ই-পেপার মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪

কৃষি পেশা ও কৃষকের সঙ্কট
প্রকাশ: বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২, ৬:৫০ পিএম  (ভিজিট : ৯১১)
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। কথায় কথায় বলি, ‘বাংলার কৃষক বাংলার অহঙ্কার’। কৃষি পেশা অন্যান্য পেশা থেকে আলাদা। এ দেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। শুধু তাই নয়, কৃষকের উৎপাদিত ফসল থেকে প্রাপ্ত খাবার খেয়েই আমরা বেঁচে থাকি। কৃষি ও কৃষকেরাই মূলত একটি রাষ্ট্র ও সমাজকে বাঁচিয়ে রাখার প্রধান ভ‚মিকা পালন করে থাকে। এ ছাড়া ধানের খড়ও গৃহপালিত পশুর প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অথচ আমাদের দেশের কৃষকসমাজ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যেটা খুবই কষ্ট ও হতাশাজনক। বর্তমান কৃষকের অর্থনৈতিক অবস্থা একদমই নাজেহাল ও সঙ্কটময়। বিগত দশকের আগে অনুধাবন করলে দেখা যায়, সম্পূর্ণ পরিবার কৃষি উৎপাদনের ওপর নির্ভর করত। কিন্তু বর্তমানে তার বিপরীত।

এ পেশা নতুন কোনো আবিষ্কার নয়। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ মহান পেশা। আদিম যুগ থেকে আজ অবধি বেড়েই চলছে কৃষি উৎপাদনের কাজ। বর্তমানে পুঁজিবাদীদের অর্থনৈতিক কারণে বদলে গেছে সেই ঐতিহ্যমণ্ডিত পটভ‚মি। খুব কাছ থেকে দেখেছি একজন কৃষক তার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজের সন্তানের মতো লালন করে ফসল উৎপাদন করে। যেন এক ফোঁটা রক্তের বিনিময়ে এক ফোঁটা ধান উৎপাদিত হয়। অথচ কৃষকদের ন্যায্য পাওনা আজ অপ্রতুল।

একজন কৃষকের লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচ উঠে আসাই বড় কষ্টসাধ্য। সবাই অন্যান্য শিল্প নিয়ে ভাবে। কিন্তু কৃষি নিয়ে কে ভাবে?
সার্বিক বিবেচনায় কৃষকেরা চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিপতিত। আবাদি কাজের খরচ বাদে লভ্যাংশ থাকে না বললেই চলে। বাজারে অন্যান্য পণ্যের দামের যে ঊর্ধ্বগতি তাতে ধানের মূল্য তুলনামূলক অনেক কম। বেশিরভাগ পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে আকাশচুম্বী। প্রতিকেজি ১০০ টাকা বৃদ্ধির এমন দৃশ্যও দেখতে হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। সেই দিক থেকে তুলনা করলে ধানের দাম অতি নগণ্য। তাহলে বাঙালি কৃষকদের এই ক্ষতিপূরণ কে দেবে? অসংখ্য পণ্যের দাম বাড়লেও ধানের দামে সেই পরিমাণ বা তার অর্ধেকও দেখতে পাওয়া যায়নি। সত্যিই আজ বলতে কষ্ট হচ্ছে বাংলার কৃষক বাংলার অহঙ্কার। কারণ বাঙালি কৃষকেরা তার ন্যায্য পাওনা ও দাবির বাইরে অবস্থান করছে।

কৃষকদের এমন করুণ অবস্থা দেখে একঝাঁক তরুণ মেধাবী কৃষি পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। অপরদিকে এর সমাধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে পুঁজিবাদী সিন্ডিকেট শ্রেণির মানুষেরা। ফলে বাড়ছে অর্থনৈতিক সঙ্কট, অশান্তি এবং কৃষি শিল্পবিমুখতা। দীর্ঘদিন এমন পরিস্থিতি বিরাজ করলে কেউই আর কৃষক হওয়ার স্বপ্ন দেখবে না। অপরদিকে অনাগ্রহ দেখা দিতে পারে কৃষি শিল্প। এজন্য লক্ষ-কোটি ছাত্রসমাজ নির্ভর করছে চাকরির ওপর। আর চাকরির কর্মক্ষেত্র সীমিত হওয়ায় বাড়ছে বেকারত্ব আর হতাশা। পরিশেষে নিজের ব্যর্থতার দায় সইতে না পেরে ধাবিত হচ্ছে আত্মহত্যার দিকে। কৃষিপ্রধান দেশে কৃষকদের এমন নাজেহাল অবস্থা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা যারা তরুণ প্রজন্ম, তারা কৃষিবিমুখ সমাজ দেখতে চাই না। ফিরতে চাই সোনালি ফসলি জমিতে। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সমাজের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ ও সরকারকে জোরালো সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক বিবেচনায় সব পণ্যের দাম ভারসাম্যে নিয়ে আসা একান্ত জরুরি। যেন আবারও উচ্চকণ্ঠে বলতে পারি ‘বাংলার কৃষক বাংলার অহঙ্কার’।

শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close