প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২২, ৬:০৯ এএম আপডেট: ২৭.১০.২০২২ ৭:৩২ এএম (ভিজিট : ২২৭)
করোনা মহামারির সময় পরিবারের সব সদস্যের দায়িত্ব নিতে গিয়ে পুরুষের চেয়ে বেশি চাকরি হারিয়েছেন নারীরা। এসব নারী পরবর্তী সময়ে তাদের চাকরি ফিরে পাননি। বুধবার (২৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ মিলনায়তনে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে কোডিড-১৯ মহামারির আর্থ-সামাজিক প্রভাব এবং নীতির প্রতিক্রিয়া : ভবিষ্যতের জন্য পাঠ’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধে এ তথ্য উঠে আসে।
এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ব ব্যাংকের দারিদ্র্য ও ইকুইটি গ্লোবাল প্র্যাকটিসের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ড. আয়াগো ওয়াম্বাইল। সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। অনুষ্ঠানে গবেষণার পর্যালোচনা করেন বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. কাজী ইকবাল। বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণায় বলা হয়, কোভিডের সময় ঢাকার মতো শহরে নারী-পুরুষ উভয়েই শেয়ার করে কাজ করেছেন। অন্যদিকে চাকরিও হারিয়েছেন অনেকে। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের চাকরি হারানোর হার বেশি। চাকরি হারানোর পর ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত তিন ভাগের দুই ভাগ নারী তাদের চাকরি ফিরে পেয়েছেন।
ড. আয়াগো ওয়াম্বাইল তার গবেষণা প্রবন্ধে বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির পর বাংলাদেশে দারিদ্রের হার হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী ধারায় গেছে। ২০১৯ সালে দেশে দারিদ্র্য বাড়ার হার ছিল ১১ দশমিক ৩ শতাংশ, কিন্তু করোনা আসার পর ২০২০ সালে এ হার বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৭ শতাংশে। এর ফলে দারিদ্র্যের ওপর প্রভাব পড়েছে বেশি। নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছেন অনেকে। বেশিরভাগের আয় কমে গেছে। বিশেষ করে নারী, তরুণ ও শহরের বাসিন্দা এ প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন ধীর গতিতে।
আলোচিত সময়ে কয়েকটি আঞ্চলিক জরিপে বিশ্ব ব্যাংক দেখেছে, শ্রমবাজারে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সি মানুষের অংশগ্রহণ কমে ৫১ শতাংশ থেকে নেমে ৪৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। করোনার দুই ধাপে বেকারত্ব বেড়ে ৯ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশে ঠেকেছে। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, করোনার সময় দেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আরও বেড়েছে। এ সময় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি মানুষ বাসা ভাড়া দিতেও হিমশিম খেয়েছে। বিশেষ করে বস্তি এলাকার মানুষ বাসস্থানের নিরাপত্তাহীনতায় ছিল সবচেয়ে বেশি। চট্টগ্রামের তুলনায় ঢাকায় এ হার বেশি ছিল। কোভিডের সময় জরুরি অর্থায়ন প্রয়োজন পড়েছিল।
বিশ্বব্যাংকের জরিপে অংশ নেওয়া ৪ শতাংশ দাবি করেছেন, তারা জরুরি অর্থায়নের জন্য গড়ে ২৫ হাজার টাকা ঋণ করতে হয়েছে। বিশেষ করে, এ ঋণ তারা আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে নিয়েছেন। কেউ সুদে নিয়েছেন, কেউবা বিনা সুদেই নিয়েছেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৫৭ শতাংশ আত্মীয় ও বন্ধুদের কাছ থেকে বিনা সুদে ঋণ পেয়েছেন, ৪৮ শতাংশ সুদে নিতে হয়েছে। ৫০ শতাংশ আবার এনজিও থেকেও নিয়েছেন। ১৪ শতাংশ সম্পদ বিক্রি করতে হয়েছে, ১৭ শতাংশ মানুষ নিজেদের সঞ্চয় ভেঙেছেন।
বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণা বলছে, কোডিড-১৯-এর সময়ে বাংলাদেশ সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন প্রণোদোনা প্যাকেজ ও পুনঃঅর্থায়নের কারণে আর্থিক বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। এ সময় সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিভিন্ন কার্যক্রম ও হেলথকেয়ার সার্ভিসের বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট স্বাভাবিক রাখতে আমদানি, রফতানি ও রেমিট্যান্সের গতিতে নজর রেখেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তৎপরতা লক্ষণীয় ছিল।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, দারিদ্র্য গবেষণা নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বিআইডিএসের দীর্ঘ সময়ের পার্টনারশিপ রয়েছে। আমরা এখানে তাদের গবেষণায় দেখার চেষ্টা করেছি বাংলাদেশ কোডিড-১৯ সময় কীভাবে পার করেছে। এ সময় বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণার পর্যালোনায় বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. কাজী ইকবাল বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংক যে উপাত্ত দিয়েছে কিছু কিছু অনেক আগের। মেডিকেল সায়েন্সের গবেষণায় বাংলাদেশে এখন আরও অনেক অর্থায়ন দরকার।’
আরএস/