্যান্য খাবার কম খেয়ে তারা ভাত ও সবজি বেশি খেয়ে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে।’
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করা জনগোষ্ঠীর মোট খাদ্য ব্যয়ের ৩২ শতাংশ ব্যয় হয় চালের জন্য। যেখানে দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের মোট ব্যয়ের ২৯ শতাংশ ব্যয় করে চালের জন্য। তবে খাদ্যের পেছনে মোট জাতীয় ব্যয়ের ২১ শতাংশ খরচ হয় চালের পেছনে।
এদিকে করোনার সময়ের মানুষের আয়ে প্রভাব পড়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়, প্রথম লকডাউনের সময় মানুষের আয় প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছিল। তবে লকডাউনের শেষে তা ৪৩ শতাংশে নেমে আসে। আর দ্বিতীয়বার লকডাউনের শেষে আয় হ্রাসের পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র ৪ শতাংশ। অর্থাৎ মানুষের আয় পুনরুদ্ধায় হয়ে আসে লকডাউন ওঠে যাওয়ার ফলে।
গবেষণার বিষয়ে ড. বিনায়ক সেন বলেন, গবেষণায় ওঠে এলো দাম বাড়লে মানুষের পুষ্টিকর খাবারের ক্ষেত্রে এক ধরনের ছাড় দিতে হয়। এটা একটি দারুণ তথ্য এসেছে। আরেকটি বিষয় উঠে এসেছে, সেটা হলো কোভিডের কারণে আয় হ্রাসের পরিমাণ ৭০ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশে উঠে এসেছে। এখানে দারুণ একটি পুনরুদ্ধার ঘটেছে।’ আমরা যে শুধু পলিসি নিয়ে কাজ করি না, বরং মাইক্রো অর্থনীতি নিয়ে কাজ করি-আজকের গবেষণা তার একটি প্রমাণ বলেও মন্তব্য করেন এ গবেষক। প্রতিবেদন প্রকাশের পর এক প্রশ্নের জবাবে ড. ওয়াসেল বলেন, ‘অনেক সময় বলা হয় যে মুরগির দাম বেড়ে গেলে মানুষ মাছ খাবে বেশি কিন্তু বাস্তবে তা ঘটে না। মাছের দাম বাড়লে ফল ও ডালের ভোগ বাড়বে। আবার মাংসের দাম বাড়লে সব কিছুর ভোগ কমে আসবে।’
আরএস/