ঘরে ফেরা
মামুন সোহাগ
|
![]() রোববার (১৫ মে) বিকেলে সময়ের আলোর এই প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ হয় এই বৃদ্ধার। প্রতিবেদক এবং তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন সহকর্মীর ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় তার পরিবারের কাছে ফিরতে পারেন এই মরিয়ম। এ প্রসঙ্গে সময়ের আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক মামুন সোহাগের ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাস দেন। তা হুবহু পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরা হলো- ![]() উনার নাম মরিয়ম। গ্রামের বাড়ি বরিশাল। মেয়ের বাসায় যাবেন, মিরপুরে। কিন্তু এসবের কোনোকিছু বলতে পারেননি তখনও। শুধু বললেন বাড়ি বরিশাল। অনেক চেষ্টা করলাম তার পরিচয় জানার জন্য। গ্রামে যোগাযোগ করার জন্য। কোনোভাবেই কিছু বলতে পারছেন না। আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো- উনি হয়তো হারিয়ে গেছেন বা হারাবেন। আমি চাইলেই উনাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবো। একটু চেষ্টা অন্তত করি। কথা বলতে আর শুনতে শুনতে এক পর্যায়ে জানালেন- কাছে কোনো কাগজ নেই। কিন্তু একটা মোবাইল আছে। কিন্তু চলে না। এবার যেনো একটা ক্লু পেলাম। শাহবাগ মোড়ে থাকা পুলিশ রুমে গিয়ে ফোনটা চার্জে লাগিয়ে ব্যাটারি সিম খুলে চেষ্টা করলাম অন করার। সেটাও কোনোভাবে হচ্ছে না। বারবার চেষ্টা করে সবশেষ রিসিভ, ডায়াল কল খুঁজে যাদেরকে ফোন দিলাম তারা কেউই চিনলেন না। বয়সে আমার নানী-দাদীর মতোই। উনার কোনো ছেলে নেই, মেয়েদের নাম শিউলি, শিল্পী, ছালেহা। ফোন ঘেঁটে ছালেহার নাম্বার খুঁজে আমার নাম্বার থেকে ফোন দিলাম। ‘উনার মাকে পেয়েছি। আমার কাছে আছে, হারায়নি।’ জানাতেই ফুপিয়ে কেঁদেকেটে বললেন, স্যার আমার মাকে মোবাইলটা একটু দেন। পরে জানা গেল, ভদ্রমহিলার মেয়ে তখন বরিশাল। মাকে নিবেন কীভাবে? ঢাকায় আছেন জামাই মজিবুল। উনাকেও ফোন করতে পারছেন না বলে, আরো জোরে কান্না। ‘ভাই আমার ফোনে টাকা নেই, কীভাবে ফোন করবো।’ আমি বললাম- যদি আপনার ফোনে টাকা দেই তাহলে কি কাউকে পাঠাতে পারবেন? হ্যাঁ হ্যাঁ পারবো ভাই। আমি বিকাশ থেকে এক মিনিটের মধ্যে ছালেহার ফোনে রিচার্জ করে দিলাম। কিন্তু সময় অনেক হলো। যে নিতে আসবেন, মেয়ের জামাই মজিবুল। সেও ভালো চিনে না ঢাকা শহর। এদিকে আমাদেরও গন্তব্যে ফেরার তাড়া। শাহবাগ মোড়ের ট্রাফিক পুলিশ কুদ্দুস ভাইকে বিষয়টা বোঝালাম। উনি প্রথমে না বললেও পরে এই নারীকে রাখতে চান। এরই মাঝে আমার যোগাযোগ হলো জামাইয়ের সঙ্গে। উনাকে দ্রুত সিএনজি করে শাহবাগ আসতে বললাম। থাকেন মিরপুরে। এরপর মেয়ে জামাই এসে মাকে ফিরে পেলেন। কি উচ্ছ্বাস, আনন্দ! বারবার বলছেন, ‘আপনার জন্য দোয়া করছি। বাসায় আসেন।’ বললেন, তারা এবার বাড়ি ফিরবেন। এ সময় সঙ্গে ছিলেন ইত্তেফাকের আব্দুল্লাহ জুবায়ের সেফু ভাই ও সময়ের আলোর আল ইমরান ভাই। আমাদের তিনজনের এই ঘণ্টাখানের চেষ্টায় ওই ষাটোর্ধ নারীর জন্য কিছু করতে পেরে স্বস্তির ঢেকুর আসছে। /আরএ
|