পিকে হালদারসহ অভিযুক্ত ছয়জনকে ফের ১৪ দিনের জেল
মুকুল বসু, কলকাতা প্রতিনিধি
|
বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার হওয়া এনআরবি গ্লোবাল ব্যাঙ্কের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদারসহ অভিযুক্ত ছয় জনকে ফের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের (জুডিশিয়াল কাস্টডি) নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার নগর দায়রা আদালত। মঙ্গলবার (২১ জুন) ১২ টার কিছু পরে স্পেশাল সিবিআই কোর্ট-৩ এ এই মামলার আসামিদের তোলা হয়। এদিন আদালতে মূল অভিযুক্ত পিকে ও তার সহযোগী এবং ভাই প্রাণেশ কুমার হালদার, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার, স্বপন মৈত্র ওরফে স্বপন মিস্ত্রি, উত্তম মৈত্র ওরফে মিস্ত্রি, আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারকে তোলা হয়। কিন্তু উত্তম মৈত্র ও স্বপন মৈত্রের আইনজীবীরা উপস্থিত থাকলেও প্রায় ৪০ মিনিট সময় পেরিয়ে গেলেও ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী উপস্থিত না থাকায় বিচারক জীবন কুমার সাধু একসময় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সব শেষে ফের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন তিনি। সেক্ষেত্রে আগামী ৫ জুলাই ফের অভিযুক্তদের আদালতে তোলা হবে। এই সময়কালে কারাগারে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন তদন্ত কর্মকর্তারা। ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া এই ছয় অভিযুক্তের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ বন্দি রয়েছেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কারাগারে, বাকী একজন নারী অভিযুক্ত রয়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী সেলে। সেখান থেকেই তাদের আদালতে আনা হয়। কিন্তু আদালতে তোলা বা শুনানি শেষে আদালত থেকে কারাগারে যাওয়ার পথে অভিযুক্তদের কেউই মুখ খোলেন নি। শেষবার গত ৭ জুন আদালতে তোলা হয় অভিযুক্তদের এবং তাদের প্রত্যেককেই ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন আদালত। সেই মেয়াদ শেষেই মঙ্গলবার ফের আদালতে তোলা হয়। গত ১৪ মে অশোকনগর, কলকাতা সহ একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়ে পিকে হালদারসহ মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করে ভারতের তদন্তকারী সংস্থা ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট’ (ইডি)'র কর্মকর্তারা। এরপর কয়েকদফায় রিমান্ড ও জেল হেফাজতে নিয়ে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে ইডির হাতে। শেষ দফায় ১৪ দিনের জেল হেফাজত থাকাকালীন ইডির কর্মকর্তারা তদন্ত করে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য পেয়েছে। ইডি’র আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান “গত ১৪ দিনে বেনামে প্রচুর সম্পত্তি পাওয়া গেছে, ৮০ লাখ রুপি নগদ ও একটি ফ্ল্যাট পাওয়া গেছে। এই ফ্ল্যাট কেনার জন্য সমস্ত টাকা দিয়েছে পিকে হালদার। এবং যাকে দেওয়া হয়েছে ওই ব্যক্তি বর্তমানে কর্ণাটকে অবস্থান করছেন, তার খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা।” তিনি আরো জানান “পিকে-কে জেরা করে কলকাতা এবং তার আশপাশে বহু সম্পত্তি পাওয়া গেছে। যেগুলো বেনামে কেনা হয়েছে। সেই সব মানুষকে সনাক্তকরণের কাজ চলছে।” “এরকম প্রায় ৪৫ টি সম্পত্তির হদিস পাওয়া গেছে যেগুলো প্রাণেশ কুমার হালদার এর নামে স্থানান্তরিত করা হয়েছে, পরবর্তীতে সেই সম্পত্তি আবার সুকুমার মৃধার নামে স্থানান্তরিত করা হয়।”- বলেন ইডির আইনজীবী। আইনজীবী আরো জানান, “পিকে হালদার ও তার ভাইদের নামে ভারতে যে ব্যাংক একাউন্টের হদিস মিলেছে তার সমস্ত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। সেখানে একাধিক বাংলাদেশির নামে ব্যাংক একাউন্ট করে অর্থ জমা করা হয়েছে। সেই জমাকৃত অর্থের রশিদও পাওয়া গেছে।” তিনি আরো জানান “বাংলাদেশ থেকে আত্মসাৎ করা অর্থই ভারতীয় ব্যাংকে জমা করে তা পাচারের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।” আগামী দিনে পিকে হালদার এবং অভিযুক্তদের জেরা করে আরো নতুন তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের একটি অংশ মনে করছেন। /এসকে
|