ডিজিটাল বাংলাদেশ: কে কতটুকু লাভবান
নিজস্ব প্রতিবেদক
|
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় সর্বপ্রথম যে বিষয়টিকে গুরুত্ব প্রদান করা হয় তা হলো ইন্টারনেট সরবরাহ। আর এক্ষেত্রে মোবাইল ইন্টারনেটের মূল্যহ্রাসের পাশাপাশি গতি বৃদ্ধি এবং ব্রডব্যান্ড সংযোগকে দেশের প্রান্তিক অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়া ছিল সরকারের লক্ষ্য। বাংলাদেশের জনশুমারি অনুসারে এই প্রকল্পের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ধরে নেওয়া হয় তরুণ প্রজন্মকে। বলা হয় ‘ই-জেনারেশন’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের জন্য কাজ করছে সরকার। ইন্টারনেট ওয়ার্ল্ড স্ট্যাটাস প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ৭৩ লাখের বেশি। গ্রাহকসংখ্যার দিক থেকে বিশে^ আমরা রয়েছি ১৯তম অবস্থানে। বাংলাদেশ থেকে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে রয়েছে চীন (প্রথম স্থান) ও ভারত (দ্বিতীয় স্থান)। চীনের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০০ কোটির বেশি এবং ভারতে ৬৫ কোটি ৮০ লাখ। কিন্তু বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশ তার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়িয়েছে প্রায় ৭০.১ শতাংশ হারে। সন্দ্বীপের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ব্রডব্যান্ড সরবরাহে কাজ করেছে সরকার। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু অঞ্চল ও ছেঁড়াদ্বীপের মতো অঞ্চলগুলো ছাড়া দেশের অধিকাংশ স্থানে ব্রডব্যান্ড সংযোগ নিশ্চিত করা গেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে বিষয়টিকে। দেশের সর্বত্র ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এটি মোকাবিলায় প্রথমে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে যুব উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে প্রদান করা হয় দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ। ২০১১ সালে বাংলাদেশে এত হাইটেক পার্ক ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা ছিল না, যা বর্তমানে রয়েছে। আর এ কারণেই যুব উন্নয়ন কেন্দ্রগুলো থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ডাটা প্রসেসসহ আরও বেশ কিছু বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এখান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে অনেকেই বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। পরবর্তীতে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে শুরু হয় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। সেই সঙ্গে আইসিটি খাতকে গতিশীল করতে এ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রণোদনা হিসেবে অফিস স্পেস প্রদান, কর মওকুফসহ আরও বেশ কিছু সুযোগ প্রদান করা হয়। যার প্রেক্ষিতে দেশে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত হাজারটি স্টার্টআপ রয়েছে। ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আইসিটি মন্ত্রণালয় তার কাঠামোগত উন্নয়নে বেশি মনোযোগ প্রদান করে। এর অধীনে ছিল হাইটেক পার্ক নির্মাণ, প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবস্থাপনা তৈরি, স্টার্টআপ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, আইসিটি কার্যক্রমের জন্য নীতি প্রণয়ন এবং আন্তর্জাতিক ‘গেটওয়ে’ তৈরি, যার মাধ্যমে কাজের পথটি সহজ হয়। এ প্রসঙ্গে তরুণদের সঙ্গে আলোচনাকালে ‘লেটস টক উইথ সজীব ওয়াজেদ’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘কাজ আপনারা করবেন, আপনাদের জন্য কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করব আমরা।’ তার এই এক উক্তির মধ্যেই রয়েছে সরকার ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের মূল পরিকল্পনা। ২০১৬ সালের পরবর্তী ৫ বছর আইসিটি মন্ত্রণালয় অবকাঠামো নির্মাণে অবশিষ্ট কাজগুলোর পাশাপাশি গড়ে তোলার চেষ্টা করে ‘স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম’। এর অংশ হিসেবে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, স্টার্টআপ বাংলাদেশ, আইডিয়া প্রজেক্ট, মোবাইল গেম ও অ্যাপ্লিকেশনের দক্ষতা উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প, লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্প, এসপায়ার টু ইনোভেট এবং দেশজুড়ে হাইটেক পার্ক নির্মাণ কার্যক্রম চালু হয়। বর্তমানে এসব প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা পাচ্ছেন ১০ লাখের বেশি তরুণ। এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি দেশে তরুণদের আইসিটি খাতে যুক্ত হতে আগ্রহী করার জন্য স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ, বঙ্গবন্ধু গ্র্যান্ট, ইউনিভেটর, শিশু-কিশোর প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার মতো আয়োজন করা হয়। এখান থেকে বিজয়ীদের শুধু অর্থ পুরস্কার দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছে না আইসিটি মন্ত্রণালয়, বরং প্রকল্পভেদে তাদের যুক্ত করছে আরও অনেক কাজে। প্রদান করা হচ্ছে পরামর্শ। সেই সঙ্গে তাদের আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের দায়িত্বও পালন করা হচ্ছে মন্ত্রণালয় থেকে। তবে কি শুধু তরুণদের জন্যই কাজ করছে আইসিটি মন্ত্রণালয়? তরুণদের কেন্দ্র করে কাজ চালিয়ে গেলেও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের দেশের কর্মক্ষম জনশক্তিকে শতভাগ সম্পৃক্ত করা। আর এ কারণেই আইসিটি মন্ত্রণালয় নিজস্ব কার্যক্রমের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, নৌ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ দেশের অধিকাংশ মন্ত্রণালয়কে ডিজিটাল রূপান্তরে সহায়তা প্রদান করছে। এ বিষয়ে অসংখ্য স্মারক চুক্তি স্বাক্ষর রয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। সমন্বিতভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। আর এ কারণেই সমন্বিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমগুলোকে ধীরে ধীরে ডিজিটাল সেবায় রূপান্তর করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের শুরুটি ছিল আইসিটি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। বর্তমানে প্রতিটি মন্ত্রণালয় পৃথকভাবে নিজ নিজ উদ্যোগে তাদের ডিজিটালাইজেশনের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরিতে সফলতা এসেছে। কিছু সমস্যা থাকলেও ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দটি নিয়ে রম্য বা তাচ্ছিল্যের সুযোগ এখন নেই। তা হলে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ভবিষ্যৎ ভাবনা কী? আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক বিষয়টি স্পষ্ট করেন ‘হুয়াওয়ে এশিয়া প্যাসিফিক ডিজিটাল ইনোভেশন কংগ্রেস ২০২২’-এ দেওয়া তার বক্তব্যে। তিনি বলেন, আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন সফলভাবে অর্জন করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য হলো ২০৪১ সালের মধ্যে উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক উন্নত অর্থনীতিতে পরিণত একটি স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করা। স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১ অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৯৪ ডলার থেকে ১২ হাজার ৫০০ ডলারে উন্নীত করা, যা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশে^র ২৩তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করবে। /এমএইচ/
|