ই-পেপার বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪

সময়ের আলো সাক্ষাৎকার
‘বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও কর্মসংস্থানে বেশি গুরুত্ব দরকার’
প্রকাশ: রবিবার, ২২ মে, ২০২২, ১১:১৫ এএম আপডেট: ২২.০৫.২০২২ ১১:২০ এএম  (ভিজিট : ৩১১)
আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট। নতুন বাজেট নিয়ে দেশের ব্যবসায়ী সমাজ কী ভাবছেন বা বাজেটে তাদের প্রত্যাশাই বা কী- সে ব্যাপারে কথা হয় বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আগামী বাজেটে করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও কর্মসংস্থানে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এ ছাড়া রফতানি খাতের বিভিন্ন বিষয়সহ এবারের বাজেটের আরও কিছু খাতের প্রত্যাশা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন সময়ের আলোর সঙ্গে। তার সাক্ষাৎকারের বিশেষ অংশ নিচে দেওয়া হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এসএম আলমগীর

ইএবি সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ভিশন-২০২১, এসসিজি-২০৩০, ভিশন-২০৪১, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার ঘোষিত কোভিড-১৯ বাস্তবতার আলোকে হওয়া দরকার। এ ছাড়া গত অর্থবছর ২০২১-২২ কোভিডকালে বাজেটের ধারাবাহিকতায় রাজস্ব, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পুনরুদ্ধার, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা, পরিবেশবান্ধব, রফতানি বৃদ্ধি ও সর্বোপরি ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণীত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। 

তিনি বলেন, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যকার যুদ্ধাবস্থা এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সার্বিকভাবে সব আমদানি-রফতানি পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশেরও অধিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে, যা সরাসরি রফতানি-সংশ্লিষ্ট সব খাতের ওপর সরাসরি আঘাত। পোশাক শিল্পসহ সব রফতানি খাত বর্তমানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চাপের কারণে এক নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। পোশাকের দরপতন, রফতানি প্রবৃদ্ধির ক্রমাগত নেতিবাচক প্রভাব, ডলারের বিপরীতে মুদ্রার অবস্থান, সুতার মূল্যবৃদ্ধি, কন্টেইনার ভাড়া বৃদ্ধি, ডাইস, কেমিক্যালের খরচ বৃদ্ধি, কোভিডের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা পরিচালনায় খরচ বৃদ্ধি, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে পরিবহন ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, প্রতিযোগী দেশগুলো থেকে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকা ইত্যাদি কারণে আমাদের দেশের পোশাক শিল্প সক্ষমতা হারাচ্ছে। 

তিনি বলেন, বস্ত্র খাত, নিট ও টেরিটাওয়েল খাত, চামড়া ও পাদুকা শিল্প, সাইকেল, মৎস্য, ফ্রোজেন ফুডসহ সব রফতানিমুখী শিল্পের জন্য একই নীতিমালা প্রণয়ন সময়ের দাবি রাখে। পোশাক খাতসহ সব রফতানিমুখী শিল্পের রফতানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক করা এবং সক্ষমতা টিকিয়ে রাখার নিমিত্তে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য আমরা বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছি, প্রস্তাবগুলো সুবিবেচনায় নিয়ে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

সালাম মুর্শেদী বলেন, রফতানিমুখী সব শিল্পের জন্য- বস্ত্র খাত, নিট ও টেরিটাওয়েল খাত, চামড়া ও পাদুকা শিল্প, সাইকেল, মৎস্য, ফ্রোজেন ফুড, রফতানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর ০.৫০ শতাংশ চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে এবং আগামী পাঁচ বছরের জন্য বলবৎ রাখা। রফতানিমুখী শিল্পের রফতানিকারকদের এক্সপোর্টস রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) ফান্ড থেকে রফতানি উন্নয়নের জন্য কোনো ব্যয়ের বিপরীতে আয়কর কর্তন রহিত করতে হবে আগামী বাজেটে। রফতানিমুখী সব শিল্পের জন্য- বস্ত্র খাত, নিট ও টেরিটাওয়েল খাত, চামড়া ও পাদুকা শিল্প, সাইকেল, মৎস্য, ফ্রোজেন ফুড, রফতানির বিপরীতে প্রদত্ত নগদ সহায়তার ওপর আয়কর কর্তনের হার শূন্য নির্ধারণ করা দরকার। রফতানিমুখী শিল্পের জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল থারমোস্টেট ডি-হিউমিডিফায়ার যন্ত্রটি শুল্কমুক্ত বা রেয়াতি হারে আমদানির অনুমোদন দিতে হবে। 

তিনি বলন, রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত লে-আউট অনুযায়ী অগ্নিনির্বাপণ উপকরণ রেয়াতি হারে একবারই আমদানি করা যায়। প্রয়োজন অনুযায়ী একাধিকবার রেয়াতি হারে আমদানির অনুমোদন। সর্বোপরি বর্তমান অবস্থায় অগ্নিনির্বাপণ উপকরণ আমদানি শুল্কমুক্ত রাখা যৌক্তিক। রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানে চলমান যন্ত্রপাতির জন্য ব্যবহৃত প্রয়োজন অনুযায়ী যন্ত্রাংশ রেয়াতি হারে অর্থাৎ মূল যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য রেয়াতি হার অনুমোদন দরকার। রফতানিমুখী শিল্পের জন্য রফতানি-সংশ্লিষ্ট স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত পণ্য ও সেবার ভ্যাট মওকুফ করা। রফতানিমুখী শিল্পের জন্য ব্যবহৃত ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেকিং সিস্টেমের আমদানি শুল্ক শূন্য করা দরকার।

সালাম মুর্শেদী বলেন, রফতানিমুখী সব শিল্পের জন্য বিশেষ করে বস্ত্র খাত, নিট ও টেরিটাওয়েল খাত, চামড়া ও পাদুকা শিল্প, সাইকেল, মৎস্য, ফ্রোজেন ফুড, রফতানির জন্য করপোরেট ট্যাক্স হার ১২ শতাংশ এবং গ্রিন কারখানার জন্য ১০ শতাংশ আগামী পাঁচ বছর বহাল রাখতে হব। রফতানিমুখী শিল্পে স্থাপিত ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) ব্যবহৃত আমদানিকৃত রাসায়নিকের শুল্ক ও মূসক শূন্য করতে হবে। 

মাংস প্রক্রিয়াজাত এবং রফতানি প্রসারের জন্যও তিনি আগামী বাজেটে কিছু সুপারিশমালা দিয়েছেন। এ বিষয়ে আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, কোল্ড-চেইন মাংস প্রক্রিয়াজাত শিল্পের মূল ভিত্তি। যার মাধ্যমে ১০০ শতাংশ জীবাণুমুক্ত মাংস উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং বিপণন নিশ্চিত হয়। মাংসের কোল্ড-চেইন একটি বিশেষায়িত রেফ্রিজারেশন ব্যবস্থা, যার উৎপাদন পর্যায়ে আছে যেমন, ব্লাস্ট ফ্রিজার, হোল্ডিং ফ্রিজার, চিলার ফ্লেক আইস মেশিনও বিপণন পর্যায়ে আছে। ফ্রিজার ও চিলার ভ্যান দোকানের ওয়াক ইন চিলার বা ফ্রিজার রু এবং দোকানের সিপ্লে চিলার বা ফ্রিজার। কিন্তু এই বিশেষায়িত পণ্য বিবেচনায় সাধারণ ট্রেডিং শ্রেণির সমকক্ষ এবং ১০৪.৬৮ শতাংশ শুল্কযোগ্য। এটি মূলধনি যন্ত্রপাতি বিবেচনায় মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে এইচএস কোড অধিকতর স্বচ্ছতা এবং শিল্প শুল্কায়নের জন্য নির্দিষ্ট ব্যবস্থায় আমদানি অনুমোদন করা প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, মাংস পচনশীল দ্রব্য হওয়ায় ভ্যালু এডেড প্রক্রিয়াজাত মাংস শিল্পের প্রসার প্রাণিসম্পদ এবং প্রক্রিয়াজাত মাংসের জন্য অপরিহার্য। মাংস প্রক্রিয়াজাত শিল্পে ভ্যালু এডেশনকে উৎসাহিত করার জন্য সসেজ, নাগেটস, সমুচা, শিঙারা ইত্যাদির ওপর ভ্যাট অব্যাহতি করার আবেদন জানাচ্ছি। এই শিল্পে উচ্চ বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায়, লাভজনক হওয়ার যাত্রাটা দীর্ঘমেয়াদি। ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিবেচনায় এই শিল্পকে আগামী ২০ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা প্রদানে এবং এআইটি অব্যাহতির প্রস্তাব জানিয়েছি আমরা। 

তিনি বলেন, এই শিল্পের প্রাণস্পন্দন গ্রামীণ কৃষক। সরকারের নানাবিধ প্রণোদনায় ব্যাপকসংখ্যক গ্রামীণ যুবক এবং নারীসমাজ প্রাণিসম্পদ লালন-পালনে জড়িত আছে। আমাদের শিল্পগুলো গ্রামীণ জনপদে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে মার্কেট কানেকটিভিটি বাড়ায় তাদের উদ্দীপনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কিন্তু বিশেষ কর অব্যাহতি সুবিধাপ্রাপ্ত আমদানিকৃত মহিষের মাংস একটি বিশেষ ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি যা প্রাণিজ আমিষের সরবরাহকে বিপন্ন করতে পারে। দারিদ্র্য উদ্যোগী গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের যথাযথ প্রণোদনা দেওয়ার এ ধরনের বিশেষ কর অব্যাহতির রহিত করা প্রয়োজন।

/জেডও


আরও সংবাদ   বিষয়:  সাক্ষাৎকার  




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close