অতিমুনাফার শিকার আমজনতা
এসএম আলমগীর
|
![]() গত কয়েক মাস ধরে দেশের বাজারে ভোজ্য তেল নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটে যাচ্ছে। এ পণ্য ব্যবসায়ীরা কত টাকায় আমদানি করেন, রিফাইন করতে কত খরচ হয়, মিল থেকে কী দামে বিক্রি করা হয়, পাইকারি ব্যবসায়ী কত দামে কেনে ও কত দামে বিক্রি করেন তার কোনো হিসাব কেউই দেন না। আর খুচরা বাজারের মূল্যের অরাজকতার কোনো শেষ নেই। যে যেমন পারে বাড়তি দামে বিক্রি করে অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিচ্ছে। এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে উৎপাদক, পাইকারি এবং খুচরা পর্যায়ে কে কত মুনাফা করতে পারবে সেটি নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু অন্যান্য খাদ্যপণ্য বা খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ওই তিন পর্যায়ে কত শতাংশ মুনাফা করা যাবে সেটি কোনো আইনে নির্ধারণ করা নেই। বিষয়টি ভোক্তা আইনে নেই, ট্যারিফ কমিশনও নির্ধারণ করে দেয় না, এমনকি প্রতিযোগিতা কমিশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে তারাও ঠিক করে দেয় না। এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকেও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা হয় না। আমি বলব, এ বিষয়ে কোনো আইন না থাকাটাই একটি আইনি দুর্বলতা। আর এ আইনি দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই ব্যবসায়ীরা অতিমুনাফা লুটে নিতে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। তিনি বলেন, ‘মাঠে যদি দুই দলের খেলা হয়, আর সেখানে যদি রেফারি না থাকে তা হলে কে ফাউল করছে সেটি দেখবে কে। ভোগ্যপণ্যের বাজারের ক্ষেত্রেও বিষয়টি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। এখানে সরকারের যেকোনো সংস্থাকে রেফারির ভূমিকায় থাকতে হবে, নতুবা ব্যবসায়ীরা ফাঁকা মাঠে ফাউল খেলেই যাবে, লাগামছাড়া মুনাফা করেই যাবে।’ কৃষি বিপণন আইন-২০১৮-তে উল্লেখ করা হয়েছে, খাদ্যশস্য যেমন- ধান, চাল, গম, ভুট্টা, ডাল ও অন্যান্য পণ্যে উৎপাদক মুনাফা করবেন ৩০ শতাংশ, পাইকারি ব্যবসায়ী করবেন ১৫ শতাংশ এবং খুচরা বিক্রেতা করবেন ২৫ শতাংশ। শাকসবজিতে মুনাফা করবেন তিন পর্যায়ে ৪০, ২৫ ও ৩০ শতাংশ। মাছ ও মসলা জাতীয় পণ্যে মুনাফা করবেন ৩০, ১৫ এবং ২৫ শতাংশ হারে। ডিম, দুধ, চিড়া, মুড়ি, আটা-ময়দার ক্ষেত্রেও মুনাফার হার একই হারে হবে। কিন্তু বাস্তবে বাজারে এ হারে কখনই মুনাফা করতে দেখা যায় না। ক্যাবের তথ্য বলছে, ব্যবসায়ীরা ৫০-৮০ শতাংশের বেশি মুনাফা করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০০ ভাগেরও বেশি মুনাফা করে। অতিমুনাফার বিষয়টি মনিটরিং করা হয় কি না জানতে চাওয়া হয় কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক আ. গাফ্ফার খানের কাছে। তবে মহাপরিচালক হলেও ব্যবসায়ীরা কত শতাংশ মুনাফা করতে পারবেন সে বিষয়টিই তিনি নিশ্চিত করে জানেন না। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় ২-৩ শতাংশ মুনাফা করার বিধান আছে। তবে মুনাফার হার যতই হোক আমরা প্রতিদিন বাজার তদারকি করছি। তবে বাজার অভিযানের সময় ব্যবসায়ীদের কাছে পণ্য ক্রয়ের চালান চাইলে সেটি দেখাতে পারে না। আর এখানেই ব্যবসায়ীদের চাতুরতা। কারণ তারা কত টাকায় কিনল এবং কত টাকায় বিক্রি করছে, এ ছাড়া মুনাফা কত করছে- সেটি তো নিশ্চিত হওয়া যাবে না ক্রয় রশিদ না দেখলে। ব্যবসায়ীরা এ সুযোগটি নিয়েই বেশি মুনাফা করে। তবে আমরা বাজার অভিযানে এসব ক্ষেত্রে জরিমানা করছি। |