ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভিআর বিপ্লবের সন্ধিক্ষণে পৃথিবী
প্রকাশ: রবিবার, ৮ মে, ২০২২, ১১:৩৯ এএম  (ভিজিট : ৩৩৭)
টেক জায়ান্ট মেটা শিগগিরই মেটাভার্স তথা ভার্চুয়াল পৃথিবী নিয়ে তাদের পরিকল্পনা ঘোষণা করছে বিশ^বাসীর সামনে। ফলে ভার্চুয়াল ও অগমেন্টেড রিয়েলিটি নিয়ে বেশ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে টেক বিশেষজ্ঞদের মাঝে। কিন্তু যেসব হার্ডওয়্যার ও কনটেন্ট বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে, তাতে কি ভার্চুয়াল বিশ্ব শিগগিরই বাস্তবসম্মত হয়ে ধরা দেবে আমাদের সামনে, নাকি দিল্লি বহুদূর?

বাস্তবতা হচ্ছে, মেটাভার্স এখনও পর্যন্ত বেশিরভাগটাই হাইপোথিটিকাল একটা ভার্চুয়াল জগত যেখানে বিশেষ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) ও অগমেন্টেড রিয়েলিটির (এআর) সাহায্যে প্রবেশ করা যায়। মূলত আমাদের বাস্তব জগতে ‘নেক্সট লেভেল ইন্টারনেট’ সুবিধার এক বিশাল আচ্ছাদন তৈরিই হচ্ছে মেটাভার্সের মূলমন্ত্র। এই ভার্চুয়াল জগতের প্রবেশকারী প্রত্যেকটি মানুষই কিন্তু আমদের বাস্তব জগতে বিরাজ করছেন, তবে তারা যা কিছু দেখতে পান এবং যত কিছুর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন অন্যদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। ম্যাট্রিক্স কিংবা স্টার টেক হলোডেক ফিল্মের কথা মনে আছে? অনেকটাই সেরকম।

মার্ক জাকারবার্গের ভাষ্যমতে, ইন্টারনেট জগতের ভবিষ্যৎ মেটাভার্স। মেটাভার্সের কারণে ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগতকে মনে হবে বাস্তব জগতের মতো যেখানে মানুষের যোগাযোগ হবে বহুমাত্রিক। মেটাভার্স প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনি কোনো কিছু শুধু দেখতেই পাবেন না, তাতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতেও সক্ষম হবেন। সাধারণ মানুষের কাছে মেটাভার্স প্রযুক্তিকে আপাতত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা ভিআরের কোনো সংস্করণ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এটি আসলে তার চেয়েও অনেক বেশি।

অবশ্য মেটাভার্সের ধারণা কিন্তু তেমন নতুন নয়। গত শতাব্দীতেই ১৯৯২ সালে প্রকাশিত নিল স্টিফেন্সনের বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন স্নো ক্যাশে উঠে আসে অদূর ভবিষ্যতের এক কাহিনি যেখানে ভার্চুয়াল জগত এবং বাস্তব জগত অবিচ্ছিন্নভাবে জড়িয়ে রয়েছে।

প্রযুক্তিবিদদের মতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সঙ্গে মেটাভার্সের তুলনা আজকের দিনের স্মার্টফোনের সঙ্গে আশির দশকের মোবাইল ফোনের তুলনা করার মতো। জাকারবার্গ তার লাইভে জানান, মেটাভার্সের ব্যবহার হবে সব বিষয়ে অফিসের কাজ থেকে শুরু করে খেলা, কনসার্ট, সিনেমা, এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার বেলাতেও। তিনি বলেন, আপনি চাইলে মাল্টিভার্সে আপনার জন্য একটি অফিস স্পেস তৈরি করতে পারেন। চাইলে পারেন একটি কমনস্পেস নিজের মতো করে সাজাতে যেখানে আপনার বন্ধুরা যেকোনো সময় উপস্থিত হতে পারবেন। বলা যেতে পারে যে মেটাভার্স প্রযুক্তিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ‘শেয়ার্ড ভার্চুয়াল পরিবেশে’ প্রবেশ করা যাবে। অর্থাৎ এটি হবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে ব্যবহার করে তৈরি ডিজিটাল স্থান যেখানে ডিজিটাল বিশ্বকে বাস্তব দুনিয়ার সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হবে।

আপনি আপনার লুক পরিবর্তন করে হয়ে যেতে পারবেন কোনো অ্যালিয়েন বা জম্বি। অনেকে কল্পনা করছেন যে এই মেটাভার্স প্রযুক্তিতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর নিজের একটি থ্রিডি অবতার বা চরিত্র থাকবে এবং এটিই অনলাইনে তার প্রতিনিধিত্ব করবে। অর্থাৎ এটি ঘুরে ফিরে বেড়াতে পারবে এবং অন্যান্য চরিত্রের সঙ্গে নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবে। কম্পিউটারের সামনে বসে না থেকে একটি ভিআর হেডসেট লাগিয়েই আপনি আপনার প্রিয় ওয়েবসাইটগুলোয় ঘুরে বেড়াতে পারবেন। পারবেন বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, গানের কনসার্টে যাওয়া, শপিং থেকে শুরু করে মোটামুটি সবকিছুই।

অগমেনটেড রিয়ালিটি নিয়ে আলোচনা বিগত কয়েক দশক ধরেই চলছে। এ নিয়ে প্রচুর সিনেমা, সিরিজ এবং অ্যানিমেশন তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নেটিজেনদের মাঝে দারুণ তর্ক-বিতর্ক থাকলেও বাস্তবিক অগ্রগতি ছিল কম। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে অধিকাংশ টেক জায়ান্টের কাছে অগমেন্টেড রিয়ালিটি বাস্তব রূপে দেখা দিতে শুরু করেছে। আর এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ভিআর গেমিং এবং ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের উন্নতি। গুগল, অ্যাপল ও ফেসবুকের মতো টেক জায়েন্টরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, ইন্টারনেট জগতের ভবিষ্যৎ মেটাভার্স। আর এ কারণেই প্রত্যেকে বড় ইনভেস্ট করছে এই খাতে। কেউই পিছিয়ে থাকতে চাচ্ছে না। তবে এবারের দৌড়ে গুগলের থেকেও ফেসবুক কিছুটা এগিয়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেননা মার্ক জাকারবার্গের দাবি, আগামী ৫ বছরের মধ্যেই মাল্টিভার্সে যাত্রা শুরু করবে তারা।

তবে এই আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে মাল্টিভার্স নিয়ে সমালোচনাও নতুন মাত্রা পেয়েছে। এমনিতেই তরুণ প্রজন্মের মোবাইল ফোন আসক্তি এবং অতিরিক্ত ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহারে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যার জন্ম হচ্ছে। তার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ থেকে অনেকেই বাস্তবজগতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছেন।

এ ছাড়াও টেক বিশেষজ্ঞ কেট বেভান বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে জানান, বর্তমানে শেয়ার্ড স্ক্রিন প্রোগ্রাম ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের গুগল অ্যাকাউন্ট, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট, এমনকি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পর্যন্ত হ্যাক করে নিচ্ছে স্ক্যামাররা। ফলে ভুক্তভোগীদের মূল্যবান সব তথ্য থেকে শুরু করে অর্থ পর্যন্ত চলে যাচ্ছে অসাধু হ্যাকারদের হাতে।

অদূর ভবিষ্যতে মেটাভার্সের বাস্তবিক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে রয়ে গেছে আরও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। প্রযুক্তিবিদ অ্যালেক্স কাউনসেলের মতে, মেটাভার্স অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ যন্ত্রপাতিই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। তা ছাড়া, থ্রিডি মুভি-অ্যানিমেশন ইত্যাদি দেখার জন্য যে ভিআর চশমা ব্যবহার হয়, তা কয়েকদিন পরেই বেশ বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। গুগল গ্লাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক যেসব নোটিফিকেশন আসতে থাকে তাও অনেক ক্ষেত্রেই বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। ফেসবুক যে রেবেনের সঙ্গে যৌথভাবে ফেসবুক গ্লাস আনতে যাচ্ছে সেটাতেও একই ধরনের সমস্যার আশঙ্কা করছেন প্রযুক্তিবিদরা।
মেটাভার্সের আরও কিছু দুর্বলতা তুলে ধরতে গিয়ে অ্যালেক্স বলেন, যখন আপনি টিভি সাবস্ক্রাইব করতে যাবেন, তখন দেখবেন বর্তমানে মাত্র তিনটি টিভি চ্যানেলে এক্সেস পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম প্রথম মেটাভার্সে টিভি দেখার দারুণ এক অভিজ্ঞতা পেলেও দ্রুতই হয়তো তা খুব একঘেয়ে হয়ে উঠবে।

অবশ্য অতিমারিকালে ভিআর মাধ্যমে গেমিং অভিজ্ঞতা তাকে যে প্রশান্তি দিয়েছে তার বেশ প্রশংসা করেন অ্যালেক্স কাউনসেল। অবশ্য সেই সঙ্গে এও বলেন, ভিআর গেমিং বাস্তব গেমিংইয়ের মজা প্রদান করলেও অতি ব্যবহারে মানুষ আলসেও হয়ে যেতে পারে।

তবে কবে নাগাদ বাস্তবতা পাবে এই অবাস্তব দুনিয়া! এর সঠিক উত্তর জানা নেই কারও। অনেকেই মনে করছেন মেটাভার্স বা টেক জায়েন্টগুলোর কল্পনার জগত পরিপূর্ণরূপে বাস্তবে রূপ পেতে আরও ৫ বছর বা তার বেশি সময় লাগবে। আর এ ক্ষেত্রে প্রতিটি টেক জায়েন্টের ট্রাম কার্ড হবে অগমেন্টেট রিয়ালিটি নিয়ে কাজ করা কনটেন্ট ক্রিয়েটররা।

/এসকে


আরও সংবাদ   বিষয়:  ভিআর   প্রযুক্তি  




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close