অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যা, ১৯ বছর পর স্বামী গ্রেফতার
নিজস্ব প্রতিবেদক
|
![]() বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) ডিআইজি মোজাম্মেল হক। তিনি জানান, গত বুধবার রাতে ঘাতক স্বামী সিরাজুল ইসলামকে নারায়ণগঞ্জের চর সৈয়দপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। ২০০২ সালের জুলাই মাসে মানিকগঞ্জ সদরের বাহেরচর এলাকার সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে সিঙ্গাইর উপজেলার উত্তর জামশা গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে জুলেখা বেগমের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে বেশ কিছু নগদ অর্থ, গহনা এবং আসবাবপত্র বরপক্ষকে দেওয়া হয়। এরপরও বিয়ের পর থেকে আসামি সিরাজুল আরও যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন এবং যৌতুক না দিতে পারলে তালাক দেবেন বলে তার স্ত্রীর জুলেখাকে নানা ভয় দেখাতেন। এরইমধ্যে জুলেখা ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। পারিবারিক কলহ আরও বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে আসামি সিরাজুল তার প্রতিবেশী মোশারফ নামে এক যুবকের সঙ্গে জুলেখার পরকীয়ার সম্পর্ক আছে বলে মিথ্যা অভিযোগ তুলে নির্যাতন করতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে গ্রাম্য শালিস বসে এবং সেখানে জুলেখার পরকীয়ার বিষয়টি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এ ঘটনায় সালিশ আসা ব্যক্তিরা সিরাজুল ইসলামকে গালাগালি করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সিরাজুল জুলেখাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরে ২০০৩ সালের ৬ ডিসেম্বর স্ত্রী জুলেখাকে বাপের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে নদীর তীরে নিয়ে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরদিন জুলেখার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা হলে কয়েকজনের সাজা হয়। কিন্তু প্রধান আসামি সিরাজুল পলাতক ছিলেন। র্যাব-৪ এর অধিনায়ক জানান, প্রথম স্ত্রী জুলেখাকে হত্যা করার পর পলাতক সিরাজুল সাভারে কয়েক দিন আত্মগোপনে থাকেন। ২০০৫ সালে তিনি পুনরায় বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদরের চর সৈয়দপুর এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। বর্তমান সংসারে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। প্রথম স্ত্রী জুলেখাকে হত্যার পর থেকে আর কোনোদিন মানিকগঞ্জে যাননি সিরাজুল। ঘটনার পর থেকে আত্মগোপন ও গ্রেফতার এড়ানোর জন্য সিরাজুল কখনও শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করতেন। এক জায়গায় তিনি বেশি দিন অবস্থান করতেন না। তাছাড়া পরিচয় গোপনের উদ্দেশ্যে তিনি প্রতিনিয়ত পেশা পরিবর্তন করতেন। তিনি বিভিন্ন সময় রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা, সবজি বিক্রেতা, কুলি, রাজমিস্ত্রি, ট্রাকচালক এবং পরিবহন অফিসের দালালি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। স্ত্রীকে হত্যার পর সিরাজুল দ্বিতীয় বিয়ে করে বিভিন্ন জায়গায় ছদ্মবেশে থাকলেও নিজেকে আড়াল করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। তিনি পালিয়ে নারায়ণগঞ্জ চলে যাওয়ার পর সিরাজ নাম ধারণ করে নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন চর সৈয়দপুর গ্রামকে বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। কিন্তু তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে মানিকগঞ্জের বাড়াইল চর ব্যবহার করেন। র্যাব কর্মকর্তা জানান, তাকে থানায় হস্তান্তর করা হবে। পুলিশ তাকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখাবে। এফএইচ
|