পিকে হালদারকে দিয়ে প্রভাবশালীদের নামের তালিকা করছে গোয়েন্দারা
মুকুল বসু, কলকাতা
|
![]() জানা গেছে, সমস্ত তথ্যপ্রমাণ একে একে খতিয়ে দেখে একটু একটু করে তদন্তের গতি বাড়ানো হচ্ছে। ইডির কর্মকর্তারা দিন-রাত ধরে সেই তালিকা করছে। তালিকায় দুই বাংলার পিকে হালদারের ঘনিষ্ঠদের নাম আছে। তবে সূত্রের খবর সেই তালিকায় বাংলাদেশিদের সংখ্যাটা বেশি। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পিকে হালদারের মোবাইল এবং অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসে ও ডাইরিতে পাওয়া নামের সঙ্গে ফোন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মারফত কলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা পর্ব শেষে একটা তালিকার খসড়া করা হয়েছে। তালিকায় থাকা বাংলাদের প্রভাবশালীদের নাম শুনে প্রথমত হতবাক হন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এমনকি পিকে হালদারের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ডিভাইসে অ্যালবাম করে সাজানো ছিল নাম ও ফোন নাম্বারের তালিকা, ব্যবসার খতিয়ান, টাকার অঙ্ক ও নানা ধরণের ছবি। তদন্তকারীদের অনুমান, বাংলাদেশ থেকে মোটা অংকের টাকা হুন্ডি মারফত দফায় দফায় ভারতের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে আসা হয়েছে। আপাতত যেটুকু তথ্য মিলেছে সেই ভিত্তিতে খবর বাংলাদেশি টাকার সিংহভাগ অংশ দিয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে সম্পত্তি এবং বাড়িঘর তৈরির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হয়েছে। প্রাথমিক হিসাব মতে ২ হাজার কোটি টাকার আশেপাশে টিম পিকের সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। তদন্তকারীরা গ্রাম থেকে উঠে আসা পিকের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দেখেও অবাক হয়েছেন। পিকের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া একাধিক দেশের পাসপোর্ট সম্পর্কে দেশটির গোয়েন্দারা জানায়, তারা প্রশ্ন করেন, ওই দেশগুলির নাগরিকত্ব এবং পাসপোর্ট তৈরির কাজে কারা সাহায্য সহযোগিতা করেছিল। কেনই বা একাধিক দেশের পাসপোর্ট সে করেছিল। কাদের টাকা পাচারের কাজ করত? কাদের টাকা ভারতে আবাসন থেকে আমদানি রফতানি ব্যবসায় বিনিয়োগ করত। তার প্রাথমিক হদিশ ইডি পেয়েছে। জানা গেছে, নামের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে কয়েকটি সেগমেন্ট করেছে গোয়েন্দারা। যত ক্ষেত্র আছে তাদের একটা আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা উচ্চ পদের ব্যক্তিদেরও নামের তালিকা আলাদা করেছে। তালিকায় ব্যক্তিদের নামের পাশে পিকে হালাদারের সঙ্গে ব্যবসা এবং যোগাযোগের কারণ হিসাবে লেখা হচ্ছে পিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী। এমনকি ভারতে পিকের পরিচিত, বন্ধু এবং বিজনেস পার্টনারদের তালিকা করে ইতিমধ্যে তল্লাশিতে নেমেছে ইডি। প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে, ভারতে পিকের পরিচিত ও বিজনেস পার্টনারের তালিকায় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী রয়েছেন। সেই সূত্র ধরে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের আর কোন প্রভাবশালীদের সম্পর্ক আছে। ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা পি কে হালদার সম্পর্কে তথ্য নানা ভাবে সংগ্রহ করেছে। আত্মীয়, বিজনেস পার্টনার নয় দূরের মানুষদের পিছনে টাকা বিনিয়োগ করে যেভাবে একাধিক কোম্পানি তৈরি করেছেন তা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের বলে জানান তারা। পিকে হালদারের ফোন ও ডিভাইস থেকে মিলেছে তাদের সম্পর্কে নানা রকম তথ্য। যাদের বিরাট অংশ হলেন মহিলা। যে কোনও তদন্তকারী সংস্থাকে ঘোল খাওয়াতে পিকের এই বিনিয়োগ বিন্যাসের লেয়ার। পশ্চিমবঙ্গে আবাসন থেকে আমদানি রফতানি সেক্টরে পিকের বিরাট বিনিয়োগের বহর দেখে তল্লাশি আরও জোরদার হচ্ছে। এছাড়া বেনামে পিকের আর কোন ব্যবসা বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ রয়েছে কি-না সেই বিষয়টিও তদন্ত করছে তদন্তকারীরা। সূত্র মতে, প্রাথমিকভাবে উদ্ধার হওয়া পিক হালদারের কাছ থেকে প্রযুক্তি সামগ্রী থেকে যতদূর জানা গেছে, শুধু ভারতেই নয় অন্য বেশ কয়েকটি দেশে পিকের সম্পত্তির হদিশ মিলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে সময় যত এগোচ্ছে ততই তদন্তে বেরোচ্ছে নানা দিক। ভারতের মাটিতে সম্পত্তির ব্যবসা, আমদানি রফতানির ব্যবসা, মাছের ব্যবসা বা এই জাতীয় ব্যবসার বেশকছু যোগসূত্রের ইঙ্গিত মিলেছে। তবে তদন্তকারীদের তদন্তে যেভাবে পিকে প্রাথমিকভাবে সহায়তা করছেন তাতে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত আগামী দিনে পিকে হালদারের কাছে কেঁচো খুঁড়তে দিয়ে কেউটের দেখা মিললে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। /আরএ
|