প্রকাশ: সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:৫৮ এএম আপডেট: ২৭.১২.২০২১ ৯:৫৯ এএম (ভিজিট : ৩৮১)
দেশে লঞ্চডুবিতে যাত্রী মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু ঝালকাঠির কাছে লঞ্চে আগুন লেগে যাত্রীদের মৃত্যু সারা দেশের মানুষকে হতবাক করেছে। এর মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো, আমাদের দেশে নৌপথ কিংবা সড়কপথ, কোনোটাই নিরাপদ নয়। ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে, ২০১৬ থেকে ২০২০ এই পাঁচ বছরে নৌপথে ৩ হাজার ৪৮৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর তাতে মারা গেছে ৩ হাজার ১১৭ জন। আর ‘সেভ দ্য রোডের’ হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরে ৭১২টি নৌপথ দুর্ঘটনায় ১৩৮ জন নিহত হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ নামে যে লঞ্চটিতে আগুন লাগে সেটি রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিন দিয়ে চলছিল। এর আগের ইঞ্জিনটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর গত অক্টোবর মাসে এই ইঞ্জিনটি লাগানো হয়। তবে বিষয়টি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআইডব্লিউটিএকে জানানো হয়নি। আর দুর্ঘটনার পর প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ইঞ্জিন বিস্ফোরণে লঞ্চটিতে আগুন লাগে।
শুধু অভিযান-১০-ই নয়, দেশে অনেক লঞ্চ চালানো হচ্ছে সমুদ্রগামী জাহাজের রিকন্ডিশন্ড বা পুরনো ইঞ্জিন লাগিয়ে। এ কারণে ইঞ্জিনে আগুন লাগার ঝুঁকি অনেক বেশি। তা ছাড়া অনেক যাত্রীবাহী লঞ্চই ফিটনেসবিহীন অবস্থায় চালানো হচ্ছে। তাই নৌপথে নজরদারির বিষয়টি আবার সামনে এসেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নৌযানে নতুন এবং রিকন্ডিশন্ড উভয় ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহার করা যায়। তবে বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমোদন নিতে হয়। সাধারণত বড় লঞ্চে নতুন এবং ছোট লঞ্চে রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিনের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে পুরনো ইঞ্জিন ব্যবহার করতে হলে তার ইনস্টলেশন বিআইডব্লিউটিএ ঠিক করে দেয়। কিন্তু যে লঞ্চটিতে আগুন লেগেছে তাতে সম্প্রতি রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিন লাগানো হয়েছে এবং তা ছিল অনুমোদিত হর্সপাওয়ারের চেয়ে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন। আর এটা বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমোদন ছাড়াই লাগানো হয়েছে। রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিন ঠিকমতো ইনস্টলেশন না হলে তা থেকে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। যার ফলে আগুন লেগে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটে থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে। তবে তদন্ত শেষ হলেই আগুনের আসল কারণ জানা যাবে।
ফিটনেস সনদ অনুযায়ী, এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি ২০১৯ সালে নির্মাণ করা হয়। এর দৈর্ঘ্য ৬৪ মিটার ও গভীরতা ২ দশমিক ৮০ মিটার। লঞ্চটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ০১-২৩৩৯। সব রুটে সব লঞ্চই অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে থাকে। বেশি মুনাফার আশায় প্রায় প্রতিটি রুটে মালিকরা রেশনিং পদ্ধতিতে লঞ্চ পরিচালনা করে থাকেন। কোন কোম্পানির লঞ্চ কোন দিন চলবে, তা তারাই ঠিক করেন। ফলে বিআইডব্লিউটিএ’র কিছু করার থাকে না। আরও উৎকণ্ঠার বিষয় হলো, জরুরি সেবা ৯৯৯-এ টেলিফোন করে সহায়তা চাইলেও সকালের আগে অগ্নিনির্বাপণ বাহিনী সেখানে যায়নি। স্থানীয় দিয়াকুলের বাসিন্দারাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী ও লঞ্চ থেকে লোকজনকে উদ্ধার করেছেন। তারা প্রমাণ করলেন, মানুষ মানুষের জন্য।
লঞ্চে আগুনের ঘটনায় সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আমাদের প্রত্যাশা, তদন্তে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। অতীতে এ ধরনের তদন্ত কমিটির ফল জনগণকে জানতে দেওয়া হয়নি; দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নজিরও কম। যাদের অবহেলার জন্য অভিযান-১০-এ এত লোক মারা গেল, তাদের আইন ও শাস্তির আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি, এই খাতে বিআইডব্লিউটিএ’র নজরদারি আরও বাড়ানো জরুরি। এতে নৌ দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।